|
|
|
|
|
|
|
মুখোমুখি... |
|
গ্লুকোজ ইঞ্জেকশন নিয়ে দিনে ‘শোলে’
রাতে ‘দিওয়ার’ শু্যট করেছি |
কলকাতায় এসেছিলেন একদিনের জন্য। প্রকাশ ঝা’র ‘আরক্ষণ’-এর প্রচারে।
তার মধ্যেই অমিতাভ বচ্চন-কে ধরে ফেললেন ইন্দ্রনীল রায় |
পার্ক স্ট্রিটের এক হোটেলের চার তলার ঘর। তাঁর ঘরে কারও ঢোকার অনুমতি নেই। ঘরের বাইরে ২০ জন নিরাপত্তা রক্ষীর নিশ্ছিদ্র প্রহরা। এমন অবস্থায় পরিচালক প্রকাশ ঝার ঘরে বসে অপেক্ষা করছি ঐশ্বর্যা রাইয়ের শ্বশুরের জন্য। কেটে গেল মিনিট পনেরো। তার পরেই ঘরে ঢুকলেন তিনি। পরনে কালো স্যুট। দু’ হাতে দুটি মোবাইল। স্যুটের বোতামগুলো খুলতে খুলতে তাঁর বিখ্যাত ব্যারিটোনে বললেন, “লেটস স্টার্ট। ” শুরু হল সাক্ষাৎকার। দু’জন ব্যক্তি আগাগোড়া ইন্টারভিউটা রেকর্ড করে রাখার জন্য ক্যামেরা অন করলেন...
পত্রিকা: মিস্টার বচ্চন, পার্ক স্ট্রিটের এই হোটেলে আপনি... নিশ্চয়ই নস্টালজিক লাগছে?
অমিতাভ: হ্যাঁ, তা লাগছে। এই পার্ক স্ট্রিটের উল্টো দিকেই তো রাসেল স্ট্রিট। যখন কলকাতায় ছিলাম, তখন জীবনের অনেকটা সময় ওই রাস্তায় কেটে গেছে। রাসেল স্ট্রিটের একটা বাড়িতে আমরা ছ’বন্ধু একসঙ্গে একটা ঘরে থাকতাম।
পত্রিকা: সুপারস্টার হওয়ার পর সেই সব বন্ধুর সঙ্গে কখনও দেখা করেছেন?
অমিতাভ: হ্যাঁ। ইন ফ্যাক্ট আজ রাতেই তাদের কয়েক জনের সঙ্গে ডিনার করব ঠিক করেছি। মনে হচ্ছে সন্ধেটা বেশ মজাতেই কাটবে।
পত্রিকা: সঙ্গে দু’টো মোবাইল রাখেন দেখছি। রোজই অগুনতি টুইট আর মেসেজ আসে। দিনে ঠিক কত বার ফোনগুলো হ্যাং করে?
অমিতাভ: হা হা হা হা, না আমার ফোন তেমন হ্যাং করে না। |
|
পত্রিকা: আপনি মজা করছেন?
অমিতাভ: না না। সিরিয়াসলি বলছি। ফোন থেকে তো টুইট করি না। করি ল্যাপটপ থেকে। আসল কথা ব্লগ, টুইট, আজকালকার এই সব যোগাযোগ মাধ্যমগুলো বেশ লাগছে কিন্তু!
বেশ কিছু দিন আগেকার কথা বলছি। একদিন একজন আমায় এসে বললেন আমার একটা নিজস্ব ওয়েবসাইট থাকা উচিত। সেই সঙ্গে তিনি এই কথাও বললেন যে আমার নামে হাজারের বেশি ওয়েবসাইট আছে, কিন্তু তার কোনওটাই ‘অথরাইজড’ নয়। নিজের ওয়েবসাইট চালু করতে কত দিন সময় লাগবে জিজ্ঞেস করায় তিনি বললেন ‘তা মাস ছয়েক তো বটেই’। মনে হল লম্বা সময়ের ব্যাপার। তখন আমি এমন একটা মাধ্যম খুঁজছিলাম যেখানে খুব দ্রুত মানুষজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়। এই ভাবেই একদিন আমার নিজস্ব একটা ব্লগ শুরু হল। আর এখন তো টুইটারও এসে গেছে। যোগাযোগের চমৎকার একটা মাধ্যম।
পত্রিকা: সত্তরের দশকে যখন ‘শোলে’ কিংবা ‘দিওয়ার’-এ অভিনয় করছেন তখন যদি এই সব ব্লগ, টুইট থাকত কেমন হত? ভেবেছেন কখনও?
অমিতাভ: সত্যি সেটা হলে তো দুর্দান্ত হত।
পত্রিকা: বর্তমানে ফিরছি। জুলাই মাসে আপনার অভিনীত ‘বুঢডা হোগা তেরা বাপ’ রিলিজ করল। তার পর এ মাসে আসছে ‘আরক্ষণ’। এত রকমের কাজ এত অনায়াসে করেন কী করে?
অমিতাভ: হ্যাঁ, সেটা করতেই হয়। কারণ, এই সব কাজের জন্য আমি পারিশ্রমিক পেয়ে থাকি। আপনিও তো এভাবেই কাজ করেন ....
পত্রিকা: আমি?
অমিতাভ: হ্যাঁ। সাংবাদিকদের কথাই বলছি। তাঁদের তো এই ভাবেই কাজ করতে হয়। আজ কোনও রাজনীতিকের সাক্ষাৎকার নিলেন তো পরদিন আমার মতো বিনোদন জগতের কোনও একজনের সাক্ষাৎকার নিতে বলা হল। তার পর দিন বলা হল একেবারে অখ্যাত সাধারণ মানুষকে ইন্টারভিউ করে লেখা লিখতে হবে। এটাই আপনাদের কাজ। আমার বেলাতেও কাজটা ঠিক এই রকমই।
পত্রিকা: বুঝতে পারছি। কিন্তু অমিতাভ বচ্চন যখন এমন ভাবে কাজ করেন সেটা খবর হয়, সাধারণ মানুষের বেলায় যেটা হয় না।
অমিতাভ: আসল কথা কী জানেন, এই ভাবে কাজ করাটা আজ আমার পক্ষে আর আদৌ খুব কঠিন নয়। ইন ফ্যাক্ট আমার পরের ছবি ‘আরক্ষণ’-এর শু্যটিং হয়েছিল জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি, মার্চ মাসে। আর ‘বুডঢা’র শু্যটিং হল মে মাসের শেষের দিকে। কিন্তু ‘আরক্ষণ’-এ এত বেশি পোস্ট-প্রোডাকশনের কাজ ছিল যে ‘বুডঢা’র পরিচালক পুরি জগন্নাথ ঠিক করলেন তাঁর ছবি ‘আরক্ষণ’-এর আগে রিলিজ করবেন। ফলে আমরা সেই ভাবেই এগিয়েছি।
পত্রিকা: জীবনের এই অধ্যায়টা নিশ্চয়ই বেশ উপভোগ করছেন। প্রত্যেক মাসে কত ধরনের চরিত্রে অভিনয় করছেন...
অমিতাভ: হ্যাঁ, অভিনেতা হিসেবে জীবনের এই পর্বটা ব্রিলিয়ান্ট। আসলে কী জানেন পুরো ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিরই এখন দারুণ একটা সময় চলেছে। আজকাল চিত্রনাট্য শোনাতে এসে পরিচালকেরা প্রথমেই বলে দেন ছবি কোন মাসে কত তারিখে মুক্তি পাবে। সময়টা একেবারে বদলে গেছে। আগে পুরো ব্যাপারটাই হত খুব অপরিকল্পিত ভাবে, অগোছালো ভাবে।
পত্রিকা: কী রকম অগোছালো?
অমিতাভ: হুমমম্... আপনাকে বলি তা হলে। আগেকার জমানায় এক সঙ্গে এক সময়ে তিনটে ছবির শু্যটিং হত। জানেন আমি একসঙ্গে ‘দিওয়ার’-এর ক্লাইম্যাক্স আর ‘শোলে’ শু্যট করেছিলাম। সারারাত ‘দিওয়ার’-এর শু্যটিং করতাম। সেখান থেকে সোজা এয়ারপোর্ট। সকাল সাতটার ফ্লাইট ধরে পৌঁছতাম বেঙ্গালুরু। তারপর লোকেশনে গিয়ে ‘শোলে’র শু্যটিং। বিকেলে প্লেন ধরে মুম্বই এসে ফের ‘দিওয়ার’।
পত্রিকা: সে কী, বলছেন কী? এ তো দুর্দান্ত একটা গল্প...
অমিতাভ: হ্যাঁ, তা হলেই বুঝতে পারছেন সে সময়ে কেমন ভাবে আমরা কাজ করতাম।
পত্রিকা: তা কত দিন এই ভাবে মুম্বই - বেঙ্গালুরু করেছিলেন?
অমিতাভ: তা টানা সাত দিন পরপর। (হাসি) |
|
পত্রিকা: সাত দিন!
অমিতাভ: সে সময় এমনও হয়েছে আমরা রাতের পর রাত গাড়িতে ঘুমিয়েছি। এমনও সময় গেছে আমি ইন্ট্রাভেনাস ইঞ্জেকশন নেওয়ার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। তার কারণ শু্যটিংয়ের ফাঁকে ঠিকঠাক ভাবে গুছিয়ে খাওয়ার সময়টুকুও পেতাম না। হ্যাঁ, তখন জাস্ট কোনও ক্রমে দিন চালানোর কথা ভেবে ইন্ট্রাভেনাস গ্লুকোজ নেওয়ার জন্য হাসপাতালেও ভর্তি হতাম। কিন্তু কোয়ালিটির সঙ্গে কম্প্রোমাইজ করার কোনও প্রশ্নই ছিল না। তখনকার দিনে কাজের অবস্থা থেকে আজকের সময় অনেক বেশি এগিয়ে, অনেক বেশি সুপরিকল্পিত। এটা আমার কাছে দারুণ অভিজ্ঞতা।
পত্রিকা: ‘আরক্ষণ’-এর কথায় ফিরি। যখন প্রকাশ ঝা গল্পটা বলেছিলেন বিন্দুমাত্র আঁচ করতে পেরেছিলেন ছবিটা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে এমন আলোড়ন সৃষ্টি হবে?
অমিতাভ: না, আমরা এ ভাবে ভাবিনি। সংবিধানেই সংরক্ষণের অনুমোদন রয়েছে। এটা আমাদের সামাজিক সত্য। আর রিজার্ভেশনের পক্ষে কথা বলতে গেলে তার বিপক্ষে তর্কগুলোও উঠবে। আমি মানুষ হিসেবে যে পরিবেশে বেড়ে উঠেছি সেখানে জাতপাত মানামানির কোনও বালাই ছিল না। যখন স্কুলে ভর্তি হতে গেলাম বাবা আমার নামের পাশে পদবি হিসেবে লিখে দিয়েছিলেন ‘বচ্চন’। সেই থেকে ‘বচ্চন’ চলেছে। যদিও আমরা ইলাহাবাদের কায়স্থ, পদবি শ্রীবাস্তব। পদবি দেখে কিছুতেই বুঝতে পারবেন না আমি কোন জাতের, কী গোত্র। আর এ জন্য বাবাকে আমার অজস্র ধন্যবাদ।
পত্রিকা: কিন্তু আমাদের দেশের এই সংরক্ষণ নীতি সম্পর্কে আপনি কতটা জানতেন?
অমিতাভ: সত্যি কথা বলতে কী, পুরোটা জানতাম না। আমি এই বিষয়টায় ঠিক অতটা শিক্ষিত নই। তাই আইনকানুন তেমন জানি না। আসলে প্রকাশ ঝা-ই আমায় সাংরক্ষণ আইনের ছোটখাটো বিষয়গুলো সম্বন্ধেও ওয়াকিবহাল করেন। আপনাকে তা হলে একটা ঘটনা বলি। কয়েক দিন আগে আমাদের বাড়িতে সেন্সাসের লোক এসে ফর্ম ফিল আপ করতে বললেন। লিখতে লিখতে যখন জাতের প্রসঙ্গ এল আমি লিখলাম ‘ভারতীয়’। সেন্সাসের ব্যক্তিটি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “কিন্তু আপনাদের জাতটা কী?” আমি আবারও বললাম আমি জাতে ভারতীয় এবং সেটাই লিখব, অন্য কিছু লিখতে পারব না। এবং আজও আমাদের বচ্চন পরিবারে সংসারের ধারাটা দেখুন। বাবা বিয়ে করেছিলেন শিখ পরিবারের মেয়েকে। আমার ভাই বিয়ে করেছিলেন সিন্ধিকে। আমি বিয়ে করলাম বাঙালি ঘরে। আমার মেয়ে বিয়ে করেছে পঞ্জাবি ঘরে। ছেলের বিয়ে হল টুলুর সঙ্গে। সুতরাং বলতে পারেন আমাদের পরিবার একটা ‘মেল্টিং পট’। অবশ্য আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম... জানি না... তারা কোন দিকে এগোবে। (হাসি) |
|
|
|
|
|