|
|
|
|
ভরতপুরে বাবাকে কুপিয়ে খুন করল মনোরোগী ছেলে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • ভরতপুর |
ক’দিন ধরেই ‘অস্থির’ হয়েছিল ছেলেটি। বাড়ির লোক খানিক এড়িয়েই চলছিল তাকে। তবু অসতর্ক মুহূর্তেই বিপদ আসে, বুধবার দুপুরে তেমনই হল।
উঠোনের কোনে পড়েছিল দা। আর, দুপুরে নিঝুম বারান্দায় চোখ লেগে এসেছিল সদানন্দ রজকের (৫৮)। ঘর থেকে আচমকা বেরিয়ে নিমেষে উঠোন থেকে বছর কুড়ির সজল কুড়িয়ে নেয় সেই দা। তারপর ঘুমন্ত বাবার গলায় এলোপাথারি কোপ বসাতে থাকে। উঠে বসতেই পারেননি সদানন্দ। বাবার গোঙানি শুনে ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন সজলের দাদা উজ্জ্বল। রক্তে ভেসে যাওয়া বাবাকে তখনও কুপিয়ে চলেছে ছেলে। বাধা দিতে এগিয়ে গেলে এ বার বাবাকে ছেড়ে দাদার উপরে চড়াও হয় সজল। তার মাথাতেও সপাটে বসিয়ে দেয় দা-এর কোপ। মাথা ঘুরে পড়ে যায় উজ্জ্বল। নির্বিকার সজল কিন্তু তারপর দাদাকে আর কোপাতে যায়নি। দা’টা ছুঁড়ে ফেলে দেয় উঠোনে। তারপর চুপ করে গিয়ে বসে দাওয়ায়।
চিৎকার চেঁচামেচি শুনে ততক্ষনে পড়শিরা বেরিয়ে এসেছেন। তাঁরা ধরে ফেলেন উজ্জ্বলকে। মাথা নাড়িয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলেটি তখন এক নাগাড়ে বলে চলেছে ‘‘আমি ঘরে যাব।’’ পাড়ার দু-এক জন তাকে চড়চাপড় মারতে যান। বারণ করেন সদানন্দবাবুর ভাই। তিনি বলেন, “ওকে মেরে আর কী হবে। ছেলেটার কি কোনও বোধ আছে?” ভ্যানে চাপিয়ে তখনই কান্দি মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় সদানন্দবাবুকে। কিন্তু হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানান, কিছু করার নেই। মারা গিয়েছেন প্রৌঢ়। উজ্জ্বলকে অবশ্য হাসপাতালে ভর্তি করে নেওয়া হয়েছে। রাতে শয্যা থেকে সে জানায়, “বছর কয়েক ধরেই ভাইয়ের মাথার ঠিক নেই। চিকিৎসাও চলছে। কিন্তু গত কয়েক দিন ধরে বড্ড ছটফট করছিল। তা বলে এমনটা যে করবে তা ভাবতেই পারিনি।”
সদানন্দবাবুর এক পড়শি তারকনাথ রজক বলেন, “ছেলেটা এমনিতে ভাল। কিন্তু খেপে গেলে ভয়ানক। তবে এতটা মারাত্মক হয়ে উঠবে আমরা কল্পনাও করতে পারিনি।” প্রতিবেশীরা তো বটেই, বাড়ির লোকও ভাবতে পারেননি ছেলেটি এমনতরো ‘ব্যবহার’ করবে। সদানন্দবাবুর ভাই কেশববাবু বলেন, “বেঘোরে মারা গেলেন দাদা। তবে কী জানেন আমরা কেউই বুঝতে পারিনি ছেলেটা এমন ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে। বাবার উপরে ওর কিন্তু কোনও রাগ ছিল না। দাদাকেও ভালবাসত।
তবে তার নিয়মিত চিকিৎসায় ফাঁকিও পড়েনি। বুধবারই দাদার সঙ্গে বহরমপুর হাসপাতালে যাওয়ার কথা ছিল তার। পাড়ার লোকেরা জানান, ভাইকে নিয়ে উজ্জ্বল বাস স্ট্যান্ডে গিয়েও বাস পাননি। উজ্জ্বল বলেন, “ভাইকে বললাম পরের বাসে যাব। কিন্তু ও জেদ ধরল যাবে না বলে। তাই বাধ্য হয়ে ফিরে এলাম।” তারপরেই ওই কান্ড। উজ্জ্বলের এখন আফশোস, জোর করে ভাইকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে এ ভাবে বাবাকে হারাতে হত না। |
|
|
|
|
|