|
|
|
|
|
|
|
মনোরঞ্জন ১... |
|
জয় বাবা ব্র্যান্ড ব্যোমকেশ |
ব্যোমকেশ বক্সীকে নিয়ে টালিগঞ্জে কাড়াকাড়ি। বিরাট বিতর্ক।
কেন্দ্রে অঞ্জন দত্ত এবং দুই প্রযোজক। লিখছেন ইন্দ্রনীল রায় |
টলিউডে কোন নায়কের চাহিদা সব চেয়ে বেশি?
কোন বাঙালি নায়ক প্রযোজকদের লড়িয়ে দিতে পারেন একে অপরের সঙ্গে?
কোন নায়ক, একটা দৃশ্যও শু্যটিং হওয়ার আগে ছবি সম্বন্ধে এমন আগ্রহ তৈরি করতে পারেন যে একমাত্র তাঁকে নিয়েই মশগুল থাকে পুরো টালিগঞ্জ?
উত্তরটা দিতে গিয়ে যদি টালিগঞ্জের এখনকার কোনও সুপারস্টারের নাম করেন, একেবারে শূন্য পাবেন। এই নায়কটি ধুতি পরেন, তাঁর সহযোগীর নাম অজিত এবং তিনি হলেন একজন সত্যান্বেষী। পদবি ‘বক্সী’।
ফেরা যাক টালিগঞ্জের ব্যোমকেশে।
আজ্ঞে হ্যাঁ। টালিগঞ্জের আনাচে কানাচে এখন স্রেফ একটা বিষয় নিয়েই আলোচনা চলছে। যে দিন থেকে পরিচালক অঞ্জন দত্ত তাঁর দ্বিতীয় ব্যোমকেশ বক্সী ছবি তৈরির কথা ভেবেছেন, সেটাই হয়েছে বাংলা ছবির একমাত্র আলোচ্য বিষয়।
কিন্তু এই গল্পের মধ্যে একটা মোচড় আছে। অঞ্জন দত্তের প্রথম ব্যোমকেশ বক্সী প্রযোজনা করেছিল কৌস্তুভ রায় এবং শিবাজী পাঁজার আর পি টেকভিশন। কিন্তু শোনা যাচ্ছে ব্যোমকেশ বক্সীর দ্বিতীয় ছবিটির জন্য অঞ্জন আর কৌস্তুভদের সঙ্গে কাজ করতে চাইছেন না। এই নিয়েই টালিগঞ্জে জমে উঠেছে বিতর্ক।
ঘটনাটা কি সত্যি?
“হ্যাঁ, সত্যি। আমার পরের ব্যোমকেশ বক্সী ছবিটা প্রযোজনা করছেন রানা সরকার, যিনি আমার লেটেস্ট ছবি ‘রঞ্জনা আমি আর আসব না’-ও প্রযোজনা করেছেন,” সোমবারের বর্ষাবিধ্বস্ত সকালে ফ্লুরিজ-এ বসে কালো কফিতে চুমুক দিতে দিতে জানালেন অঞ্জন দত্ত।
কিন্তু টালিগঞ্জে কান পাতলে বোঝা যাবে অঞ্জন যত সহজে কথাটা বলছেন, তত সহজে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছননি। ব্র্যান্ড ব্যোমকেশ বক্সীর চাহিদা এখনও এতটাই যে, যে দিন থেকে অঞ্জনের এই সিদ্ধান্ত জানা গিয়েছে, সে দিন থেকে চূড়ান্ত অশান্তি হয়েছে টালিগঞ্জের কয়েকটা শিবিরেআর সেই অশান্তির পারদ এতটাই চড়া যে ইন্ডাস্ট্রিও এই মুহূর্তে আড়াআড়ি ভাগ হয়ে গেছে।
বন্ধ দরজার পেছনে আলোচনা, শেষ মুহূর্তের মিটিং, চড়া মেজাজের কথোপকথনকী হয়নি এই সিদ্ধান্তকে ঘিরে? এবং সবই হয়েছে যাতে ব্র্যান্ড ব্যোমকেশ থেকে যায় আর পি টেকভিশনের ঘরে। কিন্তু সে তো
হওয়ার নয়।
শুধু তাই নয়। যে দিন থেকে জানা গিয়েছে যে অঞ্জন দত্ত দ্বিতীয় ব্যোমকেশ করতে চলেছেন রানা সরকারের সঙ্গে, সে দিন থেকে শুরু হয়েছে আর এক জল্পনা। বছর দু’য়েক আগে ঋ
তুপর্ণ ঘোষও ঠিক করেছিলেন ব্যোমকেশ করবেন। সেই ছবিতে ব্যোমকেশ করার কথা ছিল প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের। কিন্তু নানা কারণে সেটা হয়ে ওঠেনি। কিন্তু এখনও ব্র্যান্ড ব্যোমকেশের টান এতটাই যে শোনা যাচ্ছে ঋতুপর্ণর কাছেও আবার সেই ছবি শুরু করার অফার আসছে নানা প্রযোজকের কাছ থেকে।
এবং শুধু টালিগঞ্জে নয়। ব্র্যান্ড ব্যোমকেশের ক্ষমতা বলিউডেও বোঝা যাচ্ছে। শোনা যাচ্ছে যে পরিচালক দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায়ও অভয় দেওলকে ব্যোমকেশ বানিয়ে ছবি করার কথা ভাবছেন।
এই মুহূর্তে সেই ‘বক্সী’র গল্পের স্বত্বাধিকারী, প্রবীর চক্রবর্তীর কথা থেকেই বোঝা যায় শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৃষ্টি আদ্যোপান্ত মধ্যবিত্ত এই বাঙালি সত্যান্বেষীর টান আজও কতখানি। আজও শোনা যায় মুম্বই-কলকাতা মিলিয়ে প্রত্যেক মাসে তিন থেকে চারটি ফোন পান ব্যোমকেশ বক্সীর কোনও একটা গল্প নিয়ে ছবি করার জন্য।
সে যা হোক, ব্যোমকেশকে নিয়ে টালিগঞ্জে যে বিতর্ক তৈরি হচ্ছে, তাতে ফেরা যাক। কী বলছেন এই বিতর্কের কেন্দ্রে থাকা অঞ্জন দত্ত? “দেখুন, আমার কারও সঙ্গে কোনও সমস্যা নেই। আমার কাছে ব্যোমকেশ বক্সীর ছ’টা উপন্যাসের স্বত্ব রয়েছে। ছ’টার মধ্যে ছ’টাই যে আর পি টেকভিশনের সঙ্গে করতে হবে, এমন কোনও আইনি লেখাপড়া নেই। এ বারের ব্যোমকেশ বক্সীটা আমি রানা সরকারের সঙ্গেই করব। ওর সঙ্গে আমার বোঝাপড়া ভাল। আমি তো আমার তৃতীয় ব্যোমকেশের ছবিটা ভেঙ্কটেশের সঙ্গে করব ভাবছি। সে বিষয়ে মৌখিক কথাবার্তাও হয়েছে ওদের সঙ্গে,” বলছেন অঞ্জন।
এ বারের ছবির নাম হবে ‘আবার ব্যোমকেশ’। ছবির কাহিনিসূত্র শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘চিত্রচোর’। শু্যটিং শুরু অক্টোবর থেকে। ব্যোমকেশের চরিত্রে আবির চট্টোপাধ্যায়, অজিতের চরিত্রে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, আর সত্যবতীর চরিত্রে ঊষসী চক্রবর্তী যেমন ছিলেন তেমনই থাকবেন। এ ছাড়া থাকবেন পীযূষ গঙ্গোপাধ্যায়, চন্দন সেন, স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের কাস্টিং এখনও বাকি।
গুজব হল কৌস্তুভ নাকি ‘আবার ব্যোমকেশ’-এর জন্য নিজস্ব ক্যাম্পের কয়েক জন অভিনেতাকে ছবিতে নিতেই হবে বলে জোরাজুরি করেছেন। সেখান থেকেই অঞ্জনের সঙ্গে কৌস্তুভের মতবিরোধ।
সেই গুজব কি সত্যি? সম্পূর্ণা লাহিড়ীকে নেওয়া নিয়েই কি অঞ্জন এবং কৌস্তুভ ভিন্ন পথ ধরলেন? “আমি কেবল এটুকুই বলব, যে এটাই একমাত্র কারণ নয়,” বলছেন অঞ্জন। “আরও অনেক ইস্যু ছিল। উপস্থিত এটুকুই বলব। এই মুহূর্তে এর বেশি কিছু বলতে চাই না। লেট বাইগন্স বি বাইগন্স। আমি চাইব সবাই নিজস্ব সম্মান নিয়ে থাকুক। অকারণে রাগী মন্তব্য না করাই ভাল। এটাও আশা করব যে কৌস্তুভ যেন আমায় ভুল না বোঝে। সত্যি বলতে, তিন সপ্তাহ আগে শিবাজি আমার সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলেছিল। যদি এই ব্যোমকেশটাও ওদের সঙ্গে করতে পারি। আমি ওকে বললাম অন্য কোনও ছবির ক্ষেত্রে সেটা সম্ভব, কিন্তু এটার ক্ষেত্রে নয়। আমার ধারণা ও আমার পরিপ্রেক্ষিতটা বুঝতে পেরেছে,” বলছেন তিনি।
কিন্তু প্রথম ব্যোমকেশ বক্সীর সাফল্যের পেছনে কি তার প্রচারেরও একটা বিরাট অবদান ছিল না? আর পি টেকভিশন ছেড়ে বেরিয়ে এলে সে দিকটা তো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। “দেখুন, পাবলিসিটি একটা ছবিকে প্রাথমিক ব্যবসাটা দিতে পারে। তারপর একটা ছবি চলে তার নিজের জোরে। আর প্রচারের কথা যদি বলেন, তা হলে রানাও তো রঞ্জনার জন্য দুর্দান্ত কাজ করেছে। আমার মনে হয় না এই সিদ্ধান্তে আমি কোনও ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হব,” জবাব পরিচালকের।
অঞ্জন দত্ত যখন পরিষ্কার করেই দিচ্ছেন যে কৌস্তুভ রায় আর শিবাজী পাঁজার আর পি টেকভিশনের সঙ্গে তিনি আগামী ব্যোমকেশ করবেন না, সেই পরিপ্রেক্ষিতে তা হলে কৌস্তুভ কী বলছেন? |
|
“দেখুন, বাংলার দর্শকের অঞ্জন দত্তের কাছ থেকে কোনও এক্সপেকটেশন নেই। আজ অবধি ওঁর সবচেয়ে বড় হিট ব্যোমকেশ বক্সী যেটা আমাদের ব্যানারের হয়ে উনি বানিয়েছিলেন। না ওঁর ‘ম্যাডলি বাঙালি’ চলেছিল, না ‘বো ব্যারাকস’। এখন যদি ওঁর ইচ্ছে হয় আমাদের সঙ্গে কাজ না করার, সেটা ওঁর গণতান্ত্রিক অধিকার। আমার একটাই আপত্তি, উনি যদি আগে বলতেন আমাদের সঙ্গে কাজ করবেন না, তা হলে আমি আরও দু’টো ছবি প্ল্যান করার সময় পেতাম। উনি আমাদের সেই সময়টা নষ্ট করলেন,” বলছেন কৌস্তুভ রায়।
আর তিনি যে অভিনেতা নির্বাচনে সমানে নাক গলাচ্ছিলেন, সেই গুজবের কী উত্তর দেবেন কৌস্তুভ?
“গুজব নয়। ব্যাপারটা নির্ভেজাল সত্যি। দেখুন আমার নিজের টিম আছে। সেখানে লকেট (চট্টোপাধ্যায়), কাঞ্চনা (মৈত্র), সম্পূর্ণা (লাহিড়ী), কাঞ্চা (কাঞ্চন মল্লিক)এরা আছে। আমি তো চাইবই আমার প্রযোজনায় এদের নেওয়া হোক। যে কোনও প্রযোজকই এটাই বলবে। শুধু তাই নয়, আমি ছবিটা মন দিয়ে প্রযোজনা করি, তাই ছবি সম্বন্ধে আমার কিছু ইনপুট্স থাকবেই,” বলছেন কৌস্তুভ।
কৌস্তুভের বক্তব্যের উত্তরে অঞ্জন দত্ত কী বলছেন? তাঁর হাসিটাই বোধহয় অর্থব্যঞ্জক। “না, আমার কিছু বলার নেই। আমি আত্মসম্মানে বিশ্বাসী,” বলছেন অঞ্জন।
একটা শটও নেওয়ার আগে যে পরিমাণ চাপানউতোর আর তিক্ততা তৈরি হচ্ছে, বোঝাই যাচ্ছে ছবি শেষ হয়ে মুক্তির সময়ে আর কী কী ঘটতে পারে।
আর এ সব কিছু একটা জিনিসই প্রমাণ করছে।
এই মুহূর্তে টালিগঞ্জের সবচেয়ে বড় নায়ক হলেন লম্বা, ধুতি পরা সেই সত্যন্বেষী যাঁর পদবি বক্সী।
ব্যোমকেশ বক্সী। |
|
|
|
|
|