আপনার সাহায্যে...
ত্রুটি যখন পুরুষেরও
ঘটনা এক: স্কুলজীবনে বন্ধুত্ব। চুটিয়ে প্রেম। কলেজ, ইউনিভার্সিটি, চাকরি পেরিয়ে দীর্ঘ দিন বাদে পরিণতি পেয়েছিল রৌণক-রূপাঞ্জনার সম্পর্ক। বিয়ের বছর ঘুরতে না ঘুরতে আভাস মিলল রূপাঞ্জনার পক্ষে মা হওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু সমস্যাটা আসলে রৌণকের। তার পরেও বছর খানেক চেষ্টা, মন কষাকষি, অবিশ্বাস। তিক্ততা এমন পর্যায়ে পৌঁছল যার সমাধান দাঁড়াল বিচ্ছেদে।
ঘটনা দুই: দক্ষিণ কলকাতার নামী কলেজের ছাত্রী প্রিয়জা। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। হঠাৎই লিউকেমিয়া ধরা পড়ে প্রিয়জার। ফার্স্ট স্টেজ।
কেমোথেরাপিতে নষ্ট হয়ে গেল ডিম্বাশয় দু’টি। ক্যানসার সামলে উঠে সম্পূর্ণ সুস্থ হলেও ভবিষ্যৎ বড় প্রশ্নচিহ্নের মুখোমুখি। কারণ, সন্তান আসবে না।
ঘটনা তিন: বিয়ের পরে ডিম্বাশয়ে সিস্ট ধরা পড়েছিল মধুছন্দার। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের পরামর্শে অপারেশন। তার পর দশটি বছর কেটে গেলেও মা হতে পারেননি মধুছন্দা। কারণ, অপারেশনের পর তাঁর ডিম্বনালি দু’টি বন্ধ হয়ে যায়।

একটু ভাল করে নজর করলেই রূপাঞ্জনা, প্রিয়জা বা মধুছন্দার ঘটনা আমাদের আশেপাশে কিছু না কিছু খুঁজে পাওয়া যাবে। তবে এ সব বিংশ শতাব্দীর সমস্যা। একবিংশ শতাব্দী কিন্তু বলছে অন্য কথা। “বন্ধ্যত্ব থাকতেই পারে। আবার অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, সমস্যাটি পুরুষের। অতীতে তাঁরা ‘ইগো-প্রবলেমের’ জন্য চিকিৎসা তো দূরে থাক, পরীক্ষানিরীক্ষার পথেই হাঁটতেন না। বর্তমানে তাঁরা জানেন মেয়েদের মতো ছেলেদের কারণেও বন্ধ্যত্ব আসতে পারে। কিন্তু কোনও সমস্যাই আর সন্তান জন্মানোর পক্ষে অন্তরায় নয়। বন্ধ্যত্বের প্রাচীর পেরিয়ে সন্তানকে নিয়ে আসা সম্ভব। দরকার উপযুক্ত সময়ে সঠিক চিকিৎসা,” বলছেন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. গৌতম খাস্তগীর।
বন্ধ্যত্বের অন্যতম চিকিৎসা নলজাতক শিশু। পৃথিবীর প্রথম নলজাতক লুইজি ব্রাউনের জন্মের পর কেটে গেছে বত্রিশটি বছর। মাঝের এই সময়টিতে নলজাতক পদ্ধতি ছাড়াও উঠে এসেছে বন্ধ্যত্বের অনেক নতুন নতুন চিকিৎসা। যদিও কৃত্রিম পদ্ধতি সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা এখনও স্পষ্ট নয়। অনেকেই ব্যাপারটাকে বাঁকা চোখে দেখেন। মনে করেন, এরা বুঝি নলের ভিতরে জন্মায়, কাচের ঘরে রেখে দিতে হয়, আর ওই শিশুরা অস্বাভাবিকও হয় ইত্যাদি। এত সব জল্পনা-কল্পনার আড়ালে লুইসি ব্রাউন কিন্তু জন্ম দিয়ে ফেলেছেন দু’টি সন্তানের। স্বাভাবিক পদ্ধতিতেই। আর পৃথিবীর নানা প্রান্তে ইতিমধ্যে কয়েক কোটি শিশু জন্মেছে কৃত্রিম পদ্ধতিতেই।
আধুনিক চিকিৎসা
বন্ধ্যত্বের আধুনিক চিকিৎসা অনেক সহজ। এক সময় ডিম্বাশয় না থাকলে সেটি প্রতিস্থাপনের চেষ্টা করা হত। যা কিনা অত্যন্ত জটিল ও ব্যয়বহুল। এখন অন্যের কাছ থেকে ডিম্বাণু ধার করে স্বামীর শুক্রাণুর সঙ্গে মিলন ঘটিয়ে ভ্রূণ তৈরি করা হচ্ছে। সেটিই রোপণ করা হচ্ছে মায়ের জরায়ুতে।
আবার হয়তো ডিম তৈরি হচ্ছে, কিন্তু ডিম্বনালির রাস্তা আটকে থাকায় শুক্রাণু ডিম্বাণুর মিলন ঘটতে পারছে না। সে ক্ষেত্রে আলট্রাসোনোগ্রাফির মাধ্যমে সহজেই ডিমকে বের করে এনে বাইরে স্বামীর শুক্রাণু দিয়ে ডিমটিকে নিষিক্ত করা হয়। পরে ভ্রূণকে সরাসরি জরায়ুতে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। কৃত্রিম পদ্ধতিতে একবারে অনেকগুলো ভ্রূণ তৈরি করা হয়। যার মধ্যে দু’-তিনটি ব্যবহার করে বাকিগুলো ব্যাঙ্কে গচ্ছিত রেখে দেওয়া হয়, যা কিনা দ্বিতীয় বার মা হওয়ার জন্য ব্যবহার করা যায়। নতুন করে ভ্রূণ তৈরির দরকার পড়ে না। খরচ অনেকটাই কমে যায়। মজার ব্যাপার হল, এ ক্ষেত্রে দু’টি বাচ্চার বয়স আলাদা কিন্তু তারা আদতে যমজ।
লিউকেমিয়া বা অন্য কোনও ক্যানসারের জন্য যদি কেমো দেওয়া হয় তবে ডিম্বাশয় নষ্ট হয়ে যেতে পারে। সে রকম হলে ডিম্বাশয়কে আগে শরীরের বাইরে বের করে সংরক্ষিত রাখা হয়। পরবর্তী কালে মেয়েটি বাচ্চা নিতে চাইলে সেই ডিম্বাশয়কেই পুনরায় প্রতিস্থাপন করে দেওয়া হয়। কৃত্রিম নয়, মেয়েটি সন্তানের জন্ম দিতে পারেন স্বাভাবিক ভাবেই।

সমাধান আছে পুরুষদেরও
পুরুষদের শুক্রাণুর সংখ্যা কম বা একেবারে না-ও থাকতে পারে। না থাকলে অন্যের কাছ থেকে শুক্রাণু ধার করা ছাড়া উপায় নেই। আর শুক্রাণু কম থাকলে সেই শুক্রাণুকে সরাসরি ডিম্বাণুর ভিতর ইঞ্জেকশন দিয়ে ঢুকিয়ে ভ্রূণ তৈরি করা সম্ভব। অনেক সময় শুক্রাণু বেরোতে পারে না। সে ক্ষেত্রে বাইপাস করে অন্য পথ দিয়ে শুক্রাণুকে বের করে আনা হয়। সন্তান জন্মানোর জন্য যেখানে পুরুষদের কয়েক লক্ষ শুক্রাণুর প্রয়োজন হয়, সেখানে মাত্র ১০টি শুক্রাণু থাকলেই আধুনিক চিকিৎসার সাহায্যে ভ্রূণ তৈরি করা যাচ্ছে।

ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত
সন্তান জন্মালেই তো হল না, সুস্থ সন্তান জন্ম দেওয়াই বড় কথা। অনেক সময় বিকলাঙ্গ শিশু জন্মায়। আবার এমন কিছু জিনঘটিত অসুখ আছে, যাতে অল্প বয়সেই সন্তান মারা যেতে পারে। কৃত্রিম পদ্ধতিতে ভ্রূণকেও পরীক্ষা করে দেখে নেওয়া হয় সন্তানের ভবিষ্যতে এমন কোনও সমস্যা হতে পারে কি না। পরে শুধুমাত্র সুস্থ ভ্রূণকেই জরায়ুতে প্রবেশ করানো হয়। ফলে হবু সন্তানকে কঠিন জিনঘটিত অসুখ থেকে দূরে রাখা যায়।
যোগাযোগ-৯৮৩০৬৬৬৬০৬
এবং ৯৮০৪৮৮৮৮০৮
Previous Item Patrika Next Item


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.