|
|
|
|
সম্পাদকীয় ২... |
ঈশ্বরও নাকি সাড়া দেন |
কিন্তু কলিকাতার পুলিশ বোধ করি পুলিশেরও উপরে। সুতরাং বুধবার উত্তর কলিকাতার উল্টাডাঙা এলাকার পুলিশ আবাসন হইতে মাত্র ঢিল-ছোড়া দূরত্বে একটি গৃহে প্রকাশ্য দিবালোকে দুঃসাহসিক ডাকাতি অনুষ্ঠিত হইয়া গেল, যাহাতে পরিবারের নব্বই অতিক্রান্ত এক মহিলার মৃত্যু হইল, কিন্তু ‘১০০’ ডায়াল করা সত্ত্বেও প্রতিবেশীরা পুলিশের জবাব পাইলেন না। গত মাসেই বিধাননগরের এক ঘটনায় নাগরিকদের অনুরূপ অভিজ্ঞতা হইয়াছিল। বুধবার পুলিশ অকুস্থলে আসিয়াছে, তবে যথারীতি ডাকাত পলাইবার পরে। পুলিশ অবশ্য বলিতেছে, ডাকাতিটি নাকি নিতান্তই ‘কাঁচা হাতের কাজ’, তাই তাহারা দ্রুতই অপরাধীদের খুঁজিয়া বাহির করিতে পারিবে। মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন।
নাগরিক আবাসনে ডাকাতির পিছনে অনেক ক্ষেত্রেই গৃহকাজে নিযুক্ত পরিচারক-পরিচারিকাদের যোগসাজশ থাকে। কোথাও ওই যোগসাজশ সূত্রে আবার কোথাও সরাসরি ‘ভিতরের লোক’রাই এই সব ঘটনায় জড়াইয়া পড়ে। উল্টাডাঙার আবাসনটির ক্ষেত্রে ইহার পুনরাবৃত্তি হইয়াছে কিনা, তাহা নিশ্চয় তদন্ত করিয়া দেখা হইবে। পরিচারকদের সচিত্র পরিচয়পত্র থানায় আগাম জমা দিবার সুপরামর্শটি এখনও এ শহরের প্রায় কেহই শিরোধার্য করে না। নাগরিকরা কেন আইনশৃঙ্খলা কর্তৃপক্ষের সহিত সহযোগিতার অভ্যাস গড়িয়া তোলেন না, তাহা বুঝা কঠিন। নিজেদের জীবন ও সম্পত্তির নিরাপত্তার স্বার্থেই যে তাহা করা দরকার, এই বোধোদয় কবে হইবে? নাগরিক সজাগতার অভাব অবশ্য আইনরক্ষকদের দায়কে বিন্দুমাত্র লঘু করিয়া তোলে না। বিশেষত মহানগরের আবাসিক বহুতলগুলিতে নিরাপত্তা জোরালো করার জন্য যে সকল সতর্কতামূলক ব্যবস্থা পুলিশ তালিকাবদ্ধ করিয়াছে, তাহা আবাসিকদের মানিতে চাপ দেওয়াও কিন্তু স্থানীয় পুলিশ কর্তৃপক্ষেরই কাজ। নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশি ব্যর্থতার সবচেয়ে গুরুতর বিষয়টি হইল দুর্গতদের ব্যাকুল প্রার্থনায় সাড়া না-দেওয়া। এ জন্য মহানগরীর বাসিন্দাদের যে জরুরি টেলিফোন নম্বরটি দেওয়া আছে, তাহা ডায়াল করিয়াও কোনও সাহায্য মেলে নাই। বস্তুত অপর প্রান্তে কেহ ফোনটি তোলেনও নাই। ইহা কেবল ডাকাতির শিকার পরিবারটির সদস্যদের অভিযোগ নয়, প্রতিবেশীরাও একই অভিযোগ করিয়াছেন। সাধারণত ডাকাতির সমগ্র অপকর্মটি নিষ্পন্ন করিতে সব মিলাইয়া কিছুটা সময় লাগিয়া যায়। পত্রপাঠ নির্দিষ্ট নম্বরটি ডায়াল করিলে ডাকাতরা কাজ সারিয়া পালাইবার আগেই স্থানীয় থানা হইতে পুলিশ ঘটনাস্থলে হাজির হইতে পারে। উল্টাডাঙায় পুলিশের তরফে যথারীতি সেই সাড়া মেলে নাই। মুখ্যমন্ত্রী (যিনি রাজ্যের পুলিশমন্ত্রীও) এ ব্যাপারে সঙ্গত ভাবেই উদ্বিগ্ন। পুলিশ প্রশাসনকে তিনি নিরাপত্তা আঁটোসাটো করিতে নির্দেশও দিয়াছেন। অপটু এবং শৌখিন ডাকাতরাও যদি এ ভাবে নাগরিকদের উপর তস্করবৃত্তি চালাইতে পারে, তবে সংগঠিত অপরাধচক্র কিংবা আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরকসজ্জিত জঙ্গিরা রাজ্য ও মহানগরীর নিরাপত্তা বন্দোবস্ত কী অনায়াসে ওলটপালট করিয়া দিবে, তাহা ভাবিলেও শিহরিত হইতে হয়। |
|
|
|
|
|