|
|
|
|
|
প্রতিটি সঞ্চয়ে জানা
চাই আলাদা নিয়ম অমিতাভ গুহ সরকার |
|
যেখানেই টাকা লগ্নি করুন, আপনার থাকা প্রয়োজন লগ্নি সংক্রান্ত সাধারণ জ্ঞান। না থাকলেই বিপত্তি। আপনাকে ঠকতে হতে পারে পদে পদে। ভাগ্যে জুটতে পারে ভোগান্তি এবং হাতছাড়া হতে পারে সুযোগ। ফুটবলের নিয়মে যেমন হকি খেলা যায় না, তেমনই আলাদা আলাদা নিয়ম আছে প্রত্যেক ধরনের সঞ্চয়ের ক্ষেত্রেও। আজ আমরা আলোচনা করব বিভিন্ন ধরনের লগ্নি সংক্রান্ত টুকিটাকি বিষয় নিয়ে, যা প্রত্যেক লগ্নিকারীর অবশ্যই জানা উচিত।
ডাকঘর ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্প:
ডাকঘর সেভিংস ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সুদের হার ৩.৫ শতাংশ। এই অ্যাকাউন্টে একক নামে রাখা যায় ১ লক্ষ এবং যুগ্ম নামে অনধিক ২ লক্ষ টাকা। এখানে টাকা রাখার সব থেকে বড় আকর্ষণ হল, একক অ্যাকাউন্টে বছরে ৩৫০০ টাকা এবং যুগ্ম অ্যাকাউন্টে ৭০০০ টাকা পর্যন্ত সুদ থাকে পুরোপুরি করমুক্ত।
পিপিএফ অ্যাকাউন্টে সুদ ৮% এবং তা পুরোপুরি করমুক্ত। ১৫ বছর মেয়াদ শেষে ৫ বছর বাড়ানো যায় এই অ্যাকাউন্টের মেয়াদ।
ডাকঘর সঞ্চয় প্রকল্পে উৎসমূলে সুদ থেকে কর কাটা হয় না। তার মানে এই নয় যে, ওই সুদ করমুক্ত (পিপিএফ অ্যাকাউন্ট ছাড়া)।
ব্যাঙ্ক আমানত:
সব রকমের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের উপর প্রাপ্ত সুদ পুরোপুরি করযোগ্য।
সেভিংস অ্যাকাউন্টে সুদ কষা হয় দৈনিক ব্যালান্স-এর ভিত্তিতে।
ফিক্সড ডিপোজিট বা স্থায়ী আমানতের মেয়াদ শেষ হলে ১৫ দিনের মধ্যে জানাতে হয় নবীকরণ করা হবে কি না। সময়ে জানালে নবীকরণ করা হয় মেয়াদ শেষের পরদিন থেকে। কিছু না জানালে অনেক ব্যাঙ্ক একই মেয়াদে নবীকরণ করে দেয়।
বছরে ১০ হাজার টাকার বেশি সুদ হলে তা থেকে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে উৎসমূলে ১০ শতাংশ কর কাটা হয়। ‘প্যান’ জানানো না-থাকলে কর কাটা হতে পারে দ্বিগুণ হারে।
এটিএম অর্থাৎ ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে অন্য ব্যাঙ্কের এটিএম থেকেও টাকা তোলা অথবা স্টেটমেন্ট সংগ্রহ করা যেতে পারে। মাসে পাঁচ বার অন্য ব্যাঙ্কের এটিএম ব্যবহার করার জন্য কোনও মাসুল দিতে হয় না। অন্য ব্যাঙ্কের এটিএম থেকে এক বারে সর্বাধিক ১০ হাজার টাকা তোলা যায়।
কোনও কোনও ব্যাঙ্ক বর্তমানে চালু হারে ১০ বছর পর্যন্ত মেয়াদে ফিক্সড ডিপোজিট করার সুযোগ দিচ্ছে।
লম্বা মেয়াদে রেকারিং ডিপোজিট অ্যাকাউন্টও খোলা যেতে পারে এই বেলা।
মিউচুয়াল ফান্ড:
শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নির জন্য ‘প্যান’ আবশ্যিক।
প্রতি মাসে ন্যূনতম ৫০০ টাকা এসআইপি পদ্ধতিতে লগ্নি করা চলে কোনও কোনও মিউচুয়াল প্রকল্পে।
১০ হাজার টাকার বেশি যে-কোনও লগ্নিতে এখন থেকে ট্র্যানজাকশন চার্জ বাবদ মাসুল দিতে হবে ১৫০ টাকা। পুরনো লগ্নির ক্ষেত্রে তা ১০০ টাকা।
ইউনিট লিঙ্কড বিমার ক্ষেত্রে মেয়াদ শেষের আগে অথবা লক-ইন মেয়াদের পরপরই ভাঙালে বড় লোকসানের সম্ভাবনা। ভাঙানোর সম্ভাবনা থাকলে মিউচুয়াল ফান্ড প্রকল্পে লগ্নিই ভাল।
উঁচু হারের করদাতাদের জন্য ফিক্সড ম্যাচিওরিটি প্ল্যান বা এফএমপি প্রকল্প একটি ভাল লগ্নির জায়গা।
শেয়ারে লগ্নি:
বাজারের মাধ্যমে শেয়ার কেনাবেচার জন্য ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্ট থাকা আবশ্যিক। থাকতে হবে একটি ট্রেডিং অ্যাকাউন্টও
(কোনও শেয়ার ব্রোকারের দফতরে)।
ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে যে-কোনও কোম্পানির মাত্র ১টি শেয়ারও কেনা অথবা বিক্রি করা যায়।
শেয়ার কিনে এক বছর ধরে রেখে, তার পর বিক্রি করে কোনও লাভ হলে কর দিতে হয় না। এর আগে বিক্রি করে লাভ হলে, দিতে হবে মূলধনী লাভ কর।
শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ডিভিডেন্ড পুরোপুরি করমুক্ত।
শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড উভয় ক্ষেত্রেই নমিনেশনের সুবিধা আছে এবং তা করা বাঞ্ছনীয়।
অন্যান্য:
সোনা সোনাই। দীর্ঘ মেয়াদে একে কেউ নামতে দেখেনি। বিশ্ব শেয়ার বাজারে অনিশ্চয়তা দেখা দিলে এই ধাতুর দর বাড়তে থাকে। মিউচুয়াল ফান্ডের গোল্ড ইটিএফ-এর মাধ্যমে লগ্নি করে ঘরে সোনা রাখার ঝুঁকি এড়ানো যায়। কাগুজে সোনা এখন বেশ জনপ্রিয়।
দ্রুত কদর বাড়ছে রুপোরও। সঙ্গে দামও। এক দিকে শিল্পে রুপোর ব্যবহার বাড়ছে, অন্য দিকে কমছে রুপোর ভাণ্ডার।
পেনশন বেতনের মতোই করযোগ্য। অবসর নেওয়া এবং প্রবীণ নাগরিকের মর্যাদা পাওয়া মানেই সব রকম কর থেকে রেহাই পাওয়া নয়।
নিজের নামে একাধিক গৃহসম্পত্তি থাকলে একটি বসবাসের জন্য ব্যবহৃত হয় বলে ধরা হয় এবং তার উপর কোনও আয়কর দিতে হয় না। অন্যগুলি ভাড়া দেওয়া হোক বা না হোক, তার উপর আইন অনুযায়ী আয়কর প্রযোজ্য হয়।
যত বেশি সুদ, তত বেশি ঝুঁকি। যদি কোনও বেসরকারি জমা প্রকল্পে অস্বাভাবিক চড়া সুদের অঙ্গীকার করা হয়, তবে সেই সংস্থাকে খুব ভাল ভাবে যাচাই করে তবেই তাতে লগ্নির কথা ভাবা যেতে পারে। |
|
|
|
|
|