|
|
|
|
উত্তরের চিঠি |
|
জয়ন্তী-বক্সা নিয়ে কিছু প্রস্তাব |
বহু বছর ধরে ডুয়ার্সের জয়ন্তী উত্তরবঙ্গের অধিবাসীদের কাছে একটি জনপ্রিয় পিকনিক স্পট। মহাকালের গুহা মন্দির, পাহাড়ের ওপর ন্যাচারাল লেক পুকরি পাহাড়, ঘন-সবুজ বন আর নীল পাহাড় মানুষকে বহু বছর ধরে আকর্ষণ করে এসেছে। সম্প্রতি নাকি জয়ন্তীর প্রত্যেকটি পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে মুচলেকায় সই করানো হয়েছে যে, তাঁরা স্বেচ্ছায় জয়ন্তী ছেড়ে চলে যাবেন এবং বিনিময়ে পরিবার পিছু দেওয়া হবে ১২ লক্ষ টাকা। কেননা, জয়ন্তীকে বিদেশি অর্থসাহায্যে একটি ওয়াইল্ডলাইফ পার্ক হিসেবে গড়ে তোলা হবে। প্রায় বছর পঁচিশ আগে জয়ন্তীকে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের অধীনে আনা হয় সেখানকার বাঙালি সমাজের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে। সেই থেকে জয়ন্তীর পরিকাঠামোগত উন্নয়ন হয়নি। পিচরাস্তার অবস্থা শোচনীয়। জয়ন্তী নদীর পাড় বরাবর বাঁধগুলি মেরামত করা হত না, তোলা হত না বেড-এর পাথর। নদীর বেড সিল্টেড হতে হতে এখন ব্রিজ বরাবর। ফলে বন্যার দাপটে পূর্ত বিভাগের সুন্দর বাংলো, রেলের লোকো রানিং রুম এবং ব্রিজ-এর অ্যাপ্রোচ রাস্তা ধুয়ে-মুছে সাফ হয়ে গিয়েছে। আর বন্য প্রাণী? ২০০৬-এর শীতের রাতে বক্সা রোডের কাছের রাস্তায় বাঘ কিংবা শুয়োর দূরে থাক, একটা হরিণও চোখে পড়েনি। একটু বর্ষাতেই নদীর জল জঙ্গলে ঢুকে যায়। কাজেই জন্তুদের নিরাপদ আশ্রয়গুলি এখন আর নেই। আলিপুরদুয়ার-দমনপুর-রাজাভাতখাওয়া-বক্সা রোড হয়ে জয়ন্তী পর্যন্ত রেলপথ চালু হয়েছিল ১৯১০-এ। খুব সুন্দর ছোট্ট একটি রেল-স্টেশন ছিল জয়ন্তীতে। |
|
বন্যায় ভেসে যাওয়া সেতুর থাম। ছবি: সুদীপ দত্ত |
বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের জন্য কোনও সরকারি আমলার উর্বর মস্তিষ্কপ্রসূত স্কিমে সেই রেলপথ এবং রেল-স্টেশনটি বেমালুম উড়িয়ে দেওয়া হয়। একদা জয়ন্তী রেল-স্টেশন থেকে প্রতি দিন প্রচুর কাঠ, পাথর ও চায়ের পেটি রফতানি হত। ১৯১৬-য় তৈরি হয় জয়ন্তী নদীর ওপরের ব্রিজ, যাতে পূর্ব ডুয়ার্সের চা বাগানের সঙ্গে যোগাযোগের সুবিধা হয়। ওই বন-পাহাড়ের মাঝে ডলোমাইট, চুন, নদীর পাথর আর কাঠ ব্যবসায়ী, রেল এবং বন বিভাগের কর্মী-পরিবারগুলি নিয়ে সৃষ্টি হয়েছিল এক উন্নত সংস্কৃতি সম্পন্ন বাঙালি সমাজের সেই ১৯৩০-এর গোড়ায়। আশির দশকে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের জন্য জয়ন্তীর ট্র্যাডিশনাল ব্যবসাগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়। তুলে দেওয়া হল রেলপথ। রোজগার বন্ধ হওয়ায় অনেক বাঙালি পরিবার জয়ন্তী ছেড়ে চলে যায়। আফশোসের কথা, উত্তরবঙ্গে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠার সব চেয়ে বেশি সম্ভাবনা ছিল জয়ন্তী-বক্সার। কিন্তু ওখানে কোনও ট্যুরিস্ট লজ তৈরি হল না। বক্সার ঐতিহাসিক দুর্গটি অযত্নে ধ্বংস হয়ে গেল। কে বলবে যে যখন ফালাকাটায় জেলা সদর ছিল, বক্সা তখন ছিল খুব চমৎকার সাজানো একটি মহকুমা শহর। বক্সা-জয়ন্তীতে খুব সুন্দর ছোট ছোট ট্রেল আছে। নতুন ট্রেকারদের স্বর্গ। জয়ন্তীর প্রাক্তন বাসিন্দা হিসেবে নতুন সরকারের কাছে জয়ন্তী-বক্সার উন্নয়নের জন্য কয়েকটি প্রস্তাব রাখছি।
১) ঐতিহাসিক বক্সা দুর্গটি পুনর্নির্মাণ করে এটিকে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের মিউজিয়াম-এ পরিণত করা হোক।
২) বক্সায় ট্যুরিস্ট বাংলো এবং ইয়ুথ হস্টেল পুনর্নির্মাণ করা হোক।
৩) বক্সা দুর্গের নীচে রেস্তোরাঁ এবং পাবলিক ল্যাভেটরি তৈরি করা হোক।
৪) বক্সা পাহাড়ের আশেপাশে ডুকপাদের গ্রামগুলির কাছে ট্যুরিস্ট কটেজ তৈরি করা হোক।
৫) বক্সা পাহাড়ের ট্রেকিং রুটগুলির পথনির্দেশক সাইনবোর্ড লাগানোর ব্যবস্থা করা হোক।
৭) ডুকপাদের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য একটি সামগ্রিক পরিকল্পনা করা হোক।
৮) রাজাভাতখাওয়া, বক্সা রোড হয়ে জয়ন্তী পর্যন্ত রেল লাইনটিকে পুনরায় চালু করা হোক।
৯) জয়ন্তীতে ট্যুরিজম সেন্টার তৈরি করা হোক। বর্ষাতেও জয়ন্তীর একটি অসাধারণ রূপ আছে। সে জন্য চাই যথাযথ প্রচার।
১০) পিকনিক করতে আসা মানুষের জন্য নদীর ধার বরাবর শৌচাগার তৈরি করা হোক, আর রাখা হোক ট্র্যাশ ক্যান।
১১) জয়ন্তীকে বক্সা বাঘ প্রকল্পের বাইরে আনা হোক।
১২) বক্সা ব্যাঘ্রপ্রকল্প এবং এর জন্য বরাদ্দ অর্থ নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হোক।
১৩) উত্তরবঙ্গে বন এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হোক।
১৪) জয়ন্তীকে বন্যা থেকে বাঁচানোর ব্যবস্থা হোক এবং সেই সঙ্গে ব্রিজটি সংস্কার করা হোক। অঞ্জন রায়। শিকাগো, ইউ এস এ
|
চিঠি পাঠান সম্পূর্ণ নাম ও ঠিকানা উল্লেখ করে। ‘উত্তরের চিঠি’,
এবিপি প্রাঃলিঃ,
১৩৬/৮৯ চার্চ রোড,
শিলিগুড়ি ৭৩৪৪০১ |
|
|
|
|
|
|