|
|
|
|
|
|
|
চিত্রকলা ও ভাস্কর্য ১... |
|
ফুটে ওঠে বাংলার প্রকৃত নিসর্গকথা |
সম্প্রতি অ্যাকাডেমিতে অনুষ্ঠিত হল ৬০ জন শিল্পীর সম্মেলক প্রদর্শনী। দেখে এলেন মৃণাল ঘোষ |
বাইশ বছরের স্বপ্নাল্পুত এক তরুণীর নাম ছিল অর্চি। বুক-ভরা অভিমান নিয়ে বছর দু’য়েক আগে আত্মবিসর্জন দিয়েছিল সে। এই শিল্পীর প্রতি সমবেদনায় সাড়া দিয়েছিলেন কলকাতার বিশিষ্ট শিল্পীরা। প্রয়াণের প্রথম বার্ষিকীতে ক্যালকাটা স্কাল্পটর্স আয়োজন করেছিল ভাস্কর্যের একটি সম্মেলক প্রদর্শনী। তার পর গড়ে উঠেছে অর্চি ফাউন্ডেশন। উদ্দেশ্য ওই তরুণীর স্মৃতিতে মেধাবী অথচ দুঃস্থ শিল্প শিক্ষার্থীদের নানা ভাবে সহায়তা প্রদান। সেই প্রকল্পে মুক্তশিল্পর সহায়তায় প্রয়াণের দ্বিতীয় বার্ষিকীতে সম্প্রতি অ্যাকাডেমিতে আয়োজিত হল কলকাতার বিশিষ্ট শিল্পীদের ছবি ও ভাস্কর্য নিয়ে একটি সম্মেলক প্রদর্শনী। ৪০ জন চিত্রী ও ২২ জন ভাস্কর অংশ নিয়েছেন। প্রত্যেকের ছিল একটি করে কাজ।
যে শ্রদ্ধা ও সহানুভূতি নিয়ে আয়োজিত হয়েছে এই প্রদর্শনী, তার সার্বিক প্রতিফলন যে ঘটতে পেরেছে সামগ্রিক প্রদর্শের মধ্যে, সে কথা বলা যায় না। অপ্রিয় হলেও কথাটা সত্য। অনেক শিল্পী দিয়েছেন তাঁদের ছোট মাপের গৌণ কাজ। ভাস্কররা অনেকেই তাঁদের পূর্বে প্রদর্শিত, আগে একাধিক কাজ দিয়েছেন। ফলে প্রদর্শনীটি হয়ে উঠেছে একটি নিয়ম রক্ষার প্রকাশ মাত্র। শিল্পকলা এখন বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত। সব বাণিজ্যই নিয়ন্ত্রণ করে কোন প্রদর্শনীর গুরুত্ব কতটা। বড় গ্যালারির সম্ভ্রান্ত প্রদর্শনীতে শিল্পীরা তাঁর শ্রেষ্ঠ কাজটি দেন। প্রচারের আলোয় আসার সুযোগ সেখানে বেশি। থাকে বিপণনের সম্ভাবনা। এর বাইরে যখন আমন্ত্রণ আসে কোনও সহায়তামূলক সম্মেলকের জন্য, তখন শিল্পী সম্মান রক্ষা করেন তাঁর অপেক্ষাকৃত গৌণ কাজটি দিয়ে। এই প্রদর্শনীর ক্ষেত্রেও সেটা ঘটেছে। |
|
শিল্পী: গণেশ হালুই |
এই সীমাবদ্ধতাকে মনে রেখে আমরা এই প্রদর্শনীটি দেখব। কিছু ভাল কাজ তো ছিল। সেগুলি অভিনিবেশ দাবি করে। ভাস্কর্যের প্রসঙ্গে আসা যাক প্রথমে। বিপিন গোস্বামীর ব্রোঞ্জটিতে লৌকিকের সঙ্গে অভিব্যক্তিবাদী অনুষঙ্গের সুষম সমন্বয়ে মানবিক বিপন্নতার এক পরিমণ্ডল গড়ে উঠেছে। শঙ্কর ঘোষের ব্রোঞ্জে আয়তনময়তায় এক অর্ধ-শায়িতা মানবীর উপস্থাপনা, যার অনেকটাই হেনরি মুরের স্মৃতির সঙ্গে ধ্রুপদী ভারতীয়তার সমন্বয়ের প্রকাশ। মৃণালকান্তি গায়েনের ব্রোঞ্জে নৌকার উপর মানবীর উপস্থাপনাটির আঙ্গিকের কল্পনাদীপ্ত অভিনবত্বে উজ্জ্বল। দেবজ্যোতি পুরকায়স্থর মা ও শিশুর উপস্থাপনাটি আগে দেখা হলেও আঙ্গিকের স্বকীয়তায় আবারও মুগ্ধ করে। সুব্রত বিশ্বাসের ঘুড়ি নিয়ে দুই বালকের উপস্থাপনার ভাস্কর্যটি সম্পর্কেও একই কথা প্রযোজ্য। ভাস্কর্যে অন্যান্য শিল্পীর মধ্যে ছিলেন তাপস সরকার, অসীম বসু, মানিক তালুকদার, অনিল সেন, বনশ্রী খান, চিন্ময় কর্মকার, দেবাশিস মল্লিক চৌধুরী, সুব্রত পাল, সন্দীপ চক্রবর্তী, কিঙ্কর সাহা প্রমুখ।
এর মধ্যেও কিছু ভাল ছবি তো ছিলই। তার দু একটি নিবিষ্টভাবে দেখার চেষ্টা করা যায়। গণেশ হালুই নিসর্গের বিমূর্তায়নে এমন এক স্বকীয় আঙ্গিক-পদ্ধতি তৈরি করেছেন, যাতে বাংলার এক আত্মপরিচয় পরিস্ফুট হয়। এই ছবিটিও এর ব্যতিক্রম নয়। যোগেন চৌধুরী রেখায় এঁকেছেন মানব-মানবীর প্রতিমাকল্প। শ্রেষ্ঠ কাজ না হলেও এতে তাঁর প্রজ্ঞার পরিচয় ধরা থাকে। আদিত্য বসাকের করুণাদীর্ণ মুখের উপস্থাপনায় সাম্প্রতিকের নৈরাজ্যের প্রতিফলন ঘটে। শিপ্রা ভট্টাচার্যের ছবিটি বুনোটের অভিনবত্বে দৃষ্টি আকর্ষণ করে। শুভাপ্রসন্নর ‘প্যাঁচা’ তাঁর সুপরিচিত প্রতিমাকল্প। দিপালী ভট্টাচার্যের অভিব্যক্তিবাদী নারী মুখাবয়বটি সামগ্রিক দুঃখের ভারে ভারাক্রান্ত। প্রদর্শনীর অন্যতম স্মরণযোগ্য রচনা চয়ন রায়ের মূর্ত বিমূর্তের সমন্বিত উপস্থাপনাটি। মলয়চন্দন সাহার উপস্থাপনাটি সহজ রূপায়ণ। প্রমথেশ চন্দ্র ও ভবতোষ সুতারের ছবিদুটি আঙ্গিকের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় অভিনব। কিন্তু আরও ভাল কাজ তো তাঁরা করেন। সৌমিত্র করের রচনাটি প্রাচ্যচেতনা থেকে সাম্প্রতিক আধুনিকতা নির্মাণের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ছবিটি ছোট মাপের হলেও মৃন্ময়। এ ছাড়াও প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছিলেন পার্থপ্রতিম দেব, রতন বন্দ্যোপাধ্যায়, সমীর আইচ, অশোক মল্লিক, ধীরাজ চৌধুরী, সনাতন দিন্দা, চন্দ্রশেখর আচার্য, সুনীল দে, অসিত পাল, অসিত পোদ্দার প্রমুখ শিল্পী। |
|
|
|
|
|