|
|
|
|
‘শাসনে’ অতিষ্ঠ হয়েই পালিয়েছিল ক্যানিংয়ের ৪ কন্যা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • দুর্গাপুর |
বাড়িতে পড়াশোনার বড় চাপ। তার উপর শুধু ‘এটা কোরো না, ওটা কোরো না’ শাসন। রোজগারপাতি করে স্বনির্ভর হওয়া এর থেকে ঢের ভাল। জীবনটা উপভোগ তো করা যাবে!
এই ভাবনা থেকেই শনিবার স্কুল শেষে আর বাড়ি ফেরেনি দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিংয়ের নবম শ্রেণির চার ছাত্রী। সোজা ট্রেনে চেপে বসে তারা। পর দিন পৌঁছয় দুর্গাপুরে। বাড়ি ভাড়া নিয়ে কাজ খোঁজার তোড়জোড়ও চলছিল। কিন্তু ‘অন্য জীবনের’ স্বপ্নে বিভোর মেয়েদের খোঁজ পেয়ে যায় পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ক্যানিংয়ের দ্বারকানাথ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ওই চারজন ছাত্রী শনিবার শেষ স্কুলে গিয়েছিল। ‘প্ল্যান’ তৈরি ছিল আগেই। সেই মতো তারা চড়ে বসে শিয়ালদহগামী লোকাল ট্রেনে। এরপরে বর্ধমান লোকাল ধরে সোজা পৌঁছয় বর্ধমান স্টেশনে। কিন্তু ততক্ষণে রাত হয়ে গিয়েছে। তাই সময়টা কাটিয়ে দেয় স্টেশনের ওয়েটিং রুমে বসে-শুয়ে। বইয়ে পড়েছিল দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার কথা। রাতেই চারজন ঠিক করে নেয়, দুর্গাপুর যেতে হবে। এরপরে সকালের আলো ফুটতেই আসানসোল লোকাল ধরে চারজনে এসে নামে দুর্গাপুর স্টেশনে। সেখান থেকে বাস ধরে সিটি সেন্টার বাসস্ট্যান্ড। এ বার শুরু হয় ঘর খোঁজার পালা।
বাসস্ট্যান্ডেই আলাপ হয় দুই যুবকের সঙ্গে। তাদের ঘরের খোঁজ দিতে বলে মেয়েরা। ওই যুবকেরা জানায়, দুর্গাপুরে বাড়ি ভাড়া নিতে গেলে মাসে অন্তত হাজার চার-পাঁচ টাকা গুনতে হবে। কিন্তু এত টাকা তো নেই মেয়েদের কাছে। তবে, খানিকটা জোগাড়যন্তর ছিল বইকি। কয়েকশো টাকা এবং কিছু গয়নাগাটি এনেছিল বাড়ি থেকে। ঠিক হয়, গয়নাগুলি বিক্রি করে ঘরভাড়ার টাকা জোগাড় করতে হবে। ওই যুবকেরাই গয়নাগুলির বিনিময়ে ৫ হাজার টাকা দেয়। সেই সঙ্গে দেয় ঘরের সন্ধানও।
কোকওভেন থানার নব ওয়াড়িয়ায় মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী সহদেব ঘোষের বাড়িতে ঘর আছে দেখে পছন্দ হয়। পাঁচশো টাকা আগাম দিয়ে একটি ঘর ভাড়া নেয় চার কন্যে। গয়না বিক্রির টাকা থেকে দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় সামগ্রীও কিছু কিছু কিনে ফেলে। এরপর তারা পালা করে চাকরি খুঁজতে শুরু করে দুর্গাপুরের বিভিন্ন অফিস কাছারিতে ঘুরে ঘুরে।
ও দিকে, মেয়েরা বাড়ি না ফেরায় ক্যানিং থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেছিলেন তাদের অভিভাবকেরা। নড়েচড়ে বসে পুলিশ। এমনিতেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকায় নারীপাচার চক্র সক্রিয়। ওসি পার্থসারথি ঘোষ নিজে তদন্ত শুরু করেন। ছাত্রীদের কাছে থাকা মোবাইলের টাওয়ারের সূত্র ধরে পুলিশ জানতে পারে, মেয়েরা রয়েছে দুর্গাপুরে। আরও তদন্তের পরে পুলিশ মোটামুটি ভাবে ছাত্রীদের অবস্থান সম্বন্ধে নিশ্চিত হয়। ক্যানিং থানা খবর দেয় কোকওভেন থানাকে। শুক্রবার সকালে দুই থানার যৌথ উদ্যোগে নব ওয়াড়িয়া থেকে উদ্ধার করা হয় চারজনকে। তাদের ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় ক্যানিংয়ে।
কোকওভেন থানার ওসি অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “জেরায় মেয়েরা জানিয়েছে, বাড়িতে পড়াশোনার চাপ আর শাসন ওদের ভাল লাগছিল না। সকলে ঠিক করে, বাড়ি থেকে দূরে গিয়ে চাকরি করে অন্য ভাবে জীবন কাটাবে।” |
|
|
|
|
|