|
|
|
|
প্রধানমন্ত্রীকে লোকপালের বাইরে রেখেই বিল পাশ করল মন্ত্রিসভা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে আজ মনমোহন সিংহ নিজেই জানিয়েছিলেন, তাঁর দফতরকে লোকপালের আওতায় রাখা হলে ব্যক্তিগত ভাবে তাঁর কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু আলোচনার শেষে প্রধানমন্ত্রীকে বাইরে রেখেই লোকপাল বিলের খসড়া অনুমোদন হল। আগামী সোমবার সংসদের বাদল অধিবেশন শুরু হচ্ছে। প্রথম দু’দিনের মধ্যেই এই বিল সংসদে পেশ হবে। যদিও আজই প্রধানমন্ত্রীকে লোকপালের আওতার বাইরে রাখা নিয়ে আপত্তি তুলেছে বিজেপি এবং বাম দলগুলি। বিজেপি-র যুক্তি, জাতীয় সুরক্ষা ও আইনশৃঙ্খলার বিষয় বাদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তের ক্ষমতাও লোকপালকে দেওয়া প্রয়োজন।
তিন মাস আগে আন্না হাজারে যন্তরমন্তরে অনশনে বসায় লোকপাল বিল নিয়ে উদ্যোগী হতে বাধ্য হয়েছিল মনমোহন-সরকার। বিলের খসড়া তৈরির জন্য সরকার পক্ষের লোকেদের সঙ্গে আন্না ও তাঁর সমর্থকদের নিয়ে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু আজ যে খসড়া কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা পাশ করেছে, তাতে ‘টিম আন্না’-র মূল দাবিগুলিই মানা হয়নি। আন্নারা প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি বিচারব্যবস্থার শীর্ষ পদগুলিকেও লোকপালের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে চেয়েছিলেন, সাংসদরা সংসদে অর্থের বদলে ভোট বা বক্তৃতা দিচ্ছেন কি না, তারও তদন্তের ক্ষমতা লোকপালকে দেওয়া হোক। খসড়া বিলে সে সব কিছুই না থাকায় একে ‘আমার সঙ্গে নয়, দেশের সঙ্গে প্রতারণা’ বলে আখ্যা দিয়েছেন আন্না হাজারে। ১৬ অগস্ট থেকে যন্তরমন্তরে ফের অনির্দিষ্ট কালের জন্য অনশনে বসবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী সলমন খুরশিদের অবশ্য বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তিনি লোকপালের আওতায় চলে আসবেন। সেই হিসেবে দেশের সব প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীই লোকপালের আওতায় চলে আসবেন। বিচারব্যবস্থাকে লোকপালের আওতায় বাইরে রাখা নিয়ে সরকারের যুক্তি, বিচারব্যবস্থার মান ও দায়বদ্ধতা বিল নিয়ে এখন সংসদীয় স্থায়ী কমিটি আলোচনা করছে। বাদল অধিবেশনে সেই বিলটিও সংসদে পেশ হবে। একই ভাবে যারা দুর্নীতি প্রকাশ্যে আনছেন, তাঁদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্যও নতুন বিল আনবে কেন্দ্র। |
আন্না খারিজ |
আওতায় নেই প্রধানমন্ত্রীর দফতর |
বিচার ব্যবস্থার দুর্নীতিও বিচার্য নয় |
অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে না সিবিআই |
|
প্রধানমন্ত্রীকে লোকপালের আওতায় আনতে ইউপিএ-সরকার যে রাজি নয়, যৌথ খসড়া কমিটিতে আলোচনার সময়ই তার ইঙ্গিত মিলেছিল। তবে আজ মন্ত্রিসভার বৈঠকে মনমোহন তাঁর দফতরকে লোকপালের আওতায় আনার প্রস্তাব দেন। তথ্য-সম্প্রচারমন্ত্রী অম্বিকা সোনি পরে বলেন, “আমরা সকলে গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কথা শুনেছি। প্রধানমন্ত্রীর দফতরকে লোকপালের আওতায় রাখা হলে সরকারের স্থায়িত্ব এবং তার কর্তৃত্ব দুর্বল হয়ে পড়ার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়।” সরকার পক্ষের বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কেউ মিথ্যা অভিযোগ আনতেই পারে। কিন্তু তখন লোকপাল তদন্ত শুরু হলে প্রধানমন্ত্রীর ইস্তফার দাবি উঠতে পারে। সে ক্ষেত্রে সরকারের স্থায়িত্ব নিয়েই অনিশ্চয়তা তৈরি হবে। সেই আশঙ্কার কথা মাথায় রেখেই প্রধানমন্ত্রীকে লোকপালের আওতার বাইরে রাখার সিদ্ধান্ত হয়।
টু-জি স্পেকট্রাম বণ্টনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সব জানতেন, এ রাজা আদালতে এই দাবি করার পরেই মনমোহনের ইস্তফার দাবিতে সরব হয়েছে বিজেপি। আজ মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তের পরে আক্রমণ আরও জোরদার করেছে তারা। বিজেপি নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদ আজ বলেন, “মনমোহন সিংহের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। কারণ স্বাধীন ভারতে মাত্র দু’জন প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির সাহায্যে আস্থাভোটে জিতে গদি বাঁচিয়েছেন। এক জন নরসিংহ রাও, অন্য জন মনমোহন সিংহ।” লোকপাল বিল স্থায়ী কমিটিতে গেলে সেখানে তাঁরা মতামত জানাবেন বলে জানান রবিশঙ্কর। বামেরাও চান, প্রধানমন্ত্রীকে লোকপালের আওতায় রাখা হোক। আন্না-ঘনিষ্ঠ অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বক্তব্য, এই বিলের ত্রুটিপূর্ণ কাঠামোর উপর দাঁড়িয়ে স্থায়ী কমিটির পক্ষেও কিছু করা সম্ভব নয়।
সরকারি বিল অনুযায়ী, মোট নয় জন সদস্যের লোকপালের চেয়ারপার্সন হবেন সুপ্রিম কোর্টের এক জন কর্মরত বা অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি। বাকি আট সদস্যের অর্ধেককেও বিচারব্যবস্থার মধ্যে থেকেই মনোনীত করা হবে। প্রশাসনিক ক্ষেত্রে ২৫ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তি, যাঁদের বিরুদ্ধে কোনও রকম দুর্নীতির অভিযোগ নেই, তাঁদেরও লোকপালের সদস্য হিসেবে মনোনীত করা হবে। প্রধানমন্ত্রী ছাড়া বাকি সব মন্ত্রী, সাংসদ, শীর্ষ আমলাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত করবে লোকপাল। এর জন্য সরকার বা অন্য কোনও সংস্থার অনুমোদন লাগবে না। দুর্নীতির অভিযোগ দায়ের করার সাত বছরের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে হবে। দুর্নীতির পথে অর্জিত সম্পত্তি ক্রোক করতে পারবে লোকপাল। তবে মামলা দায়ের করে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করার অধিকার লোকপালকে দেওয়া হচ্ছে না। লোকপাল সুপ্রিম কোর্টের কাছে এ বিষয়ে সুপারিশ করতে পারবে। আন্নাদের দাবি ছিল, সিবিআইয়ের দুর্নীতি-দমন শাখাকে লোকপালের অন্তর্ভুক্ত করা হোক। সরকার তা মেনে নেয়নি। তবে সিবিআই লোকপালকে সাহায্য করবে।
আইনমন্ত্রী জানান, লোকপালের চেয়ারপার্সন ও অন্য সদস্যদের বেছে নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি নয় সদস্যদের কমিটি তৈরি হবে। ওই কমিটিতে স্পিকার, লোকসভা ও রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা, এক জন মন্ত্রী ও বিশিষ্ট আইনজ্ঞদের রাখা হবে। লোকপালের সদস্যপদের মেয়াদ হবে পাঁচ বছর। তার আগে লোকপালের বিরুদ্ধেই দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে, তাঁকে অভিযুক্ত করা বা পদচ্যুত করার ক্ষমতা দেওয়া থাকবে রাষ্ট্রপতিকে। সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শের ভিত্তিতে তিনি এই সিদ্ধান্ত নেবেন। সলমন খুরশিদের যুক্তি, “এই বিলে যেমন লোকপালের স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতার দিকটি খেয়াল রাখা হয়েছে, তেমনই লোকপালের প্রভাব যাতে দৈনন্দিন সরকারি ও প্রশাসনিক কাজে না পড়ে, তা-ও মাথায় রাখা হয়েছে। কাউকে লোকপাল থেকে সীমাহীন সুরক্ষা দেওয়া হয়নি। আবার কাউকে বিপদের মুখেও ঠেলে দেওয়া হয়নি।”
সরকারের তরফে যা-ই বলা হোক না কেন, আন্নাদের কিন্তু দাবি, এই বিলে সাধারণ মানুষের জন্য কিছুই নেই। ‘টিম আন্না’-র সদস্য প্রশান্ত ভূষণ বলেন, “সরকার বলছে তারা আগে শীর্ষস্তরের দুর্নীতি মোকাবিলা করতে চায়। কিন্তু আদর্শ আবাসন, কমনওয়েল্থ গেমস, রেড্ডি-ভাইদের অবৈধ খনন, অর্থের বদলে ভোট, তাজ করিডর, কোনও দুর্নীতিরই তদন্ত লোকপালের আওতায় হবে না। তা হলে এই লোকপাল করবেটা কী!” কালই কর্নাটকের লোকায়ুক্ত সন্তোষ হেগড়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির রিপোর্ট জমা দিয়েছেন। যার জেরে আজ ইস্তফা দেওয়ার পথে হাঁটতে হয়েছে ইয়েদুরাপ্পাকে। সেই হেগড়ের মতে, বিলে যথেষ্ট মজবুত লোকপাল তৈরি করা যাবে না। আর কিরণ বেদীর বক্তব্য, কেন্দ্রের পথে হেঁটে এর পর যে সব রাজ্য লোকায়ুক্ত তৈরি করবে, তারাও মুখ্যমন্ত্রীকে লোকপালের আওতায় বাইরে রাখতে চাইবে। |
|
|
|
|
|