|
|
|
|
নখ ছাঁটায় বিপাকে খয়েরবাড়ির চিতাবাঘেরা |
নিলয় দাস • ফালাকাটা |
বাঘের নখও কেটে দিতে হয়?
বিশেষজ্ঞরা যতই চোখ কপালে তুলুন, কোচবিহারের ডিএফও ওমপ্রকাশ তেমনই যুক্তি দিচ্ছেন।
আর তাই জলপাইগুড়ি জেলার দক্ষিণ খয়েরবাড়িতে বছর সাতেক আগে গড়ে ওঠা লেপার্ড বা চিতাবাঘ সাফারির কয়েকজন ‘আবাসিকের’ নখে চলেছে ধারালো ছুরি। দাঁত থাকলেও নখহীন সেই সব চিতাবাঘেরা তাদের ‘অচেনা’ থাবা নিয়ে রীতিমতো অস্বস্তিতে পড়েছে। শুধু তা-ই নয়, সাফারির অন্যতম আকর্ষণ কালু নামের একটি পূর্ণবয়স্ক চিতাবাঘ নখ ছাঁটার পরে অসুস্থও হয়ে পড়েছে। যা শুনে বনমন্ত্রী হিতেন বর্মনের প্রতিক্রিয়া, “কেন এমন করা হল তা বিশদে খোঁজ নিচ্ছি।”
বাঘের নখ বলে কথা, তা ছাঁটার উপায়ও বেশ জটিল। ঘুমপাড়ানি গুলিতে চিতাবাঘেদের কাবু করেই ছাঁটা হয়েছে তাদের সাধের নখ। আর সেই ঘুমপাড়ানি ওষুধের মাত্রার হেরফেরেই বাঘগুলি ঝিমিয়ে রয়েছে বলেই মনে করছেন গবেষকদের একাংশ। ভারতীয় উপমহাদেশের চিতাবাঘ নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে গবেষণা করছেন অ্যাডাম উইলফ্রেড। তিনি বলেন, “চিতাবাঘকে ঘুমপাড়ানি গুলি ছোড়ার সময়ে ভীষণ সতর্ক থাকতে হয়। বাঘের বয়স, লিঙ্গ, ওজন এক লহমায় বুঝে ঘুমের ওষুধের পরিমাণ ঠিক করতে হয়। তার সামান্য এ দিক-ও দিক হলে বাঘ অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। এমনকী, মৃত্যু হওয়াও অস্বাভাবিক নয়।” কালুর ক্ষেত্রেও কী তাই হয়েছিল? সে ব্যাপারে অবশ্য ওই ডিএফও-র কাছে কোনও সদুত্তর মেলেনি। ওমপ্রকাশ বলেন, “খয়েরবাড়িতে যে চিতাবাঘগুলি রয়েছে, তাদের অনেকেরই নখ বড় হয়ে চামড়ার ভিতরে ঢুকে যাচ্ছিল। তাই নখ কাটা হয়েছে।” কিন্তু খয়েরবাড়ির ওই ‘এনক্লোজার’-এ বন্য পরিবেশ রয়েছে। সেখানে গাছের গুঁড়ি কিংবা পাথরে নখ ঘষে-মেজে প্রাকৃতিক উপায়েই ‘ম্যানিকিওর’ করে নিতে পারে চিতাবাঘেরা। এমনই মত আলিপুরদুয়ার নেচার ক্লাবের চেয়ারম্যান অমল দত্তের।
চিতাবাঘের নখ ছাঁটার ঘটনা শুনে হেসেই ফেললেন প্রাক্তন বনমন্ত্রী যোগেশ বর্মন। তাঁর বক্তব্য, “ওখানে তো জঙ্গলের সমস্ত পরিবেশ রয়েছে। বাঘের নখ কাটার কেন প্রয়োজন পড়ল বুঝছি না। চিতাবাঘের নখ কাটা হয়, তা দশ বছর মন্ত্রী থাকাকালীন শুনিনি।” পক্ষান্তরে ‘ওয়াইল্ড লাইফ ইন্সস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া’র বিজ্ঞানী পরাগ নিগম বলছেন, “তিনটি কারণ ছাড়া চিতাবাঘের নখ কাটার প্রয়োজন পড়ে না। সিমেন্টের মেঝেতে বাঘকে রাখা হলে নখ কাটা যেতে পারে। তা ছাড়া, অসুস্থ থাকলে বা আশপাশে গাছ বা পাথর না থাকলে নখ কাটা যেতে পারে।” তিনি জানান, খাবার সময়ে বাঘের নখের ভুমিকা গুরুত্বপূর্ণ। থাবার মধ্যে গুটিয়ে রাখা নখ দিয়ে শিকার চেপে ধরে তারপরে দাঁত দিয়ে ছিঁড়ে খায় তারা। খয়েরবাড়ির নির্বিঘ্ন খাঁচাতেও বন দফতরের দেওয়া মাংসের টুকরোও একই পদ্ধতিতেই খায় চিতাবাঘেরা। নখের অভাবেই কালু তার খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিয়েছে বলেও মনে করছেন বনকর্তাদের একাংশ।
এ ব্যাপারে ওই ডিএফও-র যুক্তি, “বন্য পরিবেশ পেলেও ওই চিতাবাঘগুলি সারা জীবন বন্দিদশায় রয়েছে। তারা জানেই না কী করে গাছে বা পাথরে ঘষে নখ কমাতে হয়।” আর সেই যুক্তিতেই খয়েরবাড়ির ৯টি চিতাবাঘকে ঘুমপাড়ানি গুলিতে কাবু করে ২৮ জুলাই তাদের নখ ছেঁটে দেওয়া হয়। এর পরেই কালু অসুস্থ হয়ে পড়ে। বন দফতরের চিকিৎসক অশোক সিংহ বলেন, “ওই চিতাবাঘটির বয়স হয়েছে অনেক। অন্য বাঘগুলির মতোই কালুকেও একই পরিমাণ ঘুমপাড়ানি ওষুধ দেওয়া হয়েছে। দেখা যাক। ও ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠবে বলে
মনে হয়।” |
|
|
|
|
|