|
|
|
|
প্রশান্ত কোথায়, দাদার বাড়িতে ঢুকে জানতে চাইল সিআইডি |
বরুণ দে ও অভিজিৎ চক্রবর্তী • চন্দ্রকোনা রোড |
বেনাচাপড়ার পুরনো একতলা বাড়ি থেকে চন্দ্রকোনার দোতলা বাড়িটা বড় জোর আধ কিলোমিটার। প্রথমটি পৈতৃক ভিটে, দ্বিতীয়টি নেতার স্ত্রীর নামে।
শনিবার দুপুরে আচমকাই যেন ঝড় বয়ে গেল এই আধ কিলোমিটারে।
দুপুর ২টোর কিছু আগে হঠাৎই বাড়ির সামনে এসে থামল একের পর এক গাড়ি। র্যাফ ও স্থানীয় পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে সিআইডি-র দু’টি দল সুশান্ত ঘোষের দুই বাড়িতেই হাজির। পরিজনেরা হতবাক। বাড়ির বাইরে কৌতূহলী জনতার জটলা। তৃণমূল সমর্থকদের গলায় সিপিএম নেতার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি। আর এরই মধ্যে সিপিএম বিধায়কের এক ভাইয়ের ঘর থেকে হঠাৎ পাওয়া গেল কার্তুজ।
|
|
বাড়ি থেকে বাজেয়াপ্ত জিনিসের তালিকা। শনিবার। |
বেনাচাপড়ার বাড়িতে ছিলেন দুই বৃদ্ধা, সুশান্তবাবুর মা মৃন্ময়ী ঘোষ আর জেঠিমা মায়াদেবী। কঙ্কাল-কাণ্ডে অভিযুক্ত সুশান্তবাবুর এক ভাই প্রশান্ত ঘোষও। তবে ইদানীং তিনি বাড়ি আসছেন না। মায়াদেবীর ছেলে নিমাই ঘোষও বাড়ি ছিলেন না, তবে তাঁর স্ত্রী অনিমা এবং ছেলে সুমন ছিলেন। দৃশ্যতই বিহ্বল সদ্য কৈশোর পেরোনো সুমন বলে,“আচমকাই ওরা এল। অফিসারেরা বললেন, তল্লাশি চালানো হবে।” বাড়িতে ঢুকেই দুই বৃদ্ধার কাছে প্রশান্তবাবু সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে শুরু করেন তদন্তকারী অফিসারেরা। তিনি কোথায়, কত দিন ধরে বাড়ি আসছেন না, এ বাড়িতে কাদের যাতায়াত ছিল বা আছে জানতে চাওয়া হয় খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। অনিমাদেবী জানান, বিধানসভা নির্বাচনের ফল বেরোনোর দিনেই প্রশান্তবাবু ঘর ছাড়েন। সিআইডি অফিসারেরা প্রশান্তবাবুর ঘরে ঢোকেন এবং সেখান থেকেই কার্তুজ, মোবাইল এবং গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র উদ্ধার হয়। মহিলা পুলিশের উপস্থিতিতে যে ঘণ্টা তিনেক তল্লাশি হয়েছে, তার মধ্যে প্রশান্তবাবুর ঘরটিতেই সবচেয়ে বেশি সময় খোঁজাখুঁজি চলে। মৃন্ময়ীদেবী অসুস্থ। অফিসারেরা তাঁকে খুব বেশি ঘাঁটাননি। সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন করা হয় অনিমাদেবী আর সুমনকেই। সিআইডি দল চলে যাওয়ার পরে অনিমাদেবী বলেন, “দোতলার একটি ঘরে প্রশান্তরা থাকত। সেখানেই দীর্ঘক্ষণ তল্লাশি চালানো হয়েছে। গোয়ালঘর এবং বাড়ির আশপাশেও ওঁরা তল্লাশি করেছেন।”
বাড়ির লোকজন ছাড়া দুই প্রতিবেশীর সঙ্গেও কথা বলেন রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থার অফিসারেরা। খড়ের গাদায় মেটাল ডিটেক্টর দিয়েও চলে তল্লাশি। মায়াদেবী বলেন, “সুশান্ত তো অনেক দিন ধরেই এ বাড়িতে নেই। তা-ও কেন এখানে তল্লাশি হল, বুঝতে পারছি না। অফিসারেরা আমার কাছে যা যা জানতে চেয়েছিলেন, বলেছি।” |
|
তল্লাশি চলছে সুশান্ত ঘোষের বেনাচাপড়ার বাড়িতে। |
তাঁর স্বগতোক্তি, “যা হচ্ছে, তাতে আমাদের বেশ ভয় করছে। গ্রামের লোকজন কেউ এ বাড়িতে এখনও হামলা করেনি ঠিকই, তবে নানা কথা তো শুনতে হচ্ছে!”
চন্দ্রকোনা রোডের বাড়িতে একাই ছিলেন সুশান্তবাবুর স্ত্রী করুণা ঘোষ। কিন্তু সেই বাড়িতে ঢোকার সময়ে কিছুটা ঝামেলায় পড়েন সিআইডি অফিসারেরা। ওই বাড়ি লাগোয়া যে বাগানে সুশান্তবাবু ফেরার দলীয় কর্মীদের আশ্রয় দিতেন বলে অভিযোগ, সেই পরিমল কাননের দিকে প্রধান ফটক বন্ধ ছিল। অনেক ডাকাডাকিতেও কেউ সেই ফটক খোলেনি। পরে পাশের একটি সরু জায়গা দিয়ে অন্য একটি দরজার সামনে পৌঁছে অফিসারেরা ডাকাডাকি শুরু করেন। এর পরে করুণাদেবী দরজা খুলে দেন। মহিলা পুলিশের উপস্থিতিতে বাড়ির মধ্যে তল্লাশি চালায় আট জনের দল। তবে অস্ত্রশস্ত্র কিছু মেলেনি। দুপুর গড়িয়ে সন্ধে হয়ে যায়। টানা তল্লাশির পরে পৌনে ৬টা নাগাদ সিআইডি দল বাড়ি ছাড়ে। শুকনো গলায় করুণাদেবী বলেন, “ওঁদের সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতা করেছি। যা যা জানতে চেয়েছেন, বলেছি। বিছানাপত্তর উল্টেও ওঁরা তল্লাশি চালিয়েছেন। বাধা দিইনি।” এর বেশি আর কিছু বলতে চাননি দোর্দন্ডপ্রতাপ নেতার স্ত্রী। শুধু বলেন, “আমি ক্লান্ত।” |
ছবি:সৌমেশ্বর মণ্ডল |
|
|
|
|
|