|
|
|
|
অন্য দুষ্কৃতীর বদলে চেটিয়াকে ফেরত দিতে রাজি ঢাকা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • ঢাকা |
আলফা নেতা অনুপ চেটিয়াকে ভারতের হাতে তুলে দিতে বাংলাদেশের আপত্তি নেই। কিন্তু তার বদলে ভারতে আশ্রয় নেওয়া দু-এক জন বড় মাপের দুষ্কৃতীকেও ফেরত চায় তারা।
শনিবার ঢাকায় বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের সঙ্গে বৈঠকে রাজশাহি জেলে বন্দি চেটিয়াকে ফেরানোর আবেদন জানিয়েছিলেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম। সাহারা খাতুন আজ বলেন, “চেটিয়াকে ফেরত দিতে আমাদের কোনও অসুবিধা নেই। তার বিরুদ্ধে মামলা ছিল। শাস্তিও হয়েছে। এখন তাকে ফেরাতে গেলে আইনি প্রক্রিয়া মানতে হবে।” তবে ভারতে আটক বা আশ্রয় নেওয়া বেশ কিছু জঙ্গি রয়েছে। তাদেরও ফেরত চাওয়া হয়েছে। |
বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রসচিব আব্দুস শোবহান সিকদার জানান, অবৈধ ভাবে বাংলাদেশে ঢোকা, বিদেশি মুদ্রা ও স্যাটেলাইট ফোন রাখার দায়ে জেল হয়েছিল আলফা নেতা গোলাপ বরুয়া তথা অনুপ চেটিয়ার। শাস্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে একটি মানবাধিকার সংস্থা চেটিয়ার নিরাপদ হেফাজত চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন জানায়। তার পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত চেটিয়াকে জেলে রাখার নির্দেশ দেয় ঢাকা হাইকোর্ট। স্বরাষ্ট্রসচিব জানান, এখন তাঁকে দেশে ফেরাতে দুটি পথ খোলা। হয় চেটিয়া নিজেই মুক্তির আর্জি জানাবেন হাইকোর্টে, অথবা সরকারকে আগের আবেদন খারিজ করার ব্যবস্থা করতে হবে। সিকদার বলেন, ভারত-বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এখন যে পর্যায়ে, তাতে চেটিয়ার নিরাপত্তা নিয়ে কোনও সমস্যা হবে না। |
অনুপ চেটিয়া |
|
শনিবারের বৈঠকে চেটিয়া-সহ প্রায় ৬০ জন ফেরারের একটি তালিকা সাহারা খাতুনের হাতে তুলে দিয়ে প্রত্যর্পণের আর্জি জানিয়েছিলেন চিদম্বরম। তার মধ্যে চেটিয়াকে ফেরতের বিষয়টিতেই বাড়তি জোর দেন ঢাকা সফরে আসা ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। চিদম্বরম জানান, জঙ্গি সংগঠন আলফার সঙ্গে এ মাস থেকেই শান্তি আলোচনা শুরু করছে কেন্দ্র ও অসম সরকার। পরেশ বরুয়ার নেতৃত্বে একটি ছোট্ট অংশ ছাড়া আলফার প্রায় সকলেই এই শান্তি প্রক্রিয়াকে সমর্থন করেছেন। বাংলাদেশ চেটিয়াকে ফেরত পাঠালে তিনিও আলোচনায় থাকবেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, বৈঠকের পরে চিদম্বরম ঢাকা ছেড়ে যাওয়া মাত্রই সাহারা খাতুন অনুপ চেটিয়ার বিষয়ে ফাইল চেয়ে পাঠান। আজ সেই ফাইল তিনি মন্ত্রকের উপদেষ্টাদের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন। সেই সঙ্গে সাংবাদিকদের সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, “চেটিয়াকে ভারতে ফেরত পাঠাতে আমাদের কোনও আপত্তি নেই।” কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক উচ্চপদস্থ সূত্রের যুক্তি, এই ঘোষণার পরেও রাজনৈতিক ভাবে বাংলাদেশ সরকারের কিছু বাধ্যবাধকতার বিষয় থেকে যায়। এর আগে অরবিন্দ রাজখোয়া-সহ এক ঝাঁক আলফা নেতাকে গোপনে ভারতের হাতে তুলে দিলেও, সরকারি ভাবে তার দায় নেয়নি ঢাকা। ভারতও নাম বলে দিয়ে ঢাকাকে বিপাকে ফেলেনি।
ওই সূত্রের ব্যাখ্যা, চেটিয়াকে হস্তান্তরের ক্ষেত্রে এই ‘ঢাকঢাক গুড়গুড়’ কৌশল কাজে লাগবে না। কারণ অন্য আলফা নেতারা বেআইনি ভাবে বাংলাদেশে বসবাস করলেও, চেটিয়া রয়েছেন জেলে, সরকারি আশ্রয়ে। সুতরাং, আদালতের অনুমতি নিয়ে তাঁকে ফেরত দিতে গেলে বদলে কি পাওয়া গেল, সেই প্রশ্নও উঠবে। ঢাকার এই বাধ্যবাধকতার বিষয়টি দিল্লিও বোঝে। ৩০ জুলাইয়ের বৈঠকে চিদম্বরমের হাতেও ফেরার জঙ্গিদের একটি তালিকা তুলে দিয়েছিলেন সাহারা খাতুন। তার মধ্যে যেমন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি মুজিবর রহমানের দুই হত্যাকারী মেজর মাজেদ ও রিসেলদার মোসলেউদ্দিনের নাম রয়েছে, রয়েছে দুই হুজি নেতা মুস্তাকিম ও মোরসালিনের নামও। চিদম্বরম বৈঠকে আশ্বাস দেন, মুজিবের হত্যাকারীদের বিষয়ে ঢাকা আরও সুনির্দিষ্ট খবর দিলে দিল্লি তাদের ধরে ফেরত পাঠাতে চেষ্টার কসুর করবে না। কিন্তু দিল্লিতে নাশকতা চালাতে এসে ধরা পড়া দুই হুজি নেতা এখন ভারতের জেলে। তাদের ফেরত পাঠাতে ভারতও আইনি প্রক্রিয়া শুরু করবে। চেটিয়াকে মুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরুর করার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা এখন সেই আশ্বাসের দিকেও তাকিয়ে। |
|
|
|
|
|