|
|
|
|
দখল করা জমি ফেরত দিতে চায় ঢাকা |
কুদ্দুস আফ্রাদ • ঢাকা |
বন্ধুত্বের সম্পর্ককে নতুন মাত্রা দিতে বেআইনি ভাবে দখল করে রাখা ২৬১ একর জমি ভারতকে ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করল বাংলাদেশ।
ভারত দীর্ঘদিন ধরেই মেঘালয় ও অসমে সীমান্ত লাগোয়া এই জমি ফেরত পাওয়ার জন্য দাবি জানিয়ে এসেছে। কিন্তু বাংলাদেশে এর আগে ক্ষমতায় থাকা কোনও সরকারই তাকে গুরুত্ব দেয়নি। শেখ হাসিনা সরকার কিছু দিন আগে প্রতিবেশী দেশের এই দাবি খতিয়ে দেখতে সীমান্ত এলাকায় জরিপের নির্দেশ দেয়। সরকারের এক সূত্র জানিয়েছে, কয়েক মাস ধরে জরিপ চলার পরে দেখা গিয়েছে ভারতের দাবির সারবত্তা রয়েছে। তার পরেই এই জমি ফেরৎ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এলাকার বাসিন্দাদের অবশ্য দাবি, তিন জায়গার মোট ২৬১ একর জমি ভারতকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বিএসএফ ইতিমধ্যেই তাদের দিকের সীমান্ত খুঁটি এগিয়ে এনে এই বাড়তি জমির দখল নিয়েছে। তবে সরকারি ভাবে এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করা হয়নি।
সেপ্টেম্বরে ঢাকায় আসছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। সেই সফরে সাফল্যের ভিত তৈরি করতেই আজ ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম। তাঁর সঙ্গে কাল গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসছেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন। সীমান্ত সুরক্ষায় দু’দেশের রক্ষীদের বোঝাপড়া বাড়াতে একটি চুক্তি হওয়া ছাড়া ইন্দিরা-মুজিব চুক্তির আলোকে ছিটমহল সমস্যা চিরতরে মিটিয়ে ফেলতে আলোচনা হওয়ার কথা দুই মন্ত্রীর। কিন্তু তার আগে ভারতের জমির দখল ছাড়ার প্রক্রিয়া শুরুর বিষয়টি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের তরফে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ।
অসম ও মেঘালয়ে তামাবিল এলাকায় সীমান্তের প্রায় ছয় কিলোমিটার এলাকা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অসন্তোষ রয়েছে দু’দেশের মধ্যে। এ নিয়ে বহু বৈঠক হয়েছে। ভারতের অভিযোগ, ১৯৭১-এর যুদ্ধে ও তার পরে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষীরা তাদের খুঁটি এগিয়ে এনে ভারতের বেশ কিছুটা জমি গায়ের জোরে দখল করে নিয়েছে। ভারত তাদের অভিযোগের প্রমাণ হিসেবে সীমান্তে তাদের দিকের জরিপের রিপোর্ট ঢাকার হাতে তুলে দিলেও বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষীরা এত দিন তাকে আমলই দেয়নি। শেখ হাসিনা সরকার বাংলাদেশে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ককে আরও দৃঢ় করার নীতি নিয়েছে। দেশের মাটি থেকে ভারত-বিরোধী জঙ্গিঘাঁটিগুলি উচ্ছেদে গোপনে অভিযান চালানো ছাড়াও গোপনে বেশ কয়েক জন জঙ্গি নেতাকে বিএসএফের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে মাত্র ছয় কিলোমিটার সীমান্ত নিয়ে এত দিনের বিরোধ মিটিয়ে ফেলার সিদ্ধান্তও নেয় সরকার। ভারতের দাবির সত্যতা খতিয়ে দেখতে জরিপের নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই জরিপেই দেখা যায়, সত্যিই ভারতের বেশ কিছুটা জমি বাংলাদেশের দখলে রয়েছে। তামাবিলে ১২৭০-৭১ নম্বর সীমান্ত খুঁটি লাগোয়া ২২০ একর, নলজুড়ি সীমান্তে ১২৭৭-৭৯ নম্বর খুঁটির কাছে ৩৩ একর ও লিঙ্কহাট সীমান্তে ১২৬৩-৬৭ খুঁটির কাছে ৮ একর এমন জমি বাংলাদেশের দখলে রয়েছে, মানচিত্র অনুযায়ী যার মালিকানা ভারতের। এর পরেই বাংলাদেশ সরকার এই জমি ভারতের হাতে তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে। জরিপ দলের এক সদস্য জানিয়েছেন, জাফলংয়ের কাছে তামাবিল ও নলজুড়ির এই এলাকায় ভারত-বিরোধী রাজনীতি যথেষ্ট প্রকট। জরিপের কাজ শুরু করার পর থেকেই সেখানে উত্তেজন্য তৈরি হয়েছে। সম্ভবত সেই বিষয়টি বিবেচনা করেই জমি ফেরত দেওয়ার এই প্রক্রিয়াটি নিয়ে গোপনীয়তা বজায় রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। স্থানীয় বাসিন্দাদের অবশ্য দাবি, বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষীরা খুঁটি সরিয়ে নেওয়ার পরে বিএসএফ ইতিমধ্যেই খুঁটি এগিয়ে এনে এই জমির দখল নিয়েছে। কিন্তু সরকারি ভাবে এই কথা স্বীকার করেনি। |
|
|
|
|
|