সঙ্গীত সমালোচনা ১...
ও যে মানে না মানা
র্দায় হৃতিক রোশন-আমিশা পটেল থাকুন কিংবা স্যাফ আলি খান-রানি মুখোপাধ্যায়, আড়াল থেকে প্রাণে দোলা লাগিয়ে যেতেন তাঁরাই। তাঁদের গলায় কাঁচামিঠে সুর, যেন জাদু জানে। তাঁদের আলতো প্রেমের পরশ মনে শিহরন আনে। ‘কহো না প্যার হ্যায়’ বা ‘হম-তুম’-এর সুরে।
তাঁরা দু’জনে আবার একসঙ্গে গলা মিলিয়েছেন। বলিউড পেরিয়ে তাঁদের গানের রোমান্স এ বার রবীন্দ্রসঙ্গীতের উঠোনে।
সেই ‘কহো না প্যার হ্যায়’, ‘হম-তুম’-এর হিট বলিউডি রোম্যান্টিক জুটি বাবুল সুপ্রিয় আর অলকা যাজ্ঞিক আবার একসঙ্গে। ১০টি রবীন্দ্রসঙ্গীত নিয়ে। রেকর্ডিং শেষ, মুম্বইয়ে এক নাম-করা স্টুডিওয় চলছে শেষ মুহূর্তের মিক্সিংয়ের কাজ। অগস্টের প্রথমেই মুক্তি পাবে আশা অডিও থেকে। অ্যালবামের নাম ‘মনে রবে’। ‘সহে না যাতনা’, ‘ও যে মানে না মানা’র মতো গান গাইছেন বাবুল-অলকা। রোমান্স-প্রেমী, রবীন্দ্র-অনুরাগী বাঙালিকে এটা তাঁদের পুজোর উপহারও।
পরস্পরের প্রতি কোনও অজানা গোপন টান থেকেই কি আবার এই কাছে আসা?
উত্তর আসে, “গান গাওয়ার তাগিদ থেকে কাছে আসা। আর প্রেরণা? সে তো রবিঠাকুর নিজেই। আগে ‘কত বার ভেবেছিনু’ আর ‘যদি জানতেম’ও সেই তাগিদ আর প্রেরণা থেকেই গাওয়া। হ্যাঁ, এই দু’টো অ্যালবামের সাফল্য অবশ্যই আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছে নতুন করে রবীন্দ্রসঙ্গীতের ডুয়েট অ্যালবাম তৈরি করতে।” বলছেন বাবুল।
ভাগ্যিস জুগিয়েছে! তাই তো এমন সুরের বাঁধন। একার অভিযান দোঁহে মিলে সাফল্যের দিকে কতটা এগোবে? “একা তো ভালই হল দু’টো রবীন্দ্র অ্যালবাম,” বলছেন একদা উত্তরপাড়ার বাসিন্দা বাবুল সুপ্রিয়, “রবীন্দ্রসঙ্গীত নিয়ে রোম্যান্টিক ডুয়েট সাম্প্রতিক কালে তেমন আর হচ্ছে কই? তাই ভাবলাম, দু’জনে মিলেই এমন একটা প্রোজেক্ট করা যাক।”
পরিবর্তন, আবার প্রত্যাবর্তনও। এ কাহিনি এক সুরেলা জীবনের সুরের সফরের, সম্পর্কের।
ইতিউতি শোনা যায়, শুধু গানের সুরে নয়, জীবনের ছন্দেও তাঁরা ছিলেন প্রেমডোরে বাঁধা। তা হলে কি রবীন্দ্রনাথের মতো চিরপ্রেমিক এক মহামানবের হাত ধরেই তাঁদের প্রেমে ফেরা? ফিরে এল বন্ধুত্ব, মধুর সম্পর্ক...। বাবুল থামাচ্ছেন। “দয়া করে গুজবে কান দেবেন না। আমরা বন্ধু, অনেক দিন ধরে অনেক গান গেয়েছি। কেমিস্ট্রি ফাটাফাটি, অনেক প্লে-ব্যাক, অনেক স্টেজ শো, কিন্তু ব্যাস,” একগাল হেসে ওখানেই দাঁড়ি টেনে দিচ্ছেন বাবুল। আর সদ্য আমেরিকা থেকে ফেরা অলকার বক্তব্য, “একটা কমফর্ট লেভেল আছে কাজের ক্ষেত্রে, প্রফেশনাল করডিয়াল রিলেশন। সেটার জন্য একসঙ্গে গান গাইতে খুব সুবিধে হয় দু’জনের। এর বাইরে বাকি সব রটনা।”
তবুও তো অলকাকেই বাছলেন বাবুল এই রবীন্দ্র অ্যালবামে সুর-সঙ্গী হিসেবে।
তা হলে?
“সে তো একেবারেই অন্য কারণে,” বলছেন বাবুল, “এটা হবে বাবুল সুপ্রিয়-অলকা যাজ্ঞিক হিট জুটির কামব্যাক। তার জন্য রবীন্দ্রসঙ্গীত ছাড়া ভাল পথ আর কী-ই বা হতে পারে? তা ছাড়া অলকা কলকাতায় পড়াশোনা করেছে, বড় হয়েছে। পরিষ্কার বাংলা বলে। অথচ এখনও রবীন্দ্রসঙ্গীতের অ্যালবাম করেনি, একটা রবীন্দ্রসঙ্গীত রেকর্ড পর্যন্ত করেনি।”
আর অলকা? তিনি কী বলছেন? “ছোটবেলা থেকে রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়েছি। ইচ্ছে ছিল, রবীন্দ্রসঙ্গীতের অ্যালবাম করব। কিন্তু নানা কাজের ফাঁকে করছি করব করে করা হচ্ছিল না। বাবুল আর আশা অডিও-র জন্য অনেক দিনের সেই স্বপ্নটা পূরণ হয়ে গেল,” বলছেন অলকা।
আসলে প্রথমে রেকর্ডিং কোম্পানি চেয়েছিল অলকা একাই অ্যালবামটা করুন। সেই মতোই বাবুলও প্রস্তাবটা রাখেন অলকার কাছে। “তার পর আমাদের দু’জনের কথা হয়। বাবুল ডুয়েট করার অফার দেয়। ফেলতে পারিনি। প্রথম রবীন্দ্রসঙ্গীত গাওয়ার আর অ্যালবাম করার হাতছানি তো ছিলই,” বলছেন অলকা। তবু এই কথায় কোথায় যেন পুরনো বন্ধুর, পুরনো সঙ্গীর সঙ্গে আবার একসঙ্গে ফেরার আমন্ত্রণকে দু’হাতে আঁকড়ে ধরার আকুলতাও থেকে যায়। মুখে যাই বলুন না কেন তাঁরা।
রক, জীবনমুখী, ব্যান্ডের শহুরে নাগরিক প্রেমের গান-দুনিয়ায় বাবুল-অলকার রবীন্দ্রসঙ্গীতের অ্যালবাম তাই অনেকটা যেন বনেদি মিষ্টি প্রেমের তুলির টান। এসএমএস, ই-মেল নয়, এ যেন ষোলো আনা বাঙালি প্রেমপত্রের সাবেকিয়ানা, সঙ্গে আধুনিকতার চালচিত্র।
কী রকম আধুনিকতা? বিশ্বভারতীর চোখরাঙানি নেই বলে কি সুবিধা হচ্ছে নতুন ভাবে রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন করতে?
তেমনটা একেবারেই মানছেন না বাবুল, “পরীক্ষা আমিও করেছি রবীন্দ্রসঙ্গীত নিয়ে, কিন্তু তা কখনওই মাত্রাতিরিক্ত নয়। রবীন্দ্রসঙ্গীতকে রোম্যান্টিক ভাবে পরিবেশন করতে চেয়েছি। আর নিয়মকানুন বা আইন তো অপরাধীদের জন্য প্রযোজ্য। আমি অপরাধী নই, কারণ আমার আইন ভাঙার কোনও ইচ্ছেই নেই। নির্মলচন্দ্র বড়ালের নাতি হয়ে রবীন্দ্রসঙ্গীতকে বিকৃত করার কোনও দুরভিসন্ধি নেই।”
অলকাও বললেন, সাউন্ড নিয়ে, মিউজিক নিয়ে বা অ্যারেঞ্জমেন্ট নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন তাঁরা দু’জন। “কিন্তু মাথায় রেখেছি, রবীন্দ্রনাথের তৈরি স্বরলিপির বা সুরের বিকৃতি যেন না ঘটে। শুধু তাকে যুগোপযোগী আর আধুনিক করে তুলেছি। রবীন্দ্রসঙ্গীতকে ওয়ার্ল্ড মিউজিকের স্তরে নিয়ে যাওয়াই আমাদের লক্ষ্য।”
আগের দু’টো অ্যালবামের মতোই ‘মনে রবে’র অ্যারেঞ্জমেন্ট, মিক্সিং অন্য রকম ভাবে করছেন বাবুল। বন্ধুর প্রশংসায় পঞ্চমুখ অলকাও। “সাউন্ডের দায়িত্ব পুরো বাবুলের। ওর আগের দু’টো অ্যালবামের সাফল্যই প্রমাণ করেছে ও এই জায়গায় কতটা দক্ষ। অ্যালবামে তাই বাবুলের নাম থাকছে অর্কেস্ট্রেশন অ্যারেঞ্জার হিসেবেও,” বলছেন তিনি।
একের সঙ্গে আরেক জনের এখানেই যেন মনের মিল। একে যেন এ ভাবেই অপরের পরিপূরক। আবার নির্ভরশীলও। রবীন্দ্রনাথের রোম্যান্টিক গানের হাত ধরে এ ভাবেই তাঁদের আবার পাশাপাশি আসা। প্রেম থাকুক আর না থাকুক, বন্ধুত্বের মিষ্টি আবরণের ওম গায়ে মেখে বাবুল আর অলকা তাই সেই রোম্যান্টিক জুটিই। আবারও।
Previous Item Patrika Next Item


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.