এক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নালিশ জানাতে বুধবারই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে এসেছিলেন অন্য গোষ্ঠী। বৃহস্পতিবারই এলাকা দখল নিয়ে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে মৃত্যু হল এক তৃণমূল কর্মীর। আহত হন আরও তিন জন। কয়েকটি বাড়িতে আগুনও লাগানো হয়। ক্যানিংয়ের জীবনতলা থানার কুমিরমারি গ্রামে বৃহস্পতিবার সকালে ওই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
পুলিশ জানিয়েছে, নিহতের নাম নাসিরুদ্দিন মোল্লা (৪০)। এ দিন দু’পক্ষের সংঘর্ষ চলার সময় হঠাৎ নাসিরুদ্দিনের বুকে গুলি লাগে। গুলি লাগে আয়নাল হালদার নামে আর এক তৃণমূল কর্মীর ডান হাতে। এ ছাড়া আব্দুল রহিম মোল্লা ও কুতুবউদ্দিন মোল্লাকে বাঁশ দিয়ে পেটানো হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় চার জনকেই প্রথমে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় নাসিরুদ্দিন ও আয়নালকে কলকাতার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মারা যান নাসিরুদ্দিন। এই ঘটনায় কোনও পক্ষই থানায় অভিযোগ দায়ের করেনি। তবে চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার লক্ষ্মীনারায়ণ মিনা। |
বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই দলীয় সংগঠনে ক্ষমতার গুরুত্বকে কেন্দ্র করে ক্যানিংয়ে তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে গণ্ডগোল শুরু হয়ে যায়। সম্প্রতি তা এতটাই বেড়ে যায় যে, বুধবার কলকাতায় কালীঘাটে তৃণমূল নেত্রীর বাড়িতে নিজের অনুগামীদের নিয়ে হাজির হন ক্যানিং ২ ব্লকের সাধারণ সম্পাদক হাসান মোল্লা। তাঁর অভিযোগ, ব্লক সভাপতি মানিক পাইক তৃণমূল সমর্থকদের হটিয়ে সিপিএম সমর্থকদের দলে নেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন। ফলে ক্যানিংয়ের তৃণমূল কর্মীরা ক্ষুব্ধ। মানিকবাবুর পাল্টা অভিযোগ, সিপিএম ছেড়ে আসা কর্মীদের দলে নেওয়ার জন্য হাসানই তাঁর উপরে চাপ তৈরি করছেন। তৃণমূল নেত্রী বিষয়টি জেলা সম্পাদক শোভন চট্টোপাধ্যায়কে দেখার নির্দেশ দেন।
এ দিনের ঘটনা ওই দুই তৃণমূলের নেতার মধ্যে লড়াইয়েরই ফল বলে ধারণা পুলিশের। যদিও মানিকবাবু এটাকে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বলতে রাজি হননি। তাঁর কথায়, “সিপিএমই পরিকল্পিত ভাবে এই ঘটনা ঘটিয়েছে।” সংঘর্ষে আহত কুতুবউদ্দিন বলেন, “তৃণমূল করার অপরাধে সিপিএমের নুর মহম্মদ মোল্লা ও আয়ুব মোল্লা আমাদের উপরে এই হামলা চালিয়েছে।” কিছুদিন আগে ক্যানিংয়ের সিপিএম নেতা সওকত দল থেকে বহিষ্কৃত হন। নুর মহম্মদ ও আয়ুব তাঁরই লোক বলে তৃণমূলের বক্তব্য। তৃণমূলের রাজ্য কমিটির সদস্য ক্যানিংয়ের স্বপন বৈদ্য বলেন, “সিপিএম থেকে বিতাড়িত কিছু লোক তৃণমূলের ঝান্ডা নিয়ে নিজেদের তৃণমূল কর্মী বলে দাবি করছে। এ দিন তারাই পরিকল্পিত ভাবে তৃণমূলের কর্মীদের উপরে হামলা চালায়। দলের কিছু নেতার প্রশ্রয়েই এটা ঘটছে।”
এ ব্যাপারে তৃণমূলের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক ও কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সংঘর্ষের খবর পেয়েছি। পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। ক্যানিংয়ে দলের সংগঠন নিয়ে কিছু সমস্যা হচ্ছে। বেশ কিছু অভিযোগও পাওয়া গিয়েছে। শীঘ্রই আমরা ব্যবস্থা নেব।” |