|
|
|
|
সম্পাদকীয় ২... |
স্মরণের ছলে |
এই বৎসর অগস্টের তুল্য মাস নাই। অন্তত, অবসরপ্রিয় সরকারি কর্মচারীদের নিকট। বৎসরের গোড়ায় নূতন ক্যালেন্ডার পাইয়াই দেখা গিয়াছিল, স্বাধীনতা দিবস সোমবার পড়িয়াছে। অতএব, তিন দিনের টানা ছুটি। ইংরাজি ক্যালেন্ডারে ২২ শ্রাবণ দেখিবার উপায় নাই। সেই সোমবারটিও যে ছুটির দিন হইবে, বৎসরের গোড়ায় বুঝিবার উপায়ও তখন ছিল না। মুখ্যমন্ত্রী জানাইয়াছেন, কবির সার্ধশতবর্ষ উপলক্ষে ২২ শ্রাবণ সরকারি ছুটি। অতএব, স্বাধীনতা দিবসের দীর্ঘায়িত এবং বহুপ্রতীক্ষিত ‘উইক এন্ড’-এর পূর্বেই আরও এক দফা ছুটি। সেই অবসরে মানুষের জীবনে রবীন্দ্রনাথ কতখানি উপস্থিত থাকিবেন, সেই প্রসঙ্গটি উল্লেখ না করাই শ্রেয়। গাঁধীজয়ন্তীতে যেমন মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীর উল্লেখমাত্র না করিয়াই সাধারণ মানুষের দিন কাটিয়া যায়, রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুদিনও তেমনই রবীন্দ্রহীন থাকিবে। বস্তুত, যাঁহারা রবীন্দ্রনাথকে স্মরণ করেন, রবীন্দ্রনাথ যাঁহাদের প্রাত্যহিকতার অঙ্গ, তাঁহারা কোনও বিশেষ দিনের ছুটির অপেক্ষায় থাকেন না। আর, রবীন্দ্রনাথ যাঁহাদের জীবনে নাই, এক দিনের সরকারি ছুটি তাঁহাদের রবীন্দ্রসান্নিধ্যে আনিতে পারিবে না। ছুটির দিনটি নিছক ছুটির দিন হইয়াই থাকিবে, হয়তো দিঘার হোটেলে ব্যবসা বাড়িবে। অতএব, যে উদ্দেশ্যে এই ছুটি ঘোষণা, তাহার ব্যর্থতা প্রশ্নাতীত। তাহা হইলে এই ছুটি কেন? সন্দেহ হয়, কর্তারা সরকারি ছুটি ঘোষণাকেই সম্মান প্রদর্শনের চরম বোধ করেন। কথাটি শুধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বর্তমান ঘোষণাটির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নহে। অভ্যাসটি ভারতে সর্বজনীন এবং সর্বাত্মক। এই অভ্যাসের মূল সম্ভবত ভারতীয় চরিত্রের গভীরে প্রোথিত। যে কোনও অজুহাতে ছুটি আদায় করিয়া লওয়ার প্রবণতাটিও সেই চরিত্রের অন্তর্গত। ইহাই ভারতীয় সমাজের স্বভাব। তবে, স্ব-ভাব মাত্রেই যে অপরিবর্তনীয়, তাহা নহে। বস্তুত, চেতনা যদি জাগ্রত হয়, তবে যে স্ব-ভাব ক্ষতিকর, তাহার পরিবর্তনসাধনই প্রথম কর্তব্য হিসাবে বিবেচিত হইবার কথা। প্রশ্ন হইল, সমাজের চেতনা জাগ্রত হইবে কী উপায়ে? যাঁহারা সমাজের কর্তা, অভিভাবক দায়িত্বটি তাঁহাদের। প্রথমে বুঝিতে হইবে, ছুটি লইবার এই প্রবণতাটি মারাত্মক, আত্মঘাতী। তাহার পর সচেতন ভাবে সেই প্রবণতা হইতে সরিয়া আসিতে হইবে। অক্টোবর মাসের দুই তারিখ যদি ছুটি না থাকে, তাহাতে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠিবে। সেই প্রশ্নের সদুত্তর দেওয়া নেতাদের কর্তব্য। কিন্তু, সেই উত্তর দেওয়ার ভয়ে ছুটি চালাইয়া যাওয়া চলিবে না। অভিজ্ঞতা বলিতেছে, কথায় যদি যুক্তি থাকে, সাধারণ মানুষ সেই যুক্তি মানিয়া লন। কিন্তু, সেই যুক্তিটি স্পষ্ট ভাবে পেশ করা প্রয়োজন। সাম্প্রতিকতম ছুটির কথাই ভাবা যাউক। যাঁহার মৃত্যুদিনে এই ছুটি, সেই মানুষটি সারা জীবন ছুটির ফাঁদকে এড়াইয়া চলিয়াছেন। গভীরতম দুঃখ, এমনকী সন্তানের মৃত্যুও তাঁহাকে এক দিনের জন্য কর্তব্য হইতে চ্যুত করিতে পারে নাই। তাঁহাকে স্মরণ করিবার ছলে যদি আরও একটি ছুটির ব্যবস্থা করা হয়, তবে তাহা তাঁহার স্মৃতির প্রতি অপমান। নেতারা এই কথাটি বুঝিলেই মঙ্গল। |
|
|
|
|
|