|
|
|
|
সম্পাদকীয় ১... |
অবশেষে |
অবশেষে কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী বি এস ইয়েদুরাপ্পা পদত্যাগে সম্মত হইয়াছেন। আকরিক লৌহের বেআইনি নিষ্কাশন ও রফতানি কেলেঙ্কারিতে তাঁহার জড়িত থাকার অভিযোগ সংবলিত লোকায়ুক্তের রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পরেই দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের চাপে তাঁহার এই সম্মতি। তিনি যে আদৌ ইস্তফা দিতে রাজি ছিলেন না, আগামী দুই বছর পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রিত্বে বহাল থাকার প্রতিজ্ঞাতেই তাহা স্পষ্ট ছিল। কিন্তু দুর্নীতির অভিযোগের মাত্রা এমনই পাহাড়প্রমাণ, দলের একাধিক মন্ত্রী, নিজের আত্মীয়স্বজন ও স্নেহধন্য রেড্ডি ভ্রাতাদের তাহাতে জড়িত থাকার অভিযোগ এতই প্রামাণ্য যে বিজেপি নেতৃত্বের পক্ষে ইয়েদুরাপ্পাকে মুখ্যমন্ত্রী রাখিয়া ইউ পি এ সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে আন্দোলন করা আত্মঘাতী হইত। নিজেরা কাচের ঘরে বাস করিয়া অন্যকে লক্ষ করিয়া ঢিল ছোড়া বিচক্ষণতার কাজ নয়। তাই ইয়েদুরাপ্পাকে শেষ পর্যন্ত যাইতেই হইতেছে। কিন্তু যাওয়ার আগে না-যাওয়ার যে জিদ তিনি ধরিয়াছিলেন, তাহা তাঁহার বিদায়লগ্নকে তিক্ত করিয়া তুলিল।
এই সব ক্ষেত্রে দুর্নীতি বা আর্থিক অনিয়মের গুরুতর ও প্রামাণ্য অভিযোগ ওঠামাত্র অভিযুক্তের উচিত স্বপদে ইস্তফা দেওয়া। বিশেষত তিনি যদি মুখ্যমন্ত্রীর মতো সরকারি উচ্চ পদে আসীন রাজনীতিক হন, তবে অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থেই স্বতঃপ্রণোদিত হইয়া সরিয়া দাঁড়ানো তাঁহার কর্তব্য। কেননা মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে তদন্ত-প্রক্রিয়াকে নিজের অনুকূলে প্রভাবিত করা, সাক্ষ্যপ্রমাণ লোপ করিয়া সাক্ষীদের বিরূপ করিয়া তোলার ক্ষমতাও তাঁহার করায়ত্ত থাকে। আরও বড় কথা, নৈতিকতা তাহাই দাবি করে, যে নৈতিকতা আইনের সীমায় সীমিত নহে। ইয়েদুরাপ্পার নিজেরই তাই পদত্যাগ করা উচিত ছিল। তাহা তো তিনি করেনই নাই, উপরন্তু রবিবার পর্যন্ত ইস্তফার জন্য সময় চাহিয়া লইয়াছেন এবং তাঁহার পছন্দের রাজনীতিককেই উত্তরসূরি নিয়োগের প্রতিশ্রুতি দলের কাছে আদায় করিয়া লইয়াছেন। তাহা কি এই জন্য যে, অতঃপর তাঁহার ও তাঁহার স্নেহভাজনদের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া তদন্তের গতিপ্রকৃতি তিনি ক্ষমতায় না-থাকিয়াও নিয়ন্ত্রণ করিতে পারিবেন? প্রশ্নটি অযৌক্তিক বা অসঙ্গত নয়। দলই বা এক জন কলঙ্কিত রাজনীতিকের এমন আবদার মানিয়া লইল কেন? তাহাতে কি দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিজেপির অভিযানের নৈতিকতাই অংশত মলিন হইয়া গেল না? না কি, রাজ্যের লিঙ্গায়ত ভোটারদের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা হইতেই তাহাদের নেতা ইয়েদুরাপ্পাকেও দলীয় নেতৃত্ব প্রশ্রয় দিয়া চলিলেন? সামনেই অবশ্য লোকসভার বাদল অধিবেশন। সেখানে জাতীয় বিরোধী দল হিসাবে বিজেপি টু-জি স্পেকট্রাম, কমনওয়েল্থ কেলেঙ্কারি সহ ইউ পি এ সরকারের অন্যান্য অনিয়মের বিরুদ্ধে মুখর হইবে। লোকপাল বিল পেশ ও তাহা লইয়া বিতর্কও সংসদের অনেক সময় অধিকার করিয়া লইবে। ইয়েদুরাপ্পাকে পদত্যাগ করাইতে পারিয়া বিজেপি নেতৃত্ব রাজনৈতিক ভাবে কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে চলিয়া গেল। এখন দল বলিতে পরিবে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা লইতে তাহারা ইউ পি এ-র মতো দ্বিধা বা বিলম্ব করে না।
ইয়েদুরাপ্পার অপসারণ অবশ্য অর্ধেকটা কাজ, বাকি অর্ধেক হইল আকরিক লোহার বেআইনি উত্তোলন ও রফতানির পূর্ণাঙ্গ তদন্ত এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। ইতিমধ্যেই, মাত্র চার বছরের অনিয়ম অনুসন্ধান করিয়াই, সরকারি কোষাগারের হাজার হাজার কোটি টাকা ক্ষতির হিসাব মিলিয়াছে। এই পরিকল্পিত ও সংগঠিত দুর্নীতিতে যাহারা জড়িত, তাহারা আসলে একটি সংগঠিত অপরাধী-চক্র, মাফিয়ার সহিত যাহার চরিত্রগত প্রভেদ নাই এবং দেশের সম্পদ লুট করিয়া নিজেদের ঐশ্বর্য বৃদ্ধি যাহার লক্ষ্য। মাফিয়া হিসাবেই তাহাদের কাঠগড়ায় তুলিতে হইবে। তবে সে জন্য দরকার নিরপেক্ষ তদন্ত। সুপ্রিম কোর্ট ইতিমধ্যেই কর্নাটকের বেল্লারি জেলায় আকরিক লোহার নিষ্কাশনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করিয়াছে। লোকায়ুক্তের রিপোর্টের ভিত্তিতে সি বি আইয়ের তদন্তও গতিশীল হইবে কি না, তাহাই প্রশ্ন। তাহাতে দাক্ষিণাত্যে ক্ষমতাসীন একমাত্র রাজ্যে বিজেপির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হইয়া উঠিবে কি না, তাহা দলের নিকট গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, দেশের নিকট অপ্রাসঙ্গিক। |
|
|
|
|
|