|
|
|
|
দ্রাবিড়-বিস্ময়ের পরের দিন এল জাহির-বিপর্যয় |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
রাহুল দ্রাবিড়ের ওয়ান ডে প্রত্যাবর্তন নিয়ে বিতর্কের পর চব্বিশ ঘণ্টাও কাটল না। নতুন কেলেঙ্কারি ধেয়ে এল ভারতীয় ক্রিকেটের দিকে। কয়েক দিন আগে যে ভারতীয় বোর্ড বলে যাচ্ছিল জাহির খান দ্রুতই সুস্থ হয়ে উঠবেন, তারাই এ দিন প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দিল, বা- হাতি পেসার পুরো ইংল্যান্ড সফরেই আর খেলতে পারবেন না।
জাহিরের হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট তো ছিলই। সঙ্গে এ দিন ঝুলি থেকে নতুন বেরিয়েছে গোড়ালির চোট। যার জন্য তাঁকে অবিলম্বে অস্ত্রোপচার করতে ছুটতে হবে। অস্ত্রোপচারের পর শুরু হবে কঠোর রিহ্যাবিলিটেশন পর্ব। সব মিলিয়ে ভারতীয় পেস বোলিংয়ের সেরা অস্ত্র অন্তত তিন থেকে চার মাস মাঠের বাইরে। দাঁড়ান, নাটকের এখানেই শেষ নয়। জাহিরের বদলি কে? না, রুদ্রপ্রতাপ সিংহ! ভারতীয় ক্রিকেটমহলে যিনি প্রায় বিস্মৃত!
রবিবার বোর্ডের বিজ্ঞপ্তিতে দ্রাবিড়ের ওয়ান ডে প্রত্যাবর্তনের চেয়েও বিস্ময় তৈরি হয়েছে কারণ মাত্র চব্বিশ ঘণ্টা আগের ওয়ান ডে দল নির্বাচনেই জাতীয় নির্বাচকেরা জাহিরকে টিমে রেখেছিলেন। প্রশ্ন উঠছে, তা হলে ফিজিও কী রিপোর্ট দিচ্ছিলেন এত দিন? দল নির্বাচনী সভার চিরাচরিত প্রথা হচ্ছে, সভার শুরুতে মেডিক্যাল বুলেটিন নেওয়া হবে। কাউকে নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকলে বোর্ড সচিব প্রথমেই বলে দেন, অমুক প্লেয়ারের চোট আছে। ওকে পাওয়া যাবে না। অথচ শনিবার দল নির্বাচনী সভায় জাহিরকে নিয়ে এ রকম কোনও ইঙ্গিত দেওয়া হয়নি নির্বাচকদের। সভা শেষে নির্বাচকদের কেউ কেউ বরং আত্মবিশ্বাসী হয়েই বলছিলেন, “হ্যাঁ হ্যাঁ, জাহির ওয়ান ডে খেলে দেবে।”
এক রাতের মধ্যে এমন অবিশ্বাস্য পট-পরিবর্তনের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বোর্ডের প্রভাবশালী মহলের কেউ কেউ বললেন, “গত কাল টিম সিলেকশন যখন হয়, তখনও সত্যি জাহিরকে নিয়ে এই খবরটা ছিল না। চোটের ভয়াবহতা আসলে ধরা পড়ে নর্দাম্পটনে ম্যাচটা চলার মধ্যে। যখন তিন ওভারের বেশি বল করতে পারল না জাহির।” নতুন কেলেঙ্কারিতে ফিজিওর ভূমিকা নিয়ে তো প্রশ্ন উঠছেই। সবথেকে হাস্যকর হয়ে দাঁড়িয়েছে চোট নিয়ে ভারতীয় বোর্ডের একের পর এক ডিগবাজি। কখনও গম্ভীর। কখনও সহবাগ। কখনও যুবরাজ। কখনও জাহির। এই বলা হচ্ছে, তেমন কিছু চোট নয়। দ্রুত সেরে উঠবেন। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দেখা যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট প্লেয়ার বাক্সপ্যাঁটরা গুছিয়ে বাড়ি ফেরার তোড়জোড় করছেন। একবার বলা হচ্ছে, জাহির পরের টেস্টেই খেলবেন। তাঁকে ওয়ান ডে টিমে রাখা হচ্ছে। আবার পরের দিনই জানানো হচ্ছে, তাঁর অস্ত্রোপচার দরকার। একবার দ্রাবিড়ের সঙ্গে কথা না বলেই তাঁকে ওয়ান ডে টিমে ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে স্বয়ং দ্রাবিড় বলে দিচ্ছেন, তিনিও বিস্মিত। আর কখনও ওয়ান ডে ক্রিকেট খেলতে চান না।
কাকতালীয় হতে পারে। কিন্তু দ্রাবিড়ের মতোই ২০০৯-এর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে শেষ বার ভারতের জার্সি গায়ে মাঠে নেমেছিলেন আর পি সিংহ। দ্রাবিড়ের ওয়ান ডে প্রত্যাবর্তন যদি ভারতীয় ব্যাটিং নিয়ে আকালের ছবি ফুটিয়ে তোলে, তা হলে আরপি-র প্রত্যাবর্তন ভারতীয় বোলিংয়ের দুর্দশার ছবি। ২০০৮-এর এপ্রিলে আমদাবাদে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে শেষ টেস্ট খেলেছেন আর পি। মাঝের সময় তিনি রায়বেরিলিতে রাহুল গাঁধীর সঙ্গে কংগ্রেসের প্রচারে নামতে পারেন বলে শোনা গিয়েছে। কিন্তু দারুণ কিছু ক্রিকেটীয় চকমকানি দেখিয়েছেন বলে খবর নেই। শেষ মরসুমে রঞ্জিতে পাঁচ ম্যাচে পেয়েছেন ১৭ উইকেট। ইনিংসে পাঁচ উইকেট মাত্র এক বার। দলীপ ট্রফিতে দু’ম্যাচে ৭ উইকেট। আইপিএলে চোদ্দো ম্যাচে ১৩ উইকেট। একটা সময় ছিল যখন স্বয়ং অধিনায়কের স্নেহধন্য ছিলেন আরপি। তাঁকে নিয়ে এক বার জাতীয় নির্বাচকদের সঙ্গে তুমুল ঝামেলা হয় ধোনির। এমনকী নেতৃত্ব ছেড়ে দেবেন বলে তিনি হুমকি দেন। ওই ঘটনার পর থেকেই শ্রীকান্তদের বর্তমান নির্বাচক কমিটির নজর থেকে আস্তে আস্তে সরে যেতে থাকেন আরপি।
ব্রাত্য সেই বাঁ-হাতি পেসারকে আচমকা ফেরানোর জন্য তা হলে ব্যাকস্টেজে কী নাটক ঘটে গেল? জানা গেল, বোর্ড রাজনীতির কোনও নাটক আরপি-র প্রত্যাবর্তনের পিছনে নেই। চাপে থাকা অধিনায়কের জেদাজেদি নেই। ধোনি বরং প্রচ্ছন্ন ভাবে ওয়ান ডে টিমের জন্য যাঁকে চেয়েছিলেন, তাঁর নাম রুদ্রপ্রতাপ সিংহ নয়। তাঁর নাম আশিস নেহরা। নির্বাচকেরা তাঁর নাম ছেঁটে ফেলেন ধারাবাহিকতা এবং ফিটনেসের অভাবের কারণ দেখিয়ে। আরপি-র প্রত্যাবতর্নের পিছনে রয়েছে দ্রাবিড়ের মতোই ক্রিকেট যুক্তি আর অসহায়তা। এ দিন আরপি-র প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে একটা নামই উঠে এসেছিল। বিদর্ভের উমেশ যাদব। হাল্কা করে অভিমন্যু মিঠুনের নামও উঠেছিল। শেষ পর্যন্ত চেয়ারম্যান শ্রীকান্ত-সহ নির্বাচকদের গরিষ্ঠ অংশ একমত হন, এঁদের দিয়ে হবে না। ইংল্যান্ডের আবহাওয়ায় আরপি-র বাঁ হাতি সুইং বোলিং এবং অভিজ্ঞতা বেশি কার্যকরী হবে। কেউ কেউ স্বীকারও করছেন, গত দু’বছর ধরে উমেশ যাদব-অশোক দিন্দাদের সুযোগ দেওয়া হলেও তাঁরা কিছু করে দেখাতে পারেননি। শুনে আশ্চর্যই লাগবে। বিশ্বের এক নম্বর টেস্ট টিম। বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন। তাদের শো-রুমটা তাও ঠিক আছে। গুদাম ঘরের দুর্দশা দেখে শিউরে ওঠার মতো। যেন গরিবের সংসার!
কিন্তু রুদ্রপ্রতাপ সিংহ নামের যে প্রায় বিস্মৃত পেসার এ দিন কামব্যাক ঘটালেন তিনি ফিট আছেন তো? কেউ জানে না। নির্বাচকেরা যেমন দ্রাবিড়ের সঙ্গে কথা বলে তাঁকে ওয়ান ডে-তে ফেরাননি তেমনই আরপি-র ফিটনেস যাচাই করেও তাঁকে দলে নেননি। মানে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ভারতীয় বোর্ড যদি আর একটা প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানায়, রুদ্রপ্রতাপ সিংহের হাঁটু মচকেছে, তিনি ইংল্যান্ড যেতে পারছেন না এতটুকু অবাক হওয়ার থাকবে না।
হায় ভারতীয় ক্রিকেট!
|
প্রবাসে চোটের বশে |
টিম মোটামুটি হাসপাতালে পরিণত, প্রতিদিনই টিম ইন্ডিয়ার কেউ না কেউ চলে যাচ্ছেন চলতি সিরিজের বাইরে। |
|
জাহির: মাত্র সাড়ে ১৩ ওভারের পর সিরিজের বাইরে। চোটের
ইতিহাস
জুলাই ’১০ কাঁধ, নভেম্বর ’১০ কুঁচকি, ডিসেম্বর ’১০ হ্যামস্ট্রিং,
জুন ’১১ গোড়ালি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ছিলেন না, ইংল্যান্ডেও নেই। |
|
|
|
|
|
যুবরাজ: এক বছর পর টেস্ট দলে ফিরে ট্রেন্টব্রিজে আঙুলে চোট
পেয়ে সিরিজ শেষ। চোটের ইতিহাস---মে’১১ নিউমোনিয়ার
জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরও করা হয়নি। |
|
|
|
হরভজন: ট্রেন্টব্রিজে হঠাৎ পেটের পেশিতে চোট,
সিরিজের
বাইরে।
দুটো টেস্টে প্রাপ্তি মাত্র দুটো
উইকেট। দিয়েছেন ২৮০-র উপর রান। |
|
|
|
সহবাগ: কাঁধে অস্ত্রোপচারের জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজে ছিলেন না,
চলতি
সফরে প্রথম দুই টেস্টেও নয়। জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে
সাময়িক
ভাবে বাঁ কানে শুনতে পাচ্ছিলেন না। এজবাস্টনে খেলার কথা। |
|
|
|
|
|
গম্ভীর: লর্ডস টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে কনুইয়ে চোট, ট্রেন্টব্রিজে
খেলেননি। প্রস্তুতি ম্যাচে খেলেছেন, এজবাস্টনে প্রথম দলে থাকবেন। |
|
|
|
|
|
|