|
|
|
|
সম্পাদকীয় ১... |
মধ্যপন্থার অপেক্ষায় |
অবশেষে নিশ্চিত হইল, মার্কিন সরকার অন্তত ২০১৩ সালের পূর্বে তাহার ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হইবে না। হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস এবং সেনেট বাজেট কন্ট্রোল অ্যাক্ট অব ২০১১-কে ছাড়পত্র দিয়াছে। ফলে, সরকার এখন প্রয়োজনীয় অর্থ ঋণ করিতে পারে। তাহাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংকট কাটিল কি? শিরে সংক্রান্তি কাটিল বটে, কিন্তু মূল সমস্যা অধরাই থাকিল। কারণ, কোনও ক্রেডিট রেটিং সংস্থা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রেটিং কমাইয়া দিবে, সংকট তাহা নহে। অন্তত, প্রকৃত সংকটটি ভিন্ন। তাহার নাম ঋণ। সরকারের ঋণ। যত ক্ষণ সেই ঋণের কোনও সুস্থায়ী দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা না হয়, তত ক্ষণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংকট কাটিবার নহে। সরকারের ঘাটতি কমাইবার দুইটি মাত্র পথ আছে এক, করের হার বাড়াইয়া অধিকতর রাজস্ব আদায় করা; দুই, সরকারের ব্যয়ের পরিমাণ হ্রাস করা। দুইটি পথের শ্রেণিচরিত্র ভিন্ন। করের হার বাড়িলে তাহা অর্থনৈতিক ভাবে সম্পন্ন শ্রেণির ব্যয়যোগ্য রোজগারে প্রভাব ফেলে। কারণ, যাঁহাদের আয় বেশি, বর্ধিত করের বোঝার সিংহভাগ তাঁহাদেরই বহন করিতে হয়। অন্য দিকে, সরকার সামাজিক ক্ষেত্রে যে ব্যয় করে, তাহার প্রাপক মূলত আর্থিক ভাবে দুর্বল শ্রেণির মানুষ। যাঁহারা কর্মজীবন হইতে অবসৃত, তাঁহাদের বার্ধক্যভাতা রাজকোষ হইতে আসে; যাঁহারা চিকিৎসার খরচ জোগাইতে অসমর্থ, সরকার তাঁহাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। সরকারি ব্যয় কমিলে এই ক্ষেত্রগুলিতে টান পড়িবে। সুতরাং, কোন পথে হাঁটিয়া রাজকোষ ঘাটতি কমানো হইবে, সেই সিদ্ধান্তের মূলে একটি দ্বন্দ্ব রহিয়াছে। বৃহত্তর অর্থে ভাবিলে, তাহা শ্রেণি-দ্বন্দ্ব। একটি পথ বাছিবার প্রক্রিয়াটি, অতএব, শ্রেণিসংগ্রাম। মার্কিন রাজনীতি সেই পথেই হাঁটিতেছে।
মার্কিন রাজস্ব নীতি এখনও ধনী শ্রেণির দিকে ঝুঁকিয়া আছে। জর্জ ডব্লিউ বুশ যে আয়কর ছাড়ের ব্যবস্থা করিয়াছিলেন, বারাক ওবামা তাহা বজায় রাখিয়াছেন। অর্থনীতিবিদ জোসেফ স্টিগলিটস একটি হিসাব দিয়াছেন গত এক দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ধনীতম এক শতাংশ মানুষের প্রকৃত আয় ১৮ শতাংশ বাড়িয়াছে, আর শ্রমজীবী পুরুষদের আয় কমিয়াছে ১২ শতাংশ। রক্ষণশীল টি পার্টি যে ভাবে বর্তমান সিদ্ধান্তটিকে প্রভাবিত করিয়াছে, তাহাতে স্পষ্ট, তাহাদের অবস্থান আক্রমণাত্মকই হইবে। বারাক ওবামা নিজের ঘোষিত অবস্থান হইতে সরিয়া আয়কর বৃদ্ধি না করিতে বাধ্য হইয়াছেন। তবে কি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ এখনই স্পষ্ট? না। প্রশ্ন হইল, রাজনীতির রাশ কাহাদের হাতে থাকিবে টি পার্টির ন্যায় চরমপন্থীদের হাতে, নাকি অপেক্ষাকৃত মধ্যপন্থীদের হাতে? উভয় পক্ষের চরমপন্থীরাই সমঝোতার পথে বাধা। এবং, উভয় পক্ষের চরমপন্থাই অর্থনীতির স্বাস্থ্যের পক্ষে বিপজ্জনক। ঋণের পরোয়া না করিয়াই যদি সরকার ব্যয় করিয়া চলে, তবে তাহাতে বিপদ চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়িবে। অন্য দিকে, সরকার যদি প্রবল ভাবে ব্যয় কমায়, তাহাতে কর্মসংস্থানের ক্ষতি। ১৯৩০-এর দশকের গোড়ায় যে মহামন্দা হইয়াছিল, তাহার প্রথম দফা শেষ হইবার পরেই তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্র্যাঙ্কলিন রুজভেল্ট সরকারি ব্যয়সংকোচের পথে হাঁটিয়াছিলেন। তাহার ফলে অর্থনীতি আরও এক দফা মন্দার পথে চলিয়া গিয়াছিল। শেষ পর্যন্ত নিউ ডিল ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরিস্থিতি সামাল দেয়। সেই পর্বের পুনরাবৃত্তি অপ্রয়োজনীয়। এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে মধ্যবর্তী কোনও পথ খুঁজিতে হইবে। সেই কাজটি ‘উগ্রপন্থী’দের হাতে ছাড়িলে চলিবে না। সরকার কী কী ভাবে খরচ কমাইতে পারে, তাহা নির্ধারণের জন্য ছয় জন ডেমোক্র্যাট এবং ছয় জন রিপাবলিকানকে লইয়া ১২ সদস্যের একটি দল গঠিত হইবে। এই ১২ জন সদস্য যদি মধ্যপন্থী হন, এবং তাঁহাদের সেই মধ্যপন্থাটি যদি তাঁহারা রাজনৈতিক ভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠগ্রাহ্য করিয়া তুলিতে পারেন, তবে তাহা ভবিষ্যতের বিচারে ঐতিহাসিক হইয়া থাকিতে পারে। |
|
|
 |
|
|