এক নিখোঁজ যুবককে খুঁজতে পুলিশ নিষ্ক্রিয় এই ছিল অভিযোগ।
এ জন্য নিখোঁজের আত্মীয়স্বজন এবং প্রতিবেশীরা শুক্রবার বনগাঁর বাটার মোড়ে প্রায় আড়াই ঘণ্টা যশোহর রোডের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়ক অবরোধ করে রাখেন। বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। বাধা পান সাধারণ মানুষও। ধৈর্য হারিয়ে কয়েক জন পথচারী ও ব্যবসায়ী অবরোধের প্রতিবাদ জানালে তেতে ওঠে এলাকা। একটি দোকানে ভাঙচুর চালায় অবরোধকারীরা। এক ব্যক্তিকে ইট দিয়ে মারা হয়। প্রহৃত হন আরও এক পথচারী এবং এক পুলিশকর্মীও। ভয়ে দোকানপাট বন্ধ করে দেন ব্যবসায়ীরা। বিশাল পুলিশ বাহিনী গিয়ে অবরোধ তুলতে ব্যর্থ হয়। শেষ পর্যন্ত বিধায়ক এসে অবরোধকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসে নিখোঁজের সন্ধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে অবরোধ ওঠে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বনগাঁর খ্রিস্টানপাড়ার বাসিন্দা, বছর একুশের সঞ্জু মোদক গত ৫ জুলাই থেকে নিখোঁজ। তাঁকে অপহরণের অভিযোগে নয়াগোপালগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা, সঞ্জুর বন্ধু কৃষ্ণগোপাল দাসকে গ্রেফতারও করে পুলিশ। তিনি এখন পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন। কিন্তু নিখোঁজের এখনও কোনও সন্ধান মেলেনি। সেই কারণেই পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তোলেন সঞ্জুর পরিবারের লোকজন এবং প্রতিবেশীরা। |
এ দিন বেলা ১১টা থেকে সঞ্জুর ছবি নিয়ে অবরোধ শুরু হয়। অবরোধকারীদের মধ্যে বেশির ভাগই ছিলেন মহিলা। তাঁরা হাতে-হাতে ব্যারিকেড গড়েন। এর জেরে যশোহর রোডের পাশাপাশি সংলগ্ন কোর্ট রোডও অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। পথচারী ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে অবরোধকারীদের বচসা বাধে বেশ কয়েক বার। অনেক পথচারী অবরোধ তুলতে না পারার জন্য পুলিশকে দায়ী করেন। দীর্ঘ ক্ষণ চড়া রোদে দাঁড়িয়ে ধৈর্যচ্যুতি ঘটে পথচারীদের। গোপাল হালদার নামে এক পথচারী যাওয়ার চেষ্টা করলে অবরোধকারীরা বাধা দেন। শুরু হয় ধাক্কাধাক্কি। গোপালবাবুর দুই দাদা সুনীল এবং রিন্টু হালদারও প্রতিবাদ জানান। অভিযোগ, রিন্টুবাবু বিরাজ টিকাদার নামে এক অবরোধকারীর মাথায় ইট দিয়ে মারেন। তাঁর মাথা ফেটে যায়। অবরোধকারীরা পাল্টা রিন্টুবাবুকে বেধড়ক পেটান। সেই সময়ে নামমাত্র কয়েক জন পুলিশ ঘটনাস্থলে ছিলেন। কিন্তু তাঁরা গণ্ডগোল থামাতে পারেননি। উল্টে শিবনাথ ভট্টাচার্য নামে এক কনস্টেবল প্রহৃত হন। রিন্টুবাবুর ক্যাসেটের দোকানে ভাঙচুর চালান অবরোধকারীরা। দুপুর সওয়া ১টা নাগাদ বনগাঁ থানার আইসি মোহন সিংহ ঘটনাস্থলে আসেন। তিনি অবরোধ তুলতে ব্যর্থ হন। এর পরে বিশাল পুলিশ বাহিনী ও কমব্যাট ফোর্স নিয়ে উপস্থিত হন এসডিপিও (বনগাঁ) বিমলকান্তি বন্দ্যোপাধ্যায়। তার কিছু ক্ষণের মধ্যেই এসে পড়েন বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস। অবরোধকারীদের তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে নিখোঁজ যুবককে খুঁজে বের করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। এর পরেই অবরোধ ওঠে। তবে ওই রাস্তায় যান চলাচল স্বাভাবিক হতে আরও আধ ঘণ্টা সময় লেগে যায়।
পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ মানতে চাননি এসডিপিও। তিনি বলেন, “নিখোঁজকে খুঁজে পেতে আপ্রাণ চেষ্টা করা হচ্ছে। ধৃতকে জেরা করে এখনও কোনও তথ্য মেলেনি।” বিধায়ক বলেন, “বিষয়টি জানার পরেই আমি পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলি। আমরাও ওই যুবককে খুঁজতে চেষ্টা করব।”
অবরোধকারীদের মধ্যে সঞ্জুর মা ঝর্ণাদেবী এবং বাবা বাবু মোদকও ছিলেন। তাঁদের অভিযোগ, ৫ জুলাই বিকালে কৃষ্ণগোপালের ফোন পেয়ে সঞ্জু বাড়ি থেকে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। তাঁর পরনে ছিল গোলাপি টি-শার্ট এবং কালো জিন্স। গলায় সোনার চেন এবং হাতে সোনার আংটিও ছিল। সঞ্জু ফিরে না-আসায় ওই পরিবারের পক্ষ থেকে প্রথমে থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়। পরে কৃষ্ণগোপালের বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগ দায়ের করা হয়। ঘটনার পরে দিন কয়েক কৃষ্ণগোপাল ওই এলাকায় ছিলেন না। সঞ্জুর বাবা জানান, ওই দিন রাত ১১টা নাগাদ ছেলের সঙ্গে এক বন্ধুর ফোনে কথা হয়েছিল জানা গিয়েছে। কিন্তু আমরা ওকে ফোনে পাইনি। তিনি বলেন, “ছেলের সঙ্গে সাহাপাড়ার একটি মেয়ের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। তা মেয়েটির পরিবারের লোকজন মানতে পারেননি।” তাঁর অভিযোগ, “মেয়েটির পরিবারের পক্ষ থেকে সঞ্জুকে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। সঞ্জুর নিখোঁজ হওয়ার সঙ্গে এই ঘটনার যোগ থাকতে পারে। কৃষ্ণগোপাল সবই জানত।” পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, জেরায় ধৃত জানিয়েছেন, ৫ জুলাই সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনি সঞ্জুর সঙ্গে ছিলেন। তার পরে চলে যান। |