|
|
|
|
জলস্তর নামলেও ফুঁসছে ফুলহার |
নিজস্ব সংবাদদাতা • চাঁচল |
বুধবারও মালদহে লাল সংকেতের উপর দিয়ে বইছে ফুলহার নদী। মঙ্গলবারের তুলনায় এদিন অবশ্য জলস্তর সামান্য কমেছে। গত ২৪ ঘন্টায় নদীর জলস্তর ১০ সেন্টিমিটার কমেচে বলে সেচ দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে। তবে এদিনও নদী লাল সীমার ২৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইতে থাকায় রতুয়া এবং হরিশ্চন্দ্রপুরের প্লাবিত এলাকাগুলির পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। বরং ফুলহারের জলে সংরক্ষিত এবং অসংরক্ষিত এলাকা মিলে প্লাবিত ২০টি গ্রামে কিছু পলিথিন ছাড়া কোনও ত্রাণ পৌঁছায়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। জলে ডুবে নষ্ট হয়েছে ফসল। ডুবে গিয়েছে পথঘাট। এই অবস্থায় কর্মহীন হয়ে খাবারের জিনিসপত্র ফুরিয়ে আসছে বাসিন্দাদের। বেশ কিছু এলাকায় একবেলা খেয়ে কোনও মতে দিন কাটাচ্ছেন বাসিন্দারা। এই অবস্থায় দুর্গতদের ত্রাণের দাবিতে বাসিন্দাদের পাশাপাশি সরব হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলি। |
|
ছবি: বাপি মজুমদার। |
অসংরক্ষিত এলাকায় এক সপ্তাহ, সংরক্ষিত এলাকায় চারদিন ধরে বাসিন্দারা জলবন্দি হয়ে থাকলেও প্রশাসনের তরফে ত্রাণ না দেওয়ায় ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। নলকূপও জলে ডুবে যাওয়ায় এলাকায় পানীয় জলের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। মালদহের অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) তরুণ সিংহ রায় বলেন, “আপাতত দুর্গতদের ত্রিপল দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের সঙ্গে কথা হয়েছে। দুর্গতদের ‘পাউচে’ ভরা পানীয় জলের প্যাকেট দেওয়া হচ্ছে। ব্লকে খাদ্য সামগ্রী মজুত নেই। দুর্গতদের জন্য যাতে দ্রুত ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।” জেলা সেচ দফতরের নর্থ সেন্ট্রাল সার্কেলের সুপারিনটেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার সন্দীপ দে বলেছেন, “অসংরক্ষিত এলাকায় ফুলহারের উপচে পড়া জল ছাড়া রতুয়ায় অস্থায়ী বাঁধ ভেঙে সংরক্ষিত এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। জল না কমলে নতুন বাঁধ বা অন্য কিছু করার উপায় নেই। তবে ওখানে স্থায়ী বাঁধের জন্য ৭ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। বর্ষার পরেই কাজ শুরু হবে।” রতুয়ার সূর্যাপুরে গত সোমবার অস্থায়ী বাঁধ ভেঙে জল ঢুকে সংরক্ষিত এলাকার ১০টি গ্রামের বাসিন্দারা জলবন্দি হয়ে পড়েন। বাড়িঘরে জল ঢোকার পর বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন বহু দুর্গত। ওই এলাকাগুলির ফসল, পাকা রাস্তা, নলকূপ সবই জলের তলায়। আবার ফুলহারের উপচে পড়া জলে হরিশ্চন্দ্রপুর ও রতুয়ার অসংরক্ষিত এলাকার ১০টি গ্রামের বাসিন্দারা দ্বিতীয় দফায় জলবন্দি হয়ে আছেন। এদিন ফুলহারের জলস্তর ছিল ২৭.৬৭ মিটার। গত মঙ্গলবার তা ছিল ২৭.৭৭ মিটারে। সামান্য জল কমায় পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। হরিশ্চন্দ্রপুরের দিয়ারার বাসিন্দা ভোলা মণ্ডল এবং সুভাষ মণ্ডলেরা বলেন, “বাড়িতে জল। দিনমজুরি করে সংসার চলে। কাজও নেই। খাবার নেই। পলিথিন ছাড়া কিছুই পাইনি। ত্রাণের জন্য গ্রাম পঞ্চায়েতের কাচে আর্জি করেছি।” ভাকুয়িার মনোজ যাদব, দীনেশ মণ্ডল বলেন, “গোপালন করে সংসার চালাই। কোনও মতে বেঁচে আছি। পশুগুলির অবস্থাও খারাপ।” একই অবস্থা রতুয়ার সংরক্ষিত এলাকার নিমতলা, দেবীপুর মত এলাকার বাসিন্দা শেখ এমাজ, জহিরন বিবিদের। তাঁরা বলেন, “অনেকে পলিথিন পেলেও আমাদের তাও জোটেনি। দুই বিঘা পাট জলে ডুবে আছে। ঘরে খাবার নেই।” হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী সিপিএম নেতা সুধীর যাদব, রতুয়ার কংগ্রেস নেতা সৌমিত্র রায় একই সুরে বলেন, “দ্রুত ত্রাণ, খাবার বিলি না হলে সমস্যা ভয়ঙ্কর হবে। এলাকা জলের তলায়। কাজ নেই। খাবার নেই। প্রশাসনের অফিসাররা কী করছেন বুঝতে পারছি না।” |
|
|
|
|
|