সময় মেনে কাজ করতে ছয় থানায় ‘সেবোত্তম’
বই ঘড়ির কাঁটা ধরে।
এফআইআর নেওয়া থেকে ঘটনাস্থলে পৌঁছনো, অপরাধীকে গ্রেফতার করে চার্জশিট পেশ, এমনকী নিখোঁজের সন্ধানও পেতে হবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে।
সব রাজ্যের পুলিশে এমনই ‘সেবা প্রকল্প’ চালুর নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। রাজ্যের এক পুলিশকর্তা বলেন, “প্রকল্পের নাম ‘সেবোত্তম’, অর্থাৎ উত্তম সেবা। কী ভাবে, কত তাড়াতাড়ি সাধারণ মানুষকে পুলিশ সহায়তা দিতে পারে, সেটাই লক্ষ্য ওই প্রকল্পের। এবং তার জন্যই থানার সমস্ত কাজের সময় বেঁধে দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।” যেমন, আধ ঘণ্টার মধ্যে থানার পুলিশকে নিখোঁজ সংক্রান্ত তথ্য সিআইডি এবং জেলা মিসিং পার্সনস ব্যুরোকে জানাতে হবে, অস্ত্র লাইসেন্স দেওয়ার তদন্ত সেরে ফেলতে হবে ১০ দিনের মধ্যে।
কেন্দ্রের নির্দেশ মেনে এ পর্যন্ত কেবল হরিয়ানায় মাস ছয়েক আগে চারটি থানায় ওই প্রকল্প চালু হয়েছে। তাতে বেশ সুফল মিলেছে বলেও রাজ্যের পুলিশকর্তারা জানতে পেরেছেন। কী ভাবে হরিয়ানা কাজ করছে, তা দেখতে রাজ্যের পুলিশকর্তারা সেখানে যাবেন বলে মহাকরণে সম্প্রতি এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। অবশ্য তার আগেই ‘হরিয়ানা মডেল’কে সামনে রেখে আগামী ১ অগস্ট এই রাজ্যের ছ’টি থানায় ওই সেবা প্রকল্প চালু করছে পুলিশ। সেগুলি হল, শিলিগুড়ি, রায়গঞ্জ, দুর্গাপুর, খড়্গপুর, বরাহনগর ও বিধানগর (উত্তর)।
রাজ্য পুলিশ সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে একেবারে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর্যায়েই ওই প্রকল্প চালু হচ্ছে। প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত একাধিক পুলিশকর্তা মেনে নিয়েছেন, কেন্দ্রের নির্দেশিকা ধরে সাধারণ মানুষকে চটজলদি ‘সেবা’ দিতে যে লোকবল ও পরিকাঠামো প্রয়োজন, রাজ্যের কোনও থানাতেই তা নেই। ফলে অচিরেই তা মুখ থুবড়ে পড়তে পারে। এক পুলিশকর্তা বলেন, “বর্তমান পরিকাঠামোয় সময় ধরে কাজ করা যে নিতান্তই অসম্ভব, সেটা বিলক্ষণ জানি। কিন্তু কাজ শুরু না করলে বোঝা যাবে না, প্রকল্প সফল করার পথে কোথায় কতটা খামতি রয়েছে।”
মহাকরণের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সময়সীমা ধরে কাজ করতে গিয়ে কী কী অসুবিধার মুখোমুখি হতে হচ্ছে, ওই ছ’টি থানার ওসি মামলা ধরে ধরে সেগুলি লিখে রাখবেন। এক মাস পরে ফের বৈঠক হবে। সেখানে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে এবং ওই প্রকল্পে থানার পরিকাঠামোগত উন্নতিতে যা টাকা লাগবে, তা কেন্দ্রের কাছে চেয়ে পাঠাবে রাজ্য পুলিশ।
পুলিশকর্তারা মানছেন, গত বছর তিনেক ধরে নিয়োগ বন্ধ থাকায় অধিকাংশ থানায় লোকাভাব যে ভাবে বেড়েছে, তাতে পরিকাঠামোর উন্নতি হলেও সাধারণ মানুষকে চটজলদি ‘সেবা’ দেওয়া কার্যত অসম্ভব। স্বরাষ্ট্র দফতরের হিসেব অনুযায়ী, বর্তমানে প্রায় ১৫,০০০ শূন্য পদ রয়েছে পুলিশে। এবং থানার মূল কাজ, তদন্তের দায়িত্ব যাদের উপরে, সেই সাব-ইনস্পেক্টরের সংখ্যাও যা থাকার কথা তার চেয়ে ১৮০০ কম। পুলিশের হিসেবে রাজ্যের থানাগুলিতে প্রায় ৭০০০ কনস্টেবল কম। অথচ নিত্যদিনের আইন-শৃঙ্খলা ও থানার রুটিন কাজ সামলান তাঁরাই।
প্রস্তাবিত ছ’টি ‘সেবোত্তম’ থানাতেও একই অবস্থাও। যেমন, বরাহনগর থানায় সব মিলিয়ে ৭০ জন পুলিশকর্মী থাকা উচিত, রয়েছেন ৫২ জন। গাড়ির অবস্থাও তথৈবচ। তিনটি মাত্র গাড়ি, দু’টি মোটরবাইক এবং তাই দিয়েই সাড়ে সাত বর্গ কিলোমিটার এলাকার দায়িত্ব সামলাতে হয়। দুর্গাপুর থানার অবস্থা আরও খারাপ। পুলিশকর্মীর সংখ্যা এতই কম যে প্রাত্যহিক কাজ করাই দায়।
রাজ্যের অনেক গুরুত্বপূর্ণ তদন্ত যেখানে আটকে আছে, সেই ফরেন্সিক গবেষণাগারের দিকে আঙুল তুলছেন পুলিশের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, ফরেন্সিক রিপোর্ট হাতে পেতে মাসের পর মাস গড়িয়ে যায়। এমনকী, ময়না-তদন্তের রিপোর্টও সময় মতো পাওয়া যায় না। ওই দু’টি বিভাগ স্বাস্থ্য দফতরের অধীনে থাকায় তাগাদা দেওয়া ছাড়া আর কিছু করার থাকে না। আর সেই কারণে সময় ধরে তদন্ত শেষ করা অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন তাঁরা।
First Page Rajya Next Story


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.