|
|
|
|
সম্পাদক সমীপেষু... |
উচ্চবর্ণ একটুও উদার হয়েছে কি? |
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় খুব ঠিক ভাবে লক্ষ করেছেন যে, ইদানীং পাত্রপাত্রীর বিজ্ঞাপনে ‘অসবর্ণ চলিবে’ কথাটি বেশি পরিমাণে ব্যবহৃত হচ্ছে। (‘এখনও ফর্সা, স্লিম, প্রকৃত সুন্দরী পাত্রী চাই’, ২৯-৬) সুতরাং ধরা যায়, বর্তমানে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে জাতপাতের বিষয়টি গুরুত্ব হারাচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হল, সব জাতির মানুষই কি অসবর্ণ বিবাহে আগ্রহী হয়েছেন? একটু গভীর ভাবে লক্ষ করলে দেখা যাবে, অসবর্ণ বিবাহে আগ্রহ দেখাচ্ছেন প্রধানত তথাকথিত নিম্নবর্ণের মানুষরা। কিন্তু ব্রাহ্মণ, বৈদ্য, কায়স্থ প্রভৃতি সমাজের তথাকথিত উচ্চবর্ণের মানুষেরা সচরাচর অপেক্ষাকৃত নিচু জাতের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনে মোটেই আগ্রহী নয়। অর্থাৎ মুখে প্রগতিশীল কথাবার্তা বললেও সমাজের উচ্চবর্ণের মানুষরা এখনও পর্যন্ত জাতিভেদ প্রথার অঙ্গস্বরূপ আন্তর্বিবাহ সযত্ন সংরক্ষণ করে চলেছেন।
প্রণবকুমার দালাল। প্রাক্তন শিক্ষক, নেতাজি মহাবিদ্যালয়, আরামবাগ, হুগলি
|
কলকাতার গঙ্গাতীর |
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতার অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে সঙ্গে গঙ্গাতীরের সৌন্দর্যায়নেও উদ্যোগী হয়েছেন জেনে আনন্দিত হলাম। (‘লন্ডনের ধাঁচেই তিলোত্তমা রূপটান কলকাতার’, ৫-৭) এমন একটি সুন্দর চওড়া নদী আমাদের শহরের পাশে, অথচ সেটিকে সে ভাবে ব্যবহার করার কোনও উদ্যোগই নেওয়া হয়নি। সামান্য কিছুটা এলাকা বাদে গঙ্গাতীরের অধিকাংশটাই অপরিচ্ছন্ন ও দৃষ্টিকটু।
আমার দুটো প্রস্তাব আছে
এক) হাওড়া ব্রিজের কাছে ভগ্নপ্রায় পুরনো গুদামঘরগুলি ভেঙে এলাকাটি মিলেনিয়াম পার্কের সঙ্গে যুক্ত করা হোক।
দুই) প্রিন্সেপঘাট থেকে বাবুঘাট পর্যন্ত এলাকাটি গ্যাসের আলো দিয়ে পুরনো কলকাতার আদলে সাজানো হোক। যেখানে সন্ধের পর থেকে মোটরগাড়ির প্রবেশ বন্ধ থাকবে। চলবে ঘোড়ায় টানা ফিটন গাড়ি। বিক্রি হবে সুগন্ধি ফুলের মালা, কুলফি মালাই ইত্যাদি। থাকবে মাঝে মাঝেই বসার জায়গা। প্রত্যেক শহরেই একটা হেরিটেজ অঞ্চল থাকে। এই জায়গাটি সে ভাবেই গড়ে তোলা হোক। তা হলে সান্ধ্যভ্রমণের পক্ষে আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে।
অসীমকুমার বসু। কলকাতা-১৯
|
গেদে সম্মিলনী উচ্চ বিদ্যালয় |
আমাদের গ্রামে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে। যার নাম গেদে সম্মিলনী উচ্চ বিদ্যালয়। আমাদের এই বিদ্যালয়ে এক হাজারের মতো ছাত্রছাত্রী বর্তমানে পড়াশোনা করে। এই বছরেও এই বিদ্যালয় থেকে দেড়শোর উপরে ছাত্রছাত্রী মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল। গেদে, বিজয়পুর, হরিশনগর, রঘুনন্দনপুর, চাঁদপুর ও কুনেচাঁদপুর প্রভৃতি গ্রাম থেকে এখানে ছাত্রছাত্রীরা আসে। এই বিদ্যালয়ে কম্পিউটার প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা আছে। মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশের পর একাদশ শ্রেণিতে অন্যত্র ভর্তির ক্ষেত্রে অনেক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। শিক্ষা বিস্তারের স্বার্থে এই বিদ্যালয় উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে উন্নীত হোক।
মানিক প্রামাণিক। গেদে, নদিয়া
|
গৃহশিক্ষকের সৌজন্যে |
বিগত কয়েক বছর ধরেই দেখা যাচ্ছে যে, মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের সঙ্গে সাফল্যের অধিকারী হয়ে যারা শীর্ষ স্থানে রয়েছে তাদের সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হচ্ছে। আর তাতে দেখা যাচ্ছে, তাদের গৃহশিক্ষকের সংখ্যা তাদের বিষয়গুলির সমান বা তারও বেশি। এখন প্রশ্ন হল এই যে, তবে কি সব মানুষ এটাই বুঝবে যে, যার যত বেশি গৃহশিক্ষক তার নম্বর তত বেশি উঠবে! অর্থাৎ ছাত্র/ছাত্রী যেমনই হোক গৃহশিক্ষক চাই-ই। এবং সংখ্যাতেও বেশি চাই। কেউ যদি মেধাবী হয় তবে কি বুঝব যে, এত জন গৃহশিক্ষকের কাছে পড়ে সেইগুলো বুঝেছে বলেই মেধাবী বলা হচ্ছে। আর সেই সঙ্গে যেন স্কুলগুলোকে পরীক্ষা দেওয়ার মাধ্যম হিসেবেই দেখা হচ্ছে। অর্থাৎ ছাত্র/ছাত্রীদের জীবনে স্কুলের কোনও ভূমিকা নেই, এটাই যেন বোঝানো হচ্ছে। অর্থাৎ, পরীক্ষায় ভাল ফল মানে হচ্ছে অনেক গৃহশিক্ষক রাখার বিজ্ঞাপন। তাই যদি হবে, তবে মেধা তালিকা প্রকাশের কী প্রয়োজন? যদি কেউ গৃহশিক্ষকের সাহায্য ছাড়া শুধুমাত্র স্কুলে ও নিজে পড়ে ভাল ফল করে তবে তাকেই তো প্রকৃত মেধাবী বলে সকলের সঙ্গে পরিচয় করানো উচিত। অনেক গৃহশিক্ষক মানেই পরীক্ষায় ভাল ফল আর তখনই কেউ মেধাবী এই ধারণা বদলানোর দরকার।
সুমিত্রা গঙ্গোপাধ্যায়। কলকাতা-৬৫
|
অটিজ্ম রোগ নয় |
আমাদের দেশে অটিজ্ম-এ আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ২.৫ মিলিয়ন। এর মধ্যে ছেলেরা মেয়েদের তুলনায় ৪ গুণ বেশি আক্রান্ত। অটিজ্ম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার বা সংক্ষেপে A S D ভয়াবহতার বিচারে ভারতের স্থান আমেরিকার পরেই। এ বিষয়ে আমাদের রাজ্যে সচেতনতা প্রায় নেই বললেই চলে। বড় আশ্চর্য লাগে, আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশে যখন (২৪-০৭-১১ থেকে ২৬-০৭-১১) তিন দিন ব্যাপী অটিজ্ম এবং মানস প্রতিবন্ধকতা নিয়ে সে দেশে প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে এবং সদিচ্ছায় আন্তর্জাতিক সম্মেলন হয়েছে যার প্রধান অতিথি হিসাবে সনিয়া গাঁধী আমন্ত্রিত ছিলেন, তখন আমাদের দেশে এমন আন্তর্জাতিক সম্মেলন তো দূর অস্ত্, মানুষের মধ্যে সচেতনতাই গড়ে ওঠেনি। এই ধরনের এমন কিছু উদ্যোগ আমাদের রাজ্যে নেওয়া যেতেই পারে, অন্তত ভয়াবহতার নিরিখে। আমাদের মতো বাবা-মায়েরা উপকৃত হতেন। অটিজ্ম কোনও রোগ নয়। তাই ওষুধে নিরাময় হয় না।
সব্যসাচী পড়ুয়া। কলকাতা-৭৫
|
দোহাই, নোয়াই বাঁচান |
|
উত্তর চব্বিশ পরগনার মধ্যমগ্রাম ও নবব্যারাকপুর পুরসভার জলনিকাশি খাল এটা। যা অসংখ্য মানুষের জীবনরেখা। তবে গত কয়েক বছরের যা অবস্থা তাতে নোয়াই ঠিক খাল নয়, একে নর্দমা বলাই ভাল। কিন্তু নর্দমাতেই নোয়াইয়ের নরকযাত্রা শেষ হবে না। হয়তো এই নর্দমায় কিছু মাটি ফেলে তৈরি হবে বাস্তুজমি। গড়ে উঠবে ঘর-বাড়ি, জমবে হাট-বাজার। যেমন হয়ে থাকে। পাল্টে যাবে খালের চরিত্র। নোয়াই হবে বাস্তুজমি। মিলবে গ্রাম পঞ্চায়েতের খাজনা আর পুরকর।
নোয়াইয়ের পূর্ব নাম লাবণ্যবতী। ব্যারাকপুর ও আমডাঙার বরতি বিল থেকে বেরিয়েছিল লাবণ্যবতী। বরতি বিল থেকে বেরিয়ে খড়দহ হয়ে সুখচরকে ছুঁয়ে মধ্যমগ্রাম ও নবব্যারাকপুরের বুক চিরে এগিয়ে রাজারহাটকে পাশে রেখে হাড়োয়া গাঙে মিশেছে। লাবণ্যবতী নদী তার গর্বোদ্ধত অস্তিত্ব হারালেও রেখে গেছে অনেক বিল ও বাওড়। স্রোতহারা আজকের নোয়াই যখন লাবণ্যবতী ছিল তখন তার মূল স্রোত বইত সাঁইবনের পাশ দিয়ে। এই স্রোত প্রবাহিত হত বিদ্যাধরী পর্যন্ত। প্রায় ১৮ মাইল দীর্ঘ এই লাবণ্যবতী এক সময় প্রায় ৫৭ কিলোমিটার এলাকার জল নিকাশ করত নিয়ত। নদিয়া জেলার মোহনপুরের কাছে যমুনা নদী থেকে দুটো খাল কাটা হয়েছিল। এই দুটো খাল কেটে সুতি ও নোয়াইকে যুক্ত করা হয়। কাটা খাল এক সময় মজে যায়। ফলে, সুতি ও নোয়াই দুটোই হেজেমজে গেছে। তবুও এই নোয়াই আজও জল নিকাশের কাজটা করেই চলেছে। বড় জাগুলিয়া থেকে কাঁচরাপাড়া, বেলঘরিয়া রেলপথের পূর্বাংশ এবং বিরাটি থেকে বড় জাগুলিয়া রেললাইনের পশ্চিমাংশএই গোটা এলাকায় জল নিকাশে ব্রতী নোয়াই।
নোয়াই এখন নোংরা, দুর্গন্ধযুক্ত। বছরের বেশির ভাগ সময় এর বুক জুড়ে কচুরিপানার বাড়বাড়ন্ত। কলকারখানার রাসায়নিক বর্জ্য, হাট-বাজার, গৃহস্থের আবর্জনা, মৃত পশু-পাখির শব নির্বিচারে ফেলা হচ্ছে নোয়াইয়ের ‘হাঁটুজলে’। কয়েকশো খাটা পায়খানার বর্জ্য মিশছে প্রতিদিন নোয়াইয়ের জলে। পুরো জলটাই আজ তাই বিষাক্ত। তাই সরকারের কাছে অনুরোধ দোহাই, নোয়াই বাঁচান।
পাঁচুগোপাল হাজরা। সম্পাদক জল বাঁচাও সমিতি, কল্যাণগড়, উত্তর চব্বিশ পরগনা |
|
|
|
|
|