বৃষ্টির জমা জল তো আছেই, তার উপরে বাইরের জন্য বিল ছাপিয়ে লোকালয়ে ঢুকে পড়ায় উত্তর ২৪ পরগনার হাবরা -১ ব্লকের মছলন্দপুর-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। পঞ্চায়েত সূত্রে জানানো হয়েছে, ইতিমধ্যেই আটটি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। জলবন্দি মানুষের সংখ্যা সঠিক হিসাব পাওয়া না গেলেও তা ২০০০ ছাড়িয়েছে। ৩০০টি পরিবারকে ত্রাণশিবিরে নিয়ে আসা হয়েছে। তবে প্রতিনিয়তই বাড়ছে জলবন্দি মানুষের সংখ্যা।
পঞ্চায়েত প্রধান কল্পনা বসু বলেন, “কত মানুষ জলবন্দি তার সঠিক হিসাব পাওয়া এখনও পাওয়া যায়নি। বৃষ্টির জলের পাশাপাশি এলাকার বাইরে থেকে জল ঢোকায় সমস্যা আরও ভয়াবহ নিচ্ছে। এলাকার জল বের হওয়ার কোনও রাস্তা নেই” পঞ্চায়েত সূত্রে জানানো হয়েছে, স্থানীয় উলুডাঙা-২ কলোনি, নিমতলা, উত্তর বেতপুল, দক্ষিণ বেতপুল, শক্তিনগর, রানিডাঙা, বামনডাঙা, বেতপুর-আন্দামান, তিন আমতলা প্রভৃতি এলাকার মানুষ জলমগ্ন হয়েছেন। ভেসে গিয়েছে মাছের ভেড়ি। বৃষ্টি না থামলে পরিস্থিতি যে আরও খারাপ হবে সে ব্যাপারে সকলেই একমত। এই অবস্থায় সকলেরই প্রার্থনা যেন আর বৃষ্টি না হয়।
ঘরে জল ঢুকে যাওয়ায় ছেলেময়ে নিয়ে আর ভরসা পাননি। ঘর ছেড়ে স্থানীয় উত্তর বেতপুল শিশুশিক্ষাকেন্দ্রে উঠে এসেছেন বেশ কয়েকটি পরিবার। কিন্তু স্কুলটি ছোট হওয়ায় কোনওরকমে মাথা গুঁজে রয়েছেন তাঁরা। তাঁদেরই একজন বাসুদেব হাসদার বললেন, “স্কুলে থাকার মতো অবস্থা নেই। তা সতত্বেও পড়ে আছি। কোনওরকম ত্রাণ পাইনি। কি করব বুঝতে পারছি না।” মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই মিললেও গবাদি পশুগুলির অবস্থা বেশ খারাপ। বৃষ্টি হাত েথেকে তাঁদের বাঁচানোর মতো ত্রিপল মিলছে না বলে অভিযোগ জলবন্দি মানুষের। ঘরে জল ঢোকায় অনেকে অন্যত্র চলে গেলেও অনেকেই ঘরের জিনিসপত্র চুরি যাওয়ার ভয়ে ঘর ছেড়ে যেতে পারেননি। এমনই একজন রবীন দেবনাথ। বললেন, “ঘরে জল ঢুকেছে। কিন্তু ঘর ছেড়ে অন্য জায়গায় গেলে আর রক্ষে নেই। জিনিসপত্র সব চুরি হয়ে যাবে। তাই ইটের পর ইট দিয়ে চৌকি উঁচু করে জলের সঙ্গে লড়া করছি।”
কিন্তু কতক্ষণ?
“বৃষ্টি না কমলে কতক্ষণ আর প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করব।” বললেন, এক বৃদ্ধ। প্রশাসন সূত্রের খবর, স্থানীয় ঝিঙ্কের বিল ছাপিয়ে এলাকায় জল ঢোকাতেই এই বিপদের সৃষ্টি হয়েছে। আগে অন্যান্য এলাকার জল বিল হয়ে পদ্মা নদী দিয়ে বেরিয়ে যেত। মিশত ইছামতী নদীতে। কিন্তু এখন অনেক জায়গায় পদ্মা মজে যাওয়ায় জল আর বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায় না। এই অবস্থায় বৃষ্টি কমা এবং সূর্যের উপর ভরসা করা ছাড়া কোনও উপায় নেই। জল না সরার ফলে চাষের জমি ডুবে গিয়ে ফসলেরও প্রভূত ক্ষতি হয়েছে। |
হাবরা-১ পঞ্চায়েত সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্লকের সাতটি পঞ্চায়েতের মোট ৮০০টি পরিবারকে ২১টি ত্রাণশিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মছলন্দপুর-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের শিমুলপুর, পৃথিবা গ্রাম পঞ্চায়েতের চক ফুলতলা, বয়রাগাছির একাংশ এবং বেড়গুম-২ পঞ্চায়েত, কুমড়ো গ্রাম পঞ্চায়েতের একাংশ জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। হাবরা-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি জাকির হোসেন বলেন, “খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের কাছ থেকে ৫০০, প্রশাসনের কাছ থেকে ৫০০ মোট এক হাজার ত্রিপল পাওয়া গিয়েছে। পাওয়া গিয়েছে ২৮০০০ কুইন্টাল চাল।” হাবরা-২ ব্লকের রাজীবপুর স্টেশন সংলগ্ন এলাকা, কালিনগর, শান্তিনগর, নেতাজিনগর এবং আমড়াগাছি এলাকার মানুষ জলবন্দি হয়ে পড়েছেন। হাবরা-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুশান্ত দাস বলেন, “বৃষ্টির পাশপাশি বিদ্যাধরী খালের জল ঢুকে পড়ায় সমস্যা আরও জটির আকার নিয়েছে। পঞ্চাশটি পরিবারকে ইতিমধ্যেই ত্রাণশিবিরে নিয়ে আসা হয়েছে।” অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভার বেশ কিছু ওয়ার্ডও জলমগ্ন হয়েছে। পুরসভার চেয়ারম্যান সমীর দত্ত বলেন, “২০০০ লোককে ঘর চাড়তে হয়েছে। এলাকার বিভিন্ন স্কুল ও আত্নীয়দের বাড়িতে তাঁরা আশ্রয় নিয়েছেন। ২০০টি কাঁচা বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।” গাইঘাটা ব্লকের সুটিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বলদেঘাটা হাবরাপাড়া, বিষ্ণুপুর, বিলচাতুরিয়া প্রভৃতি এলাকায় প্রায় ১০০টি পরিবার জলবন্দি।
মছলন্দপুর-২ পঞ্চায়েতের খুলনাপাড়া ৩ নম্বর কলোনিতে বেশ কিছু পরিবার জলমগ্ন। স্থানীয় বাসিন্দা গৌরাঙ্গ হালদারা বলেন, “ঘরের মধ্যে কোনওরকমে পড়ে আছি। এমনই অবস্থা চারপাশের যে প্রশাসনের কেউ ব্যবস্থা না নিলে বের হওয়া অসম্ভব।” |