|
|
|
|
সুশান্তের গ্রেফতারে খুশি বাম-বিরোধী শিবির |
তিনিও সমালোচনার ঊর্ধ্বে নন, মন্তব্য দীপক সরকারের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • ঝাড়গ্রাম ও মেদিনীপুর |
দলে তাঁর ঘনিষ্ঠতম সহযোগী সদ্য গ্রেফতার হয়েছেন। তার পর দিনই সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কমিটির ‘দোর্দণ্ডপ্রতাপ’ সম্পাদক দীপক সরকারের গলায় শোনা গেল আত্মসমালোচনার সুর। সরাসরি সুশান্ত ঘোষের গ্রেফতার প্রসঙ্গে না-গেলেও শুক্রবার ঝাড়গ্রামে দলীয় সদস্যদের এক সভায় দীপকবাবুর মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ। তাঁর কথায়, “আমিও সমালোচনার ঊর্ধ্বে নই। আমি যে পদ্ধতিতে কাজ করেছি, তাতে ত্রুটিবিচ্যুতি থাকতে পারে। নিজেকে পুনর্গঠিত করতে হবে। আচার-আচরণে পরিবর্তন আনতে হবে। অন্যের আগে নিজের দোষ-ত্রুটি খতিয়ে দেখতে হবে।” ‘ঘুরে দাঁড়াতে’ হলে দলীয় নেতাকর্মীদেরও চারিত্রিক সংশোধনেরই পরামর্শ দেন তিনি। বিধানসভা ভোটের আগে জঙ্গলমহল-সহ জেলায় ঘুরে দাঁড়াতে ‘প্রতিরোধ’ তত্ত্বই প্রধানত প্রচার করতেন দীপকবাবু, সুশান্ত ঘোষেরা। সে দিক থেকে শুক্রবার সিপিএমের জেলা সম্পাদকের মন্তব্য নিশ্চিত ভাবেই ভিন্ন সুরে বাঁধা।
এ দিন সকালে ঝাড়গ্রামের এক হলে দলের ঝাড়গ্রাম শহর জোনাল কমিটির পূর্ব-নির্ধারিত সাধারণ সভায় দীপকবাবুর আরও স্বীকারোক্তি, “আমাদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ ও মূল্যবোধের অবক্ষয়ের জন্য মানুষ দূরে সরে গিয়েছেন। মানুষের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করার অভ্যাস রপ্ত করে তাঁদের সঙ্গে ফিরে পেতে হবে।” পাশাপাশি, বর্তমান শাসক দলের আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য কর্মীদের প্রতি তাঁর আহ্বান, “সব্যসাচীর মতো এক হতে তাণ্ডব প্রতিহত করতে হবে। অন্য হাতে দলকে সংগঠিত করতে হবে।” দীপকবাবু বলেন, “ঠিকাদারি, প্রোমোটারি, জমির দালালি এবং সালিশি করে অর্থ আদায়ের মতো কার্যকলাপে দলের একাংশ সক্রিয় ভাবে জড়িয়ে পড়ার জন্যই এই মুহূর্তে মানুষ আমাদের গ্রহণ করছেন না। মানুষের কাছে আমাদের গ্রহণযোগ্য করে তুলতেই হবে।” |
|
চন্দ্রকোনা রোডে সুশান্তবাবুর বাড়ির পাশে পরিমল কাননের সামনে তৃণমূল সমর্থকদের উল্লাস। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ। |
সিপিএমের দলীয় সূত্রের খবর, পূর্ব-নিধারিত ওই সভায় ঝাড়গ্রাম শহর জোনাল কমিটি এবং জোনাল কমিটির অন্তর্গত ৩টি লোকাল ও ৩০টি শাখা কমিটির সদস্যদের ডাকা হয়েছিল। মোট ৩৮০ জন দলীয় সদস্যের মধ্যে এ দিন অবশ্য উপস্থিত ছিলেন মাত্র ১৭৫ জন। সভায় সুশান্ত ঘোষের গ্রেফতার সম্পর্কে কোনও মন্তব্য না-করলেও পরে সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে দীপকবাবু বলেন, “রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্যই ওকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে। দল সুশান্তর পাশেই রয়েছে।” বর্তমান সরকারের কাজকর্মের সমালোচনা করে দীপকবাবু বলেন, “জনগণ সব দেখছেন। শেষ কথা জনগণই বলবেন।”
অন্য দিকে, সুশান্তবাবুর গ্রেফতারের পরের দিন জেলায় বাম-বিরোধী শিবিরের শরীরী-ভাষায় যেন একটা যুদ্ধ জয়ের খুশি। তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়ের বক্তব্য, “এত দিন ওরা অনেক অন্যায়-অত্যাচার করেছে। মানুষ বিচার পাননি। আইন ও বিচার ব্যবস্থায় আমাদের আস্থা রয়েছে। সুশান্ত ঘোষ-সহ ওদের যারা নানা অপরাধে যুক্ত তাদের দৃষ্টান্তমূলক সাজাই প্রাপ্য।” তৃণমূলের আর এক প্রবীণ নেতা তথা মেদিনীপুরের বিধায়ক মৃগেন মাইতির দাবি, “শুধু কেশপুরের পিয়াশালার ঘটনাই নয়, সুশান্ত ঘোষ বহু খুন-সন্ত্রাসে জড়িত। একজন দাগি অপরাধী। ও জেলে থাকলেই জেলায় শান্তি থাকবে। সাধারণ মানুষ খুশি হবেন।” কংগ্রেস নেতা কেশপুরের সেই মহম্মদ রফিকের আবার কটাক্ষ, “বাঘ থেকে বেড়াল হয়ে গেল! আসলে পাপ তার বাপকেও ছাড়ে না। সুশান্ত ঘোষের ফাঁসি হলেই পিয়াশালায় নিহতদের পরিবারের লোকজন সবথেকে খুশি হবেন।” |
|
|
|
|
|