|
|
|
|
রায়গঞ্জ পুরসভা: বিরোধী আসনে বসা ঠিক হবে তো |
বিতর্ক তৃণমূলের অন্দরেই |
নিজস্ব সংবাদদাতা • রায়গঞ্জ |
রায়গঞ্জ পুরসভায় ভাইস চেয়ারম্যানের পদ না-মেলায় বিরোধী আসনে বসা ঠিক হবে কি না সেই প্রশ্নে তৃণমূলের অন্দরে মতবিরোধের সৃষ্টি হয়েছে। ওই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভার রাজ্য নেতৃত্বের উপরে ছেড়ে দিয়েছেন জেলা নেতৃত্ব। আজ, বৃহস্পতিবার দলের জেলা সভাপতি অসীম ঘোষ এবং উত্তরবঙ্গ কোর কমিটির সদস্য তিলক চৌধুরীর নেতৃত্বে ৫ জন কাউন্সিলর কলকাতায় রওনা হচ্ছেন। পুরসভার জটিলতা কাটাতে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন। অসীমবাবু বলেন, “কংগ্রেস ভাইস চেয়ারম্যানের পদ না-ছেড়ে জোট রাজনীতির অমর্যাদা করলেও রাজ্য রাজনীতির সমীকরণের কথা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য মুকুলবাবুর দ্বারস্থ হচ্ছি।” তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, দলীয় কাউন্সিলারদের একাংশ পুরসভার বিরোধী আসনে বসার কট্টর বিরোধিতা করেছেন। তাঁরা মনে করেন, কংগ্রেস সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় বিরোধী দলের আসনে বসলে এলাকা উন্নয়নে তৃণমূল পুর কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা পাবেন না। শুধু তাই নয়। কেন্দ্র ও রাজ্যে কংগ্রেস এবং তৃণমূলের জোট রয়েছে। পুূরসভা নির্বাচনেও কংগ্রেস-তৃণমূল জোট করে লড়েছে। এখন বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করলে বাসিন্দাদের কাছে দল সম্পর্কে ভুল বার্তা পৌছবে। কয়েকজন তৃণমূল কাউন্সিলারের আশঙ্কা, দল বিরোধী আসনে বসার সিদ্ধান্ত নিলে আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে তার প্রভাব পড়বে। জোট ভেস্তে যাবে। যদিও কংগ্রেসের ভাইস চেয়ারম্যানের পদ না ছাড়ার সিদ্ধান্তকে ভাল চোখে দেখছেন না জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের উত্তরবঙ্গ কোর কমিটির সদস্য তিলক চৌধুরী বলেন, “কংগ্রেস প্রথম থেকেই জোট বিরোধী কাজ করেছে। বিধানসভা ভোটে বিভিন্ন কেন্দ্রে গোঁজ প্রার্থী দিয়েছে। এ বার জোটকে অমান্য করে তৃণমূলকে ভাইস চেয়ারম্যানের পদ ছাড়া হল না। তবে আমরা এমন কিছু করব না যেটা বামফ্রন্টকে ঘোলা জলে মাছ ধরার সুযোগ করে দিতে পারে।” ২৫ আসনের রায়গঞ্জ পুরসভায় এ বার ১৭টি ওয়ার্ডে প্রার্থী দেয় কংগ্রেস। প্রতিটি আসন দখল করে। তৃণমূল ৮টি ওয়ার্ডে প্রার্থী দিয়ে ৫টি পায়। সিপিএম, সোস্যালিস্ট পার্টি ও নির্দল ১টি করে আসনে জয়লাভ করে। সংখ্যাগরিষ্ঠ কাউন্সিলারদের সমর্থনে ফের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা রায়গঞ্জের বিধায়ক মোহিত সেনগুপ্ত। মোহিতবাবু রায়গঞ্জ টাউন কংগ্রেস সভাপতি রণজকুমার দাসকে ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনীত করেন। কংগ্রেস তৃণমূলকে ভাইস চেয়ারম্যানের পদ না-ছাড়ায় দুই দলের মধ্যে দূরত্ব বাড়ে। কংগ্রেস নেতৃত্বের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে তৃণমূল কর্মীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। দলের নির্দেশে গত মঙ্গলবার তৃণমূল কাউন্সিলররা পুরসভার বোর্ড অফ কাউন্সিলারের প্রথম সভা বয়কট করেন। কংগ্রেসের তরফে পুরসভার চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিলরের একটি পদ নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হলে তৃণমূল নেতৃত্ব তা প্রত্যাখান করেন। দলের একাংশ ভবিষ্যতে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট না করার হুমকিও দেয়। অবশেষে পরিস্থিতি সামাল দিতে দলের জেলা নেতৃত্ব সর্বভারতীয় সম্পাদকের দ্বারস্থ হন। কংগ্রেস নেতৃত্ব তৃণমূলের তোলা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। দলের উত্তর দিনাজপুর জেলা কমিটির সম্পাদক পবিত্র চন্দ বলেন, “তৃণমূলকে সঙ্গে নিয়ে পুরবোর্ড পরিচালনা করতে চাই। আসন বণ্টনের সময় ভাইস চেয়ারম্যানের পদ ছাড়ার বিষয়ে তৃণমূলের তরফে শর্ত ছিল না। পুরসভায় তৃণমূলকে সমান গুরুত্ব দিয়ে সব কাজ হবে।” কংগ্রেস ও তৃণমূলের চাপানউতোরের ব্যাপারে উত্তর দিনাজপুরের বামফ্রন্ট নেতা অপূর্ব পাল বলেন, “আসলে ক্ষমতার লোভে তৃণমূল নেতৃত্ব অবস্থান বদলে আসরে নেমেছেন।” ৮ নম্বর ওয়ার্ড তৃণমূল কাউন্সিলর বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বামেদের মানুষ নির্বাসনে পাঠিয়েছেন। ওঁদের কথায় গুরুত্ব দিচ্ছি না।” |
|
|
|
|
|