পারিবারিক বিবাদে নাক গলিয়ে বৃদ্ধকে সপরিবার বাড়ি থেকে উৎখাত করার অভিযোগ উঠেছে বর্ধমানের এক স্থানীয় তৃণমূল নেতা ও তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গদের বিরুদ্ধে।
শুক্রবার ওই পরিবারের পাঁচ সদস্য বর্ধমানের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীরের দফতরের সামনে ধর্না দেন। তাঁদের অভিযোগ, গত ১ অগস্ট তাঁরা বর্ধমান থানায় অভিযোগ জানাতে গেলেও সাধারণ ডায়েরি নিয়ে তাঁদের ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়। গত ১২ দিনে কোনও ব্যবস্থাও নেওয়া হয়নি। তাঁরা অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁদের ঘরে ফেরালে ফের হামলা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে খোদ পুলিশই।
বর্ধমান শহরের মেহেদিবাগান এলাকার ওই পরিবারের কর্তার নাম অনিল ঘোষ। পুলিশ সুপারের কাছে লেখা চিঠিতে তাঁর ছেলে সাধন ঘোষ জানিয়েছেন, তাঁরা তিন ভাই, দুই বোন। গত ৮ জুন অনিলবাবু ৮৭০ বর্গফুট জমি ও বাড়ি একা তাঁর নামে রেজিস্ট্রি করে দেন। সাধনবাবুর অভিযোগ, এতেই তাঁর ভাইবোনেরা চটে যান। গত ২৪ জুলাই ছোটভাই তপন ঘোষের হয়ে মেহেদিবাগানের তৃণমূল নেতা পাপ্পু আহমেদ সদলবলে এসে তাঁর বৃদ্ধ বাবা ও অন্যদের মারধর করেন।
এমনকী আট ভরি সোনা ও রূপোর গয়না এবং নগদ দু’হাজার টাকা লুঠ করা হয় বলেও অভিযোগ। অনিলবাবুদের পাঁচ জনকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে ঘরে তালা দিয়ে দেওয়া হয়। তাঁর নাতি চন্দন ঘোষের অভিযোগ, “বাজেপ্রতাপপুর রেলসেতুর উপরে আমাদের চায়ের দোকানও পাপ্পুর লোকেরা বন্ধ করিয়ে দিয়েছে। আমরা ১০০৮ শিবমন্দিরের কাছে এক জনের বাড়িতে রয়েছি।” |
গত ৫ অগস্ট গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে তৃণমূলের যে লোকেরা বর্ধমান শহরে সশস্ত্র মিছিল করেছিল, পাপ্পু তাদের অন্যতম। আদালতে আত্মসমর্পণ করে তিনি জামিনও নিয়েছেন। কিন্তু বহু চেষ্টা করেও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। মোবাইল বেজে গেলেও তিনি তা ধরেননি। তপন ঘোষ আবার দাবি করেন, “পাপ্পু আহমেদ বলে কাউকে আমি চিনিই না। বাবা এক জনের নামে জমি-বাড়ি দিয়ে দেওয়ায় একটু মন কষাকষি হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু কোনও গোলমাল হয়নি।” তবে অনিলবাবুরা বাড়ি ছাড়লেন কেন? তপনবাবুর জবাব, “জানি না তো!”
পুলিশ সুপারের কাছে সাধনবাবুর অভিযোগ, বর্ধমান থানা প্রথমে অভিযোগই নিতে চায়নি। অনেক কাকুতি-মিনতির পরে সাধারণ ডায়েরি নেওয়া হয়। কিন্তু কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বর্ধমান থানার ওসি ভবদেব চক্রবর্তী অবশ্য দাবি করেন, “ওরা লিখিত অভিযোগ জানাতে এসেছিলেন, এমন কথা আমার জানা নেই। খোঁজ নিচ্ছি।”
তবে বর্ধমানের ডিএসপি (সদর) অমলকুসুম ঘোষ বলেন, “রাজনৈতিক লোকেদের হস্তক্ষেপেই অনিলবাবুর পরিবারের সদস্যেরা ঘরছাড়া। আমরা ওঁদের ঘরে ফেরাতে পারি। কিন্তু পরে ওঁদের উপরে আরও অত্যাচার হবে কি না, তা-ও ভাবতে হচ্ছে।” পুলিশ সুপার বলেন, “ক্রাইম কনফারেন্স থাকায় আমি ওঁদের সঙ্গে দেখা করতে পারিনি। পুলিশকে বলেছি, ওঁদের বাড়ি পৌঁছে দিতে। কোনও সমস্যা হলে আমায় জানাতে বলা হয়েছে।”
গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে দীর্ণ বর্ধমান শহর যুব তৃণমূলের অন্যতম নেতা জগন্নাথ পালচৌধুরী বলেন, “পাপ্পু তো খুবই ভাল ছেলে। সকলের পাশে দাঁড়ায়। কেন এমন ঘটনায় ওর নাম জড়াল, তা খোঁজ নিয়ে দেখব।” |