আর্থিক সাহায্য নিয়ে ক্ষুব্ধ মমতা, সংবিধান মেনেই চলবেন প্রণব
বেহাল কোষাগার সামাল দিতে আর্থিক সাহায্য দেওয়া নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য টানাপোড়েন মিটেও মিটছে না। এক দিকে তৃণমূল শিবিরের অভিযোগ, প্রতিশ্রুতি দিয়েও বাস্তবে তা পালন করছে না কেন্দ্র। অন্য দিকে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের বক্তব্য, যা করার আইন মেনেই করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় কোনও একটি রাজ্যের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়।
শনিবার কলকাতায় কংগ্রেস বিধায়কদের পরিষদীয় রীতিনীতির শিক্ষা দিতে এসে সেই কথাই জানিয়ে গেলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। এ দিন বিধানসভায় ওই ‘ক্লাসে’ তিনি বলেন, দেশের ‘সাংবিধানিক গণ্ডি’র মধ্যে থেকেই কেন্দ্রীয় সরকার আর্থিক ভাবে রাজ্যের পাশে দাঁড়ানোর জন্য যা করণীয়, তা করবে। কিন্তু কেন্দ্র এখনও পর্যন্ত যা করেছে, তাতে মোটেই সন্তুষ্ট নন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ নিয়ে প্রণববাবুর কাছে আর্জি জানানোর পাশাপাশি খোদ প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকেও চিঠি লিখেছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর চিঠি পাওয়ার পরে প্রধানমন্ত্রীও প্রণববাবুকে চিঠি লিখে বিষয়টি দেখতে অনুরোধ করেন। প্রয়োজনে যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারপার্সন মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়ার সঙ্গে কথা বলতেও পরামর্শ দেন। এর পরেই রাজ্যের অর্থ দফতরের কর্তাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের বৈঠকে জঙ্গলমহল ও পাহাড়ের জন্য মোট তিন হাজার কোটি টাকার বিশেষ সাহায্য দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু সামগ্রিক ভাবে যে আর্থিক সাহায্য রাজ্য চাইছে, তা এখনও আসেনি।
আর্থিক সঙ্কট নিয়ে প্রথম বৈঠকের পর। -ফাইল চিত্র
কংগ্রেস সূত্রের খবর, এ দিন প্রণববাবুর ‘ক্লাসে’ কেন্দ্রের বিশেষ আর্থিক সহায়তা নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন জলপাইগুড়ির বিধায়ক সুখবিলাস বর্মা। প্রণববাবু তখন জানান, রাজ্যের আর্থিক অবস্থার হাল যে ভাল নয়, তা তিনি জানেন। কিন্তু সংবিধানের বাইরে গিয়ে তিনি কিছু করতে পারেন না। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় ২৮টি রাজ্যকেই সমান ভাবে দেখতে হয়। কী ভাবে রাজ্যগুলির জন্য অর্থ বরাদ্দ হয়, তা-ও সবিস্তার ব্যাখ্যা করেন প্রণববাবু। তাঁদের সঙ্গে আলোচনার পরে এক কংগ্রেস বিধায়ক বলেন, “কোনও রকম চাপ দিয়ে কেন্দ্রের কাছ থেকে যে রাজ্য সরকার টাকা আদায় করতে পারবে না, তা প্রণববাবুর বক্তব্যেই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। কেন্দ্র যা করার সংবিধানের মধ্যে থেকেই করবে। বিষয়টি বোঝাতে গিয়ে প্রণববাবু আমাদের বলেছেন, পাথরকে বেশি ঘষলে জল বেরোয় না! পাথর ভেঙে যায়!”
এ দিকে, কেন্দ্রীয় সরকারের বিশেষ আর্থিক প্যাকেজ না-পাওয়ায় মুখ্যমন্ত্রী যথেষ্ট ক্ষুব্ধ বলেই মহাকরণ সূত্রের খবর। ২১ জুলাই তৃণমূলের ব্রিগেড সমাবেশে প্রকাশ্যেই কিছুটা উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন তিনি। সম্প্রতি কেন্দ্রের আর্থিক সাহায্য নিয়ে যে রিপোর্ট তাঁর কাছে এসেছে, তা মুখ্যমন্ত্রীর উষ্মা আরও বাড়িয়েছে। তৃণমূল সূত্রে বলা হচ্ছে, প্রণববাবুর সঙ্গে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের এবং রাজ্যের অর্থসচিব সি এম বাচাওয়াতের সঙ্গে অর্থ মন্ত্রকের আমলাদের একাধিক বৈঠকে আর্থিক সাহায্যের যে প্রতিশ্রুতি কেন্দ্রের তরফে দেওয়া হয়েছিল, বাস্তব সাহায্যের সঙ্গে তার আকাশপাতাল তফাত। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নগরোন্নয়নের মতো একাধিক দফতর খাতে কেন্দ্রীয় সাহায্য অহেতুক আটকে রেখেছে দিল্লি।
এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের ভূমিকা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এর আগে প্রণববাবুকে ফোন করেও মুখ্যমন্ত্রী সক্ষোভে বলেছিলেন, ৩৪ বছরের বাম সরকার রাজ্যকে যে বেহাল আর্থিক দশায় ফেলে গিয়েছিল, তার জের কাটিয়ে উঠে উন্নয়নের কাজ করার জন্য কেন্দ্রের আর্থিক সাহায্য দরকার। কেন্দ্র একান্তই সাহায্য না-করলে নতুন রাজ্য সরকারকে হাত গুটিয়ে বসে থাকতে হবে! অথচ তারা চায় কাজ করতে। ব্রিগেডের সভায় মুখ্যমন্ত্রীর উষ্মার তির কার্যত প্রণববাবুরই বিরুদ্ধে ছিল বলেও কংগ্রেসের একাংশের অভিমত।
মমতার প্রতি প্রণববাবুর পরামর্শ ছিল, কেন্দ্রের কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য চাওয়ার আগে রাজ্য পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ করুক। কারণ, রাজ্য কোন পথে তার রাজস্ব আদায় বাড়াতে চায়, তা আগে দেখে নিতে চায় কেন্দ্র। বেহাল আর্থিক পরিস্থিতি সামাল দিতে রাজ্য প্রথমে নতুন কর বসিয়ে বা করের হার সংশোধন করে নিজের রোজগার বাড়াক, এটাই চাইছে কেন্দ্র। কিন্তু করের পরিমাণ বাড়িয়ে রাজ্যবাসীর উপরে বোঝা বাড়ানোর পক্ষপাতী নন মমতা। সে কথা কেন্দ্রকে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। সেই কারণে আলাদা করে বাজেট পেশের কথাও এখন ভাবছে না রাজ্য সরকার। তাদের বক্তব্য, গোটা বছরের আর্থিক বিবরণী ইতিমধ্যেই দিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে ফের একটা ভোট-অন-অ্যাকাউন্ট করলেই যথেষ্ট। এ দিন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর ক্লাসে এই বিষয়টি নিয়েও দীর্ঘ আলোচনা হয়। এক জন বিধায়ক প্রণববাবুকে প্রশ্ন করেছিলেন, রাজ্যে কত বার ভোট-অন-অ্যাকাউন্ট পেশ করা যায়? কারণ, রাজ্যে চলতি বছরে দু’বার ‘ভোট-অন-অ্যাকাউন্ট পেশ হয়ে গিয়েছে। বিধানসভার আসন্ন অধিবেশনে আবার ভোট-অন-অ্যাকাউন্ট পেশ করার সম্ভাবনা আছে। প্রণববাবুর সঙ্গে আলোচনার পরে কংগ্রেস বিধায়কদের অনেকেরই বক্তব্য, ভোট-অন-অ্যাকাউন্ট আবার পেশ করার ক্ষেত্রে আইনত বাধা নেই ঠিকই। তবে রাজ্যের আর্থিক দুরবস্থা কাটাতে বাজেট পেশই ‘বাঞ্ছনীয়’। কেননা, ভোট-অন-অ্যাকাউন্টে নতুন কর প্রস্তাব থাকে না। সে দিক থেকে তিনি বাজেট পেশ করারই পক্ষপাতী বলে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী দলীয় বিধায়কদের বৈঠকে জানিয়েছেন। তৃণমূল সূত্রে অবশ্য বলা হচ্ছে, নতুন করে কর চাপানোর সম্ভাবনা কার্যত নেই। ফলে বাজেট পেশও অবান্তর। একান্ত প্রয়োজন হলে আলাদা বিল এনে কর কাঠামোর পরিবর্তন করা যেতে পারে।
First Page Rajya Next Story


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.