|
|
|
|
ট্রেজারির ৩ কর্মীর বিরুদ্ধে এফআইআর-এর সিদ্ধান্ত |
নিজস্ব সংবাদদাতা • রঘুনাথপুর ও পুরুলিয়া |
স্বাস্থ্য দফতরের বিল ‘জালিয়াতি’-র ঘটনায় রঘুনাথপুর মহকুমাশাসকের কার্যালয়ের তিন কর্মীর বিরুদ্ধে এফআইআর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার জেলাশাসক অবনীন্দ্র সিংহ বলেন, “ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার পরে মহকুমা কার্যালয়ের ট্রেজারি অফিসের এক পদস্থ অফিসার এবং দুই কর্মীর বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে এফআইআর করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেই সিদ্ধান্তের কথা মহকুমাশাসককে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
বিল-জালিয়াতি কাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ইতিমধ্যেই ওই ট্রেজারি বিভাগের দুই কর্মী আনন্দকুমার ফৌজদার ও শিবশঙ্কর পাঠককে সাসপেন্ড করেছেন জেলাশাসক। প্রসঙ্গত, জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কার্যালয়ের অ্যাকাউন্টস অফিসারের সই নকল করে তৈরি হয়েছিল তহবিল মঞ্জুরের নির্দেশ। সেই ‘ভুয়ো’ তহবিলের ভিত্তিতে রক্ষণাবেক্ষণ ও সাফাইকাজের মোট ২৪টি ‘জাল’ বিল তৈরি করা হয়েছে স্বাস্থ্য দফতরের তরফে। রঘুনাথপুর মহকুমার ছ’টি ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, মহকুমা হাসপাতাল এবং অতিরিক্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কার্যালয়ে রক্ষণাবেক্ষণ ও সাফাই কাজ হয়েছে দেখিয়ে ওই ২৪টি ‘জাল’ বিল পাঠানো হয় ট্রেজারিতে। সেই বিলের টাকা মেটানোর জন্য ট্রেজারি অফিস থেকে তৈরি হয়ে গিয়েছিল সাড়ে পাঁচ লক্ষ টাকার চেকও।
একেবারে শেষ মুহূর্তে চেকের উপরে ট্রেজারি অফিসার সই করতে গিয়ে জালিয়াতির ঘটনা ধরে ফেলেন। এর পরেই তদন্তে নামে প্রশাসন। সেটা এ মাসের মাঝামাঝির ঘটনা। দুই কর্মীকে সাসপেন্ড করা ছাড়া অবশ্য এত দিনে তদন্তে বিশেষ কোনও অগ্রগতি হয়নি। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানান, তদন্তে যে তথ্য মিলেছে, তাতে স্পষ্ট এই জালিয়াতিতে প্রত্যক্ষ যোগ রয়েছে স্বাস্থ্য দফতরের কিছু কর্মীর। পাশাপাশি বাইরে থেকেও একটি সংগঠিত চক্র কাজ করেছে। যেহেতু এই জালিয়াতিতে দফতরগুলির আধিকারিকদের স্ট্যাম্প ও প্যাডের নকল ব্যবহার করা হয়েছে, তাই এই ঘটনায় ছাপাখানার জড়িত থাকার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছে না প্রশাসন। জেলাশাসক এ দিন বলেছেন, “এই ঘটনায় আরও কারা কারা জড়িত, সেই দিকটি পুলিশ খতিয়ে দেখবে।”
প্রশাসন সূত্রের খবর, তহবিল মঞ্জুরের ‘ভুয়ো’ নির্দেশ থেকে ভুয়ো কাজ (রক্ষণাবেক্ষণ ও সাফাই) দেখিয়ে ২৪টি জাল বিল তৈরি করাএই গোটা প্রক্রিয়ার সঙ্গে স্বাস্থ্য দফতরের একাধিক বিভাগ জড়িয়ে আছে। কারণ ওই জাল বিলগুলির সঙ্গে যে-সব কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়েছিল, তাতে দেখা যাচ্ছে ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলি থেকে শুরু করে মহকুমা হাসপাতাল ও অতিরিক্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কার্যালয়ে রক্ষণাবেক্ষণ ও সাফাই কাজ সরাসরি করিয়েছিল সংশ্লিষ্ট দফতরগুলিই। অথচ সাধারণ ভাবে এই সব কাজ ঠিকাদার নিয়োগ করে করানোটাই নিয়ম। এর ফলে প্রশাসন মনে করছে, ওই দফতরগুলির যে-সব কর্মী বিল তৈরি করেন, তাঁদের একাংশ জড়িত না থাকলে এত বড় মাপের জালিয়াতি ঘটানো সম্ভব নয়।
পাশাপাশি বিলের সঙ্গে জমা দেওয়া নথিপত্রে আরও গরমিল ধরা পড়েছে। প্রায় সাড়ে পাঁচ লক্ষ টাকার ওই বিলের পুরোটাই দেখানো হয়েছিল রক্ষণাবেক্ষণ ও সাফাই কাজে নিযুক্ত শ্রমিকদের মজুরি বাবদ অর্থ মেটানোর জন্য। নিয়ম অনুয়ারে, নথিতে (পেমেন্ট সার্টিফিকেট) শ্রমিকের নাম, ঠিকানা পুরো উল্লেখ থাকে। কিন্তু জাল বিলের সঙ্গে যে কাগজ জমা পড়েছে, তাতে অনেক ক্ষেত্রেই কেবলমাত্র শ্রমিকের পদবীবিহীন নাম অথবা নাম ছাড়া পদবির উল্লেখ রয়েছে। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের কথায়, “অন্য সব ক্ষেত্রে কার্যত নিখঁত ভাবে জালিয়াতি করলেও শ্রমিকদের নথি তৈরির সময় কাঁচা কাজ করা হয়েছে। ফলে তদন্তের প্রাথমিক পর্বেই জালিয়ারি বিষয়টি ফাঁস হয়েছে।”
প্রশাসন সূত্রের খবর, তদন্তের স্বার্থে ট্রেজারি অফিসারের কম্পিউটারটি ‘লক’ করে দেওয়া হয়েছে। মহকুমাশাসকের নজরদারিতে বিশেষ ‘পাসওয়ার্ড’ দিয়ে সেটিকে ‘লক’ করা হয়েছে। ওই কম্পিউটারে বিল জালিয়াতির বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-প্রমাণ আছে। কলকাতা থেকে বিশেষজ্ঞ দল তদন্তে আসার পরেই কম্পিউটারের ‘লক’ খোলা হবে। সেই দলে কম্পিউটার বিশেষজ্ঞও থাকবেন। |
|
|
|
|
|