|
|
|
|
লালবাজারে পত্রাঘাত |
মমতা না-চাইলেও বাড়তি
রক্ষী দাবি বহু মন্ত্রীরই
সুপ্রকাশ চক্রবর্তী • কলকাতা |
|
|
মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়ে পুলিশের বাড়াবাড়ি তিনি মোটেই ভাল চোখে দেখবেন না।
সম্ভবত মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টান্ত অনুসরণ করেই পূর্ত তথা পরিবহণমন্ত্রী সুব্রত বক্সী নিজেও কোনও ব্যক্তিগত পুলিশ রক্ষী নেননি।
তবে অন্য সব মন্ত্রীই যে মমতা বা সুব্রতবাবুকে অনুসরণ করবেন, তা কিন্তু নয়। এক জন রক্ষী পাওয়া সত্ত্বেও আরও অন্তত এক জন করে নিরাপত্তারক্ষী চেয়ে সরব হয়েছেন রাজ্য মন্ত্রিসভার কয়েক জন সদস্য। ওই মন্ত্রীদের অফিস থেকে অতিরিক্ত রক্ষী চেয়ে বারবার চিঠি যাচ্ছে কলকাতা পুলিশের কাছে। ওই মন্ত্রীদের মধ্যে আছেন কংগ্রেসের আবু হেনা ও মনোজ চক্রবর্তী, তৃণমূলের শঙ্কর চক্রবর্তী ও সাবিত্রী মিত্র।
রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতর সূত্রের খবর, জেলা থেকে নির্বাচিত মন্ত্রীরা কলকাতায় থাকলে তাঁদের জন্য ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ করে কলকাতা পুলিশ। জেলায় থাকার সময় সংশ্লিষ্ট পুলিশ সুপারের অফিস থেকেও নিরাপত্তারক্ষী দেওয়া হয়।
জেলা থেকে নির্বাচিত নতুন মন্ত্রীদের অনেকেরই অভিযোগ, জেলায় গেলে জেলা পুলিশের দেওয়া রক্ষীরা তাঁদের সঙ্গে থাকছেন। কিন্তু কলকাতা পুলিশের দেওয়া মাত্র এক জন নিরাপত্তারক্ষী নিয়ে কলকাতায় তাঁদের সমস্যা হচ্ছে। সবেধন নীলমণি ওই নিরাপত্তারক্ষীকে কোনও কোনও দিন টানা ১৪ থেকে ১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করতে হচ্ছে। কারণ, মন্ত্রীদের কাজের কোনও বাঁধাধরা সময় থাকছে না। দু’জন নিরাপত্তারক্ষী থাকলে তাঁরা ভাগ করে মন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্ব সামলাতে পারেন। কাউকে টানা ১৪ ঘণ্টা কাজ করানো ‘অমানবিক’।
মৎস্যমন্ত্রী আবু হেনার তরফে এই অসুবিধার কথা কলকাতার পুলিশ কমিশনার থেকে শুরু করে যুগ্ম কমিশনার (সদর) এবং যুগ্ম কমিশনার (ইন্টেলিজেন্স)-কে একাধিক বার জানিয়েছেন ওই দফতরের যুগ্মসচিব অমরেন্দ্র ভট্টাচার্য। জুন মাসের ২ এবং ২৯ তারিখে এ ব্যাপারে কলকাতা পুলিশের কর্তাদের চিঠি দেওয়া সত্ত্বেও এ-পর্যন্ত তার কোনও জবাব না-মেলায় মৎস্য দফতর ‘বিস্মিত’।
একই অভিজ্ঞতা কারামন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তীর। মহাকরণে শঙ্করবাবু জানান, রবিবার তিনি গিয়েছিলেন হুগলির চুঁচুড়ায়। সেখান থেকে ফিরতে তাঁর রাত ১১টা বেজে যায়। ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীকে অত রাত পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে থাকতে হয়। দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটে তাঁর নিজের নির্বাচন কেন্দ্রে যাওয়ার সময় ওই এক জন রক্ষীকেই যেতে হচ্ছে মালদহ পর্যন্ত। সেখান থেকে তাঁর সঙ্গ নিচ্ছেন জেলা পুলিশের দেওয়া নিরাপত্তারক্ষী।
কলকাতায় কারামন্ত্রীর জন্য আর এক জন নিরাপত্তারক্ষী বরাদ্দ করার আর্জি জানিয়ে তাঁর একান্ত সচিব নির্মলকান্তি বন্দ্যোপাধ্যায় গত ৮ এবং ২২ জুন কলকাতা পুলিশের ইন্টেলিজেন্স শাখার কর্তাকে চিঠি দেন। তার জবাব মেলেনি।
পরিষদীয় দফতরের প্রতিমন্ত্রী মনোজ চক্রবর্তীর জন্য প্রথমে বাড়তি এক জন নিরাপত্তারক্ষী চেয়ে তাঁর কার্যালয় থেকে কলকাতা পুলিশকে চিঠি দেওয়া হয় গত ২০ জুন। জবাব আসেনি সেই চিঠিরও। প্রথমে ওই মন্ত্রীকে যে-নিরাপত্তারক্ষী দেওয়া হয়েছিল, অন্তত তাঁকে বদল করার জন্য তার পরে আরও একটি চিঠি দেওয়া হয় গত ১৯ জুলাই। সেই বিষয়েও কলকাতা পুলিশ নিরুত্তর।
অথচ সরকারি মহলের বক্তব্য: বামফ্রন্ট সরকারের আমলে বাইরের জেলার মন্ত্রীদের জন্য জেলা থেকে দু’জন এবং কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে দু’জন করে ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী দেওয়া হত। যাতে নিরাপত্তারক্ষীরা যথাযথ বিশ্রাম পান এবং তাঁদের উপরে ন্যস্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ঠিকঠাক সামলাতে পারেন।
কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ইন্টেলিজেন্স) পার্থসারথি ঘোষ অবশ্য বলেন, “আমাদের যা নিয়ম, সেই অনুসারে আমরা নিরাপত্তারক্ষী দিচ্ছি মন্ত্রীদের। এ ব্যাপারে আমাদের অবস্থানের কোনও পরিবর্তন হয়নি।”
কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চের এক অফিসার বলেন, জেলা থেকে নির্বাচিত মন্ত্রীদের কেউ কেউ অতিরিক্ত এক জন করে নিরাপত্তারক্ষী চাইছেন। আবার কলকাতা থেকে নির্বাচিত অনেক মন্ত্রীকে বলা সত্ত্বেও তাঁরা নিরাপত্তারক্ষী নিচ্ছেন না। স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চের ওই অফিসারের মন্তব্য, “কোন মন্ত্রীকে কী ধরনের নিরাপত্তা দেওয়া হবে, তা ঠিক করে একটি কমিটি। জেলার মন্ত্রীদের কোনও নিরাপত্তারক্ষীই দেওয়ার কথা নয় আমাদের। তা দেবে জেলা পুলিশ। সৌজন্যবশত আমরা তবু ওঁদের এক জন করে নিরাপত্তারক্ষী দিচ্ছি।”
|
|
|
|
|
|