|
|
|
|
সম্পাদকীয় ১... |
অপ্রিয় হউন |
পশ্চিমবঙ্গের নূতন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র জুন মাসে সরকারি আয়ব্যয়ের যে রূপরেখা দাখিল করিয়াছিলেন, তাহা ছিল আপাতদৃষ্টিতে সাময়িক একটি কাঠামো। কিন্তু বৃহস্পতিবার তিনি জানাইয়াছেন, বাজেটে যাহা কিছু থাকা দরকার, সবই সেখানে ছিল। বৃহস্পতিবার তিনি যে দলিলটি বিধানসভায় পেশ করিলেন, তাহা অর্থমন্ত্রীর মতে সামগ্রিক বাজেটের সারাৎসার, দলিলের শিরোনামের অন্তর্গত ‘অ্যাবস্ট্রাক্ট’ শব্দটিও তাহারই সূচক। জুন হইতে অগস্ট এই সময়ে কেন্দ্রীয় ঋণ এবং অনুদানের অঙ্কগুলি কিছুটা স্থির হইয়াছে, বিভিন্ন খাতে ব্যয়বরাদ্দও কিছুটা সংশোধিত হইয়াছে, নূতন ‘বাজেট’ প্রস্তাবে সেগুলি স্বভাবতই সংযোজিত। তবে কি ইহাই চূড়ান্ত প্রস্তাব? তাহাও বলা চলে না। এই মাসের শেষে অর্থমন্ত্রী যখন অর্থ বিল বিধানসভায় পেশ করিবেন, তখন সম্ভবত কর বৃদ্ধি বা নূতন করের প্রস্তাবগুলি জানা যাইবে। ইহা পরিবর্তনের কাল, অনিশ্চিতিরও, বাজেট রচনায় তাহার ছায়া পড়িবে, ইহাই স্বাভাবিক। অর্থমন্ত্রী জানাইয়াছেন, তিনি বাজেটের প্রক্রিয়াটিকে স্বচ্ছ রাখিতে চাহেন। উদ্দেশ্য সাধু। আশা করা যায়, তিনি ক্রমশ এই উদ্দেশ্য পূরণে যত্নবান হইবেন।
আপাতত আয়ব্যয়ের যে প্রস্তাব মিলিয়াছে, তাহার মূল সুরটিও আশাব্যঞ্জক। অর্থমন্ত্রী রাজ্য সরকারের মোট আয় ৩১ শতাংশ বাড়াইতে চাহিয়াছেন। পাশাপাশি, ব্যয়সংকোচ এবং ব্যয়বরাদ্দের যথাযথ ব্যবহার, দুইই তাঁহার ঘোষিত লক্ষ্য। এখন সরকারি আয়ের ৯৩ শতাংশ কেবল বেতন, পেনশন ও সুদ মিটাইতে চলিয়া যাইতেছে, অর্থমন্ত্রী সেই অনুপাত এক ধাক্কায় ৭৪ শতাংশে নামাইতে চাহেন। অন্য দিকে, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবহণ বা অনগ্রসর এলাকার উন্নয়নের জন্য সরকারি বরাদ্দ বিস্তর বাড়ানো হইতেছে। এই লক্ষ্যগুলি যদি পূর্ণ হয়, পশ্চিমবঙ্গের কোষাগার বহু দিন ধরিয়া যে অতলের পথে চলিয়াছে, তাহা হইতে ঘুরিয়া দাঁড়াইবার সম্ভাবনা তৈয়ারি হইবে।
কিন্তু প্রশ্ন সেখানেই। দিল্লির ‘কানামামা’ কী দিবেন, তাহা মোটের উপর বুঝা গিয়াছে। অর্থমন্ত্রীর বাজেট প্রস্তাবের সাফল্য নির্ভর করিবে প্রধানত তাঁহার রাজস্ব বৃদ্ধির সাফল্যের উপর। ৩১ শতাংশ আয়বৃদ্ধির উপায় কী হইবে? মদ বা লটারির উপর কর বাড়াইতে নীতিগত আপত্তি কিছু নাই। কিন্তু প্রথমত, এই সব কর অত্যধিক বাড়িলে চাহিদা কমিয়া যায়, ফলে রাজস্ব বৃদ্ধিও ব্যাহত হয়। দ্বিতীয়ত, মদের উপর কর বাড়িলে ভেজাল এবং বেআইনি মদের কারবার বাড়ে, তাহাতে কেবল সরকারের ক্ষতি নয়, সমাজের বিপদ। তৃতীয়ত, মদ হইতে বাড়তি রাজস্বের পরিমাণ নিতান্তই সীমিত, দুই এক ফোঁটায় পশ্চিমবঙ্গের কোষাগারের তৃষ্ণা মিটিবে না। অর্থমন্ত্রী নিশ্চয়ই বলিবেন, তৎপর এবং সৎ ভাবে রাজস্ব আদায় করিয়া তিনি আয় বাড়াইবেন। ভাল, কিন্তু তাহাতে মূল সমস্যা মিটিবে কি? রাজ্যের আয়ের তুলনায় সরকারি রাজস্বের অনুপাতে পশ্চিমবঙ্গ অনেক রাজ্যের তুলনায় অনেক পিছনে। এই ঘাটতি দূর করিবার প্রকৃত উপায় একটিই: ভর্তুকি কমানো, পরিষেবার ন্যায্য দাম আদায় করা। পরিবহণ, বিদ্যুৎ, জল বিভিন্ন পরিষেবার ব্যয়নির্বাহের খরচ যথাসম্ভব আদায় করিতে হইবে ব্যবহারকারীদের নিকট। দরিদ্রদের নিশ্চয়ই ছাড় দেওয়া যায়, কিন্তু সকলেই কেন সেই ছাড় পাইবেন? অর্থমন্ত্রীকে অপ্রিয় হইতে হইবে, তবেই দীর্ঘমেয়াদি আয়বৃদ্ধির ভিত স্থাপিত হইতে পারে। অমিতবাবু অপ্রিয় হইতে পারিবেন কি? |
|
|
|
|
|