জমা জল নামল দ্রুত, দুর্ভোগ কমে স্বস্তি শহরবাসীর
বৃষ্টি হলে কলকাতায় জল জমার ছবিটা অপরিচিত নয়। কিন্তু শনিবার রাত থেকে টানা বৃষ্টিতেও রবিবার সেই চেনা জল-ছবি সে ভাবে চোখে পড়েনি শহরের কোথাও। তবে প্রবল বৃষ্টিতে এ দিন বৌবাজারের ফিয়ার্স লেনে একটি তিনতলা বাড়ির একাংশ ভেঙে পড়ে।
মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় এ দিন জানিয়েছেন, শনিবার রাত থেকে রবিবার বিকেল পর্যন্ত নাগাড়ে বৃষ্টি হলেও শহরের বেশির ভাগ অংশেই জল অনেক তাড়াতাড়ি নেমেছে। তবে, কয়েকটি নিচু এলাকায় এখনও জল জমে থাকার কথা মেনে নিয়েছেন তিনি। শোভনবাবু বলেন, “নিচু এলাকাগুলিতে জল বার করা হচ্ছে। ফের বৃষ্টি না-হলে আশা করছি, রাতের মধ্যেই সমস্ত জল নেমে যাবে।” পুরসভার সব ক’টি পাম্পিং স্টেশনই কাজ করছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
বিশেষজ্ঞেরা সব সময়েই বলেন, এ শহরের ভৌগোলিক আকৃতি অনেকটা গামলার মতো। তাই বৃষ্টি হলে জল জমবেই। ফলে সেই জল কলকাতা পুরসভা কত তাড়াতাড়ি নিষ্কাশন করতে পারে, প্রশ্নটা এসে দাঁড়ায় সেখানেই। কলকাতা পুরসভার নিকাশি দফতরের সমীক্ষা অনুযায়ী, এ শহরের নিকাশি পরিকাঠামোয় ঘণ্টায় ৬ মিলিমিটার জমা জল নিষ্কাশন হতে পারে। তার বেশি বৃষ্টি হলেই শহরের বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে।
রবিবার বিধান সরণিতে কোমর-জলে এক প্রবীণ।
আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, শনিবার রাত থেকে রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত শহরে ৮৭.৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এর জেরে শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণের বিস্তীর্ণ অংশে জল জমে যায়। পুরসভা সূত্রের খবর, সব চেয়ে বেশি জল জমে দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুর, পার্ক স্ট্রিট, রাসেল স্ট্রিট, ক্যামাক স্ট্রিটের একাংশে। পূর্ব কলকাতার তপসিয়া, আনন্দ পালিত রোড ও পার্ক সার্কাসেও এ দিন বেশ কিছুক্ষণ জল দাঁড়িয়ে ছিল।
দীর্ঘক্ষণ জল জমে ছিল মধ্য কলকাতার চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, বিবাদী বাগ অঞ্চল এবং উত্তরে ঠনঠনিয়া, মুক্তারামবাবু স্ট্রিট, রাজা মণীন্দ্র রোড ও পাইকপাড়ার বিস্তীর্ণ এলাকাতেও। পুরসভার নিকাশি দফতরের এক আধিকারিক জানান, নিচু এলাকা হওয়ায় ওই জায়গাগুলিতে জল নামতে দেরি হয়। পাশাপাশি, পাইকপাড়া সংলগ্ন দত্তবাগানে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের একটি পাম্প থাকলেও বিদ্যুৎ সরবরাহে সমস্যা থাকায় সেটি চালু করা যাচ্ছে না বলেও তাঁর দাবি। তবে, বীরপাড়ায় ধীরে ধীরে জল বার করছে পাম্প। মেয়র জানান, নিকাশির উন্নতির জন্য এই অঞ্চলে কলকাতা উন্নয়ন প্রকল্পের কাজও চলছে। পুরসভার দাবি, বেহালার বহু রাস্তাতেই দ্রুত জল নেমেছে। রাত থেকে বৃষ্টি হওয়ায় নিকাশির মুখে আটকে থাকা জঞ্জালও এ দিন সাফ করানো হয়েছে।
বৃষ্টির পথে ভোগান্তির সঙ্গে মিশল ভালবাসাও।
ঘনঘোর বর্ষায় প্রেমের জোয়ার।
পার্ক স্ট্রিটে জল থেকে জুতো
বাঁচিয়ে চলেছেন এক পথচারী।
টানা বৃষ্টিতে কিছুটা হলেও ব্যাহত হয়েছে লোকাল ট্রেন পরিষেবা। রবিবার পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব রেলের হাওড়া এবং শিয়ালদহ ডিভিশনে বেশ কিছু লোকাল ট্রেন দেরিতে চলে। রেল সূত্রে বলা হয়েছে, লোকাল ট্রেনের ক্ষেত্রে গড়ে ১০ মিনিট দেরি হলেও মেল এবং এক্সপ্রেস ঠিক সময়ে রওনা হয়। অন্য দিকে, শনিবার দুপুরে জল জমে আটকে পড়েছিল চক্ররেল। রবিবার দুপুর পর্যন্ত ফের তা চললেও বিকেল চারটের পরে লাইনে জল বাড়ায় বন্ধ করে দেওয়া হয়। রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ওই সময়ে বিবাদী বাগ থেকে মাঝেরহাট পর্যন্ত কিছু ট্রেন চলেছে। পূর্ব রেল সূত্রে খবর, শনিবার গভীর রাত থেকে শিয়ালদহ মেন শাখায় রানাঘাট-কৃষ্ণনগর পর্যন্ত রেল লাইনে কাজের জন্য বেশির ভাগ ট্রেন বন্ধ রাখার কথা আগেই জানানো হয়েছিল। তবে বনগাঁ বা ডানকুনি শাখায় ট্রেন চলাচল মোটামুটি স্বাভাবিক ছিল। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সমীর গোস্বামী বলেন, “শিয়ালদহ শাখায় ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও জল জমে যাওয়ায় লোকাল ট্রেনগুলি হাওড়া স্টেশনের কাছে কারশেডে (টিকিয়াপাড়া সংলগ্ন) পাঠানো যায়নি। রাখতে হয়েছে বিভিন্ন স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে। ফলে সেগুলি হাওড়ার প্ল্যাটফর্মে এনে ছাড়তে কিছুটা দেরি হয়েছে।” একই অবস্থা ছিল দক্ষিণ-পূর্ব রেলের হাওড়া-খড়্গপুর শাখাতেও। ওই রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সৌমিত্র মজুমদার বলেন, “দুপুরের পরে কারশেডে জল বেড়ে যাওয়ায় শাটিং লাইনের সিগন্যাল খারাপ হয়ে যায়। পাইলট ইঞ্জিন দিয়ে লোকাল ট্রেনগুলি স্টেশনে ঢোকানোর ফলে সেগুলি দেরিতে চলেছে।”

ছবি: সুমন বল্লভ ও সুদীপ আচার্য
First Page Next Story


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.