|
|
|
|
জঙ্গলমহলে অধিকাংশ প্রাথমিকে শিক্ষক সঙ্কট |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
শিক্ষা, স্বাস্থ্যক্ষেত্র-সহ জঙ্গলমহলের সামগ্রিক উন্নয়নে জোর দিয়েছে নতুন রাজ্য সরকার। আর সেই উদ্যোগের প্রথম ধাপে নানা ক্ষেত্রে এখনকার হাল-হকিকৎ জানা শুরু হতেই বেহাল চেহারাটা বেআব্রু হতে শুরু করেছে। প্রাথমিক শিক্ষার মতো মৌলিক অধিকার অর্জনের ক্ষেত্রে জঙ্গলমহলের পড়ুয়ারা যে পরিকাঠামোগত দিক থেকেও বঞ্চনার শিকার, তা আরও এক বার স্পষ্ট হয়েছে সরকারি সমীক্ষায়।
জঙ্গলমহলের অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়েই দেখা যাচ্ছে, শিক্ষক সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। মাত্র এক জন শিক্ষক রয়েছেন, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় এমন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৮৩। যার অধিকাংশও জঙ্গলমহলেই। শিক্ষক সংখ্যা কম থাকায় পঠনপাঠনের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক ভাবেই সমস্যা হচ্ছে। প্রতিটি বিদ্যালয়ে ন্যূনতম ২ জন করে শিক্ষক থাকার কথা। কিন্তু তা না থাকায় বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়েই পঠনপাঠন কার্যত শিকেয় উঠেছে। এই যেখানে হাল, সাঁওতালি ভাষা ও অলচিকি লিপি জানা শিক্ষকের সঙ্কট আরও তীব্র।
সমস্যার কথা মানছে জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদও। সংসদের চেয়ারম্যান স্বপন মুর্মুর বক্তব্য, “যে সব স্কুলে এক জন করে শিক্ষক রয়েছেন, সেখানে শিক্ষক সংখ্যা বাড়ানো হবে। ইতিমধ্যেই সেই উদ্যোগ শুরু হয়েছে। বাড়তি শিক্ষক রয়েছেন, এমন বিদ্যালয় থেকে শিক্ষকদের এখানে আনা হবে।” একই বক্তব্য জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (প্রাথমিক) শিশির মিশ্র’রও। তাঁর কথায়, “এসআইদের (অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক) তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছে। তাঁরা প্রস্তাব পাঠাবেন। সেই প্রস্তাব খতিয়ে দেখেই পদক্ষেপ করা হবে।”
গত বছরই জেলায় প্রায় তিন হাজার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ হয়েছেন। তা সত্ত্বেও কেন এই পরিস্থিতি? সূত্রের খবর, গত এক বছরে বহু শিক্ষককেই বদলি করা হয়েছে। শুরুতে যাঁদের জঙ্গলমহলের স্কুলে নিয়োগ করা হয়েছিল, তাঁরা নানা অজুহাত দেখিয়ে সুবিধাজনক জায়গায় বদলি নিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে দলবাজির অভিযোগও রয়েছে। সে সময়ের শাসকদলের অনুগতদেরই সুবিধা হয়েছে বলে অভিযোগ। সাধারণত, দু’বছর শিক্ষকতা করার পরেই বদলির আবেদন করা সম্ভব। সে ক্ষেত্রে আবেদন খতিয়ে দেখে প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ পদক্ষেপ করে। কিন্তু গত এক বছরে যাঁরা বদলি হয়েছেন, তাঁদের একাংশের ক্ষেত্রে নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটানো হয়েছে বলেই অভিযোগ। সংসদ কর্তৃপক্ষের কাছেও বেশ কয়েকটি অভিযোগ এসেছে। সেই সব অভিযোগ এখন খতিয়ে দেখার কাজ শুরু হয়েছে।
রাজ্যে পালাবদলের পরে অনেকে ফের জঙ্গলমহলের বিদ্যালয়ে যেতে চাইছেন না। নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে নতুন করে বদলির আবেদন জমা হচ্ছে। এমন আবেদনকারীদের অধিকাংশই সিপিএম কর্মী-সমর্থক বলেই পরিচিত। কারও বক্তব্য, মাওবাদী প্রভাব বাড়তে থাকায় তাঁদের ফের হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে। এই অবস্থায় সংশ্লিষ্ট এলাকার বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করা সম্ভব নয়। আবার কারও বক্তব্য, অসুস্থ, বাড়ি থেকে বহু দূরে যেতে-আসতে সমস্যা হচ্ছে। সংসদের চেয়ারম্যানের বক্তব্য, “এ ক্ষেত্রেও আবেদনগুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তার পরেই যা পদক্ষেপ করার করা হবে।” সূত্রের খবর, ঝাড়গ্রাম পূর্বচক্রের অন্তর্গত এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকও ক’দিন আগেই সংসদের কাছে বদলির আবেদন করেছেন। তাঁর বক্তব্য, মাওবাদীদের হাত থেকে বাঁচতেই এই আবেদন। তাঁর কাছ থেকে নাকি মোটা টাকা দাবি করেছে মাওবাদীরা।
জেলায় ৪,৬৭১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। যে ৮৩টি বিদ্যালয়ে মোটে এক জন করে শিক্ষক রয়েছেন, তার মধ্যে বিনপুর চক্রেই রয়েছে ৫টি স্কুল। এর উল্টোপিঠে শহর বা শহর লাগোয়া কোনও কোনও বিদ্যালয়ে আবার ১০-১২ জন করেও শিক্ষক রয়েছেন! এই অসমতার অবস্থাটা বদলাতে চাইছে শিক্ষা দফতর। ইতিমধ্যেই এসআইদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (প্রাথমিক) ও সংসদ চেয়ারম্যান। ঠিক হয়েছে, এসআই-রা একটি তালিকা তৈরি করবেন। যে সব বিদ্যালয়ে ছাত্র সংখ্যার তুলনায় বাড়তি শিক্ষক রয়েছেন, রিপোর্টে তার উল্লেখ থাকবে। সেই তালিকা ধরে এক জন শিক্ষকের বিদ্যালয়ে বদলি করা হবে কোনও বিদ্যালয়ের বাড়তি শিক্ষককে। |
|
|
|
|
|