|
|
|
|
স্কুলে ঢুকে শিক্ষকদের মারধর, অভিযুক্ত তৃণমূল |
নিজস্ব সংবাদদাতা • চন্দ্রকোনা |
স্কুলে ঢুকে শিক্ষকদের মারধরের অভিযোগ উঠল তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে। পুলিশকে আক্রমণ এবং পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরের জন্যও আঙুল উঠেছে তাঁদের দিকে।
পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনা থানার লক্ষ্মীপুর হাইস্কুলে শনিবারের এই ঘটনায় ইতিমধ্যে দুই তৃণমূল সমর্থক গ্রেফতার হয়েছেন। ঘটনার জেরে এলাকায় প্রভূত উত্তেজনাও ছড়ায়। ‘প্রহৃত’ প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎ পাণ্ডেকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। স্কুলের সিপিএম নিয়ন্ত্রিত পরিচালন সমিতির সম্পাদক উজ্জ্বল হাজরার বক্তব্য, “স্কুলে বিশৃঙ্খলা তৈরি করতেই ওই হামলা।” অন্য দিকে পুরো বিষয়টিকে ‘দুঃখজনক’ হিসেবে অভিহিত করে তৃণমূলের লক্ষ্মীপুর অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা নির্মল চৌধুরী বলেন, “এতে দলের কেউ জড়িত থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
পুলিশ কী বলছে?
পুলিশ জানিয়েছে, লক্ষ্মীপুর হাইস্কুলে হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে দুই তৃণমূল সমর্থককে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁদের দু’দিন জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। চন্দ্রকোনা থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, “বাকি অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে।” যদিও গোলমালের জেরে আপাতত স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎবাবুর কথায়, “ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত। তা ছাড়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে ওঁকেও সব কিছু জানাতে চাই।”
স্কুলে এমন অশান্তির কারণ কী?
স্থানীয় সূত্রের খবর, কয়েকটা ব্যাপার নিয়ে ক’দিন ধরেই প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে স্থানীয় কিছু তৃণমূলকর্মীর মতবিরোধ চলছিল। অভিযোগ: এক তৃণমূলকর্মী নিজের ভাইয়ের (পঞ্চম শ্রেণি উত্তীর্ণ) জন্য অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণের শংসাপত্র চাইতে বিশ্বজিৎবাবুর কাছে গিয়েছিলেন। প্রধান শিক্ষক জানিয়ে দেন, এ ভাবে শংসাপত্র মিলবে না। আর এক তৃণমূলকর্মী প্রধান শিক্ষককে বলেছিলেন তাঁর এক পরিচিতের মার্কশিটের কপি ‘অ্যাটেস্ট’ করে দিতে। স্থানীয় সূত্রের খবর, আসল মার্কশিট না-দেখে বিশ্বজিৎবাবু ওই কাজ করতে রাজি হননি।
এই সবকে কেন্দ্র করে যে মতান্তরের সূত্রপাত, দু’দিন আগে মিড-ডে মিল ঘিরে তা তুঙ্গে ওঠে।
কী রকম?
স্কুল সূত্রের দাবি, গত শুক্রবার স্কুলে ১৭৬ জন মিড-ডে মিল খেয়েছিল। স্কুলের খাতাতেও তেমনই রেকর্ড রয়েছে। কিন্তু তথ্যজ্ঞাপক বোর্ডে সে দিন চক দিয়ে লেখা হয়েছিল, ২৭৬ জন মিড-ডে মিল খেয়েছে। যার প্রেক্ষিতে তৃণমূলের তরফে স্কুল-কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কারচুপির অভিযোগ তোলা হয়। প্রশাসন অবশ্য জানাচ্ছে, তদন্তে তেমন প্রমাণ মেলেনি। চন্দ্রকোনা ১-এর বিডিও আসেক রহমান বলেন, “মিড-ডে মিলে কারচুপির অভিযোগ ঠিক নয়।”
কিন্তু এর জেরেই শনিবার লক্ষ্মীপুর হাইস্কুল চত্বরে দক্ষযজ্ঞ বেধে যায় বলে স্থানীয় সূত্রে জানানো হয়েছে। পুলিশ-সূত্রের খবর: শনিবার বিকেল নাগাদ কিছু লোক স্কুলে চড়াও হয়। অভিযোগ, গালিগালাজ-হুমকির পাশাপাশি বিশ্বজিৎবাবুকে মারধর করা
হয়, প্রতিবাদ করায় সহ-শিক্ষকদেরও রেয়াত করা হয়নি। পুলিশ পৌঁছলে তাদের গাড়ি ভাঙচুর এবং পুলিশকর্মীদের হেনস্থারও অভিযোগ উঠেছে।
ঘটনার কথা জানিয়ে শনিবার রাতেই তৃণমূলের ৭ জন কর্মী-সমর্থকের নামে পুলিশে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন প্রধান শিক্ষক। স্থানীয় বাসিন্দারাও বিচলিত। এই ধরনের অবাঞ্ছিত কাজকর্মে স্কুলে পড়াশোনার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন তাঁদের অনেকে। |
|
|
|
|
|