দিন কয়েক আগে উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট মহকুমার সন্দেশকালি-২ ব্লকে রায়মঙ্গল নদীর বাঁধ ধসে প্লাবিত হয় বেশ কিছু গ্রাম। সেখানকার বাসিন্দারা বাঁধের উপরে, ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন। এরই মধ্যে অবিরাম বর্ষণের ফলে মহকুমার সুন্দরবন এলাকায় বিভিন্ন নদীবাঁধের অবস্থা খুবই শোচনীয় হয়ে পড়েছে। কয়েকটি গ্রাম জলমগ্ন হওয়ায় বেশ কয়েকটি মাটির বাড়ি ভেঙে পড়েছে। ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে বাঁধ মেরামতির কাজ শুরু করা না হলে হিঙ্গলগঞ্জ, সন্দেশখালি, মিনাখাঁ, বসিরহাট, হাসনাবাদ-সহ মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। |
শুধু নদীবাঁধ নয়, বসিরহাট শহরের বিভিন্ন এলাকায় রাস্তাঘাটের অবস্থাও টানা বর্ষণের ফলে শোচনীয়। ইটিন্ডা রাস্তায় পিচ-পাথর উঠে গিয়ে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। টাকির সৈয়দকাটি গ্রামের কাছে ইছামতীর কংক্রিটের বাঁধে কয়েকশো ফুট এলাকা জুড়ে বড় বড় ফাটল দেখা দেওয়ায় চিন্তিত প্রশাসন। কোনওভাবে বাঁধ ধসে গেলে জেলার অন্যতম এই পর্যটনকেন্দ্র ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ক্ষতি হবে পর্যটন শিল্পের। টাকির পুরপ্রধান সোমনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, “বাঁধ ভাঙছে জানতে পারায় কিছু দিন আগে সেচ দফতর থেকে ইটের যে পাইলিং করা হয়েছিল রবিবার তা ধসে নদীতে নেমে যাওয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। দ্রুত ওই কংক্রিটের বাঁধ মেরামত করা না হলে নদীর পাশ দিয়ে যাওয়া রাস্তা ভেঙে এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।” দুর্যোগের কারণে বসিরহাটের সমস্ত বিডিওকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
শনিবার বসিরহাটে সকাল থেকে যে বৃষ্টি শুরু হয়েছিল বিকেলের পর তা আরও বাড়ে। রবিবার সারাদিন ধরেই চলে অবিশ্রান্ত বর্ষণ। শহরের বহু বাড়িতেই জল ঢুকে যায়। শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা বসিরহাট স্টেশন রোড চলে যায় হাঁটুজলের তলায়। জল জমে যায় এস এন মজুমদার রোডেও। বসিরহাট স্টেশনের পাশে রাজীব পল্লির আশপাশের পুকুর ছাপিয়ে গোটা এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। ভেঙে পড়েছে কয়েকটি মাটির বাড়ি। উপযুক্ত জল নিকাশির অভাবেই শহরের সাঁইপালা, চৌমাথা, ট্যাটরা, পাইকপাড়া, দক্ষিণপাড়া, ঘোষপাড়া, বাজারপাড়া এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। জলমগ্ন হওয়ার কারণে বহু এলাকায় পানীয় জলের সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
অবিরাম বর্ষণে বাদুড়িয়ার তারাগুনিয়ার চরপাড়া, শিমুলিয়া, আদিবাসীপাড়া, কাকঁড়াসুতি-সহ বেশ কিছু এলাকা চলে গিয়েছে হাঁটুজলের তলায়। চাষের জমিতে জল জমে যাওয়ায় ফসল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ঘরবাড়ি জলমগ্ন হওয়ায় অনেকেই অন্যত্র চলে গিয়েছেন। বাংলাদেশ থেকে বেরিয়ে আসা সোনাই নদীর এবং স্থানীয় খাল-বিল-বাওড়ের জল উপচে স্বরূপনগরের খর্দরসিং, কাঁটাবাগান, দুর্গাপুর, নিশ্চিন্দিপুর, চারঘাট, পান্তাপাড়া, বাংলানি, রাঘবপুরে বহু ঘরবাড়ি জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। |