|
|
|
|
বাজেট লাগবে না নতুন করে, মনে করছে সরকার |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
চলতি আর্থিক বছরের জন্য নতুন করে আর ‘প্রথাগত’ বাজেট পেশ করার প্রয়োজন আছে বলে এখনও পর্যন্ত মনে করছে না রাজ্য সরকার। বিধানসভার আসন্ন অধিবেশনে চলতি আর্থিক বছরের বাকি ৬ মাসের জন্য আরও একটি ভোট-অন-অ্যাকাউন্ট পাশ করানো হতে পারে। তার সঙ্গেই আনা হতে পারে একটি অতিরিক্ত কর বিল। তবে এই বিষয়ে চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। শেষ পর্যন্ত রাজ্য সরকার তাদের প্রস্তাবিত পথেই চললে পশ্চিমবঙ্গে এ বছর প্রথাগত কোনও বাজেট হবে না। তিন বার ভোট-অন-অ্যাকাউন্ট পাশ করিয়ে রাজ্য চালানোর খরচ সামলানো হবে।
রাজ্য সরকারের অবশ্য বক্তব্য, বাজেট ছাড়াই সরকার চলছে এই অভিযোগ ঠিক নয়। অর্থ দফতরের এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, “গত ২৪ জুন বিধানসভায় অর্থমন্ত্রী গোটা অর্থবর্ষের জন্যই বার্ষিক আর্থিক বিবরণী (এএফএস) পেশ করেছেন। তাতে যেমন বিভিন্ন দফতরের খাতে বরাদ্দের কথা আছে, তেমন আয়ের কথাও আছে। সেটাই তো বাজেটে থাকে। বিধানসভার গত অধিবেশনেই ‘এক নজরে বাজেট’ প্রতিবেদনটিও দেওয়া হয়েছে।” এর পরে প্রশ্ন থাকছে, নতুন কর প্রস্তাব ছাড়া সরকার চলবে কী করে? সেই জন্যই এ বারের বিধানসভা অধিবেশনে অতিরিক্ত কর বিল আনা হতে পারে। অর্থ দফতরের এই নিয়ে এখনও আলোচনা চলছে। অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র অবশ্য বিধানসভার অধিকার ভঙ্গের প্রশ্ন মাথায় রেখে এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
আর্থিক সঙ্কটের মধ্যেও রাজ্যে উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে বারেবারেই কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে প্যাকেজ বা অনুদানের দাবি করছে রাজ্য সরকার। পক্ষান্তরে কেন্দ্রের পরামর্শ, কর কাঠামো সংশোধনের প্রস্তাব দিয়ে নিজেদের রাজস্ব বাড়ানোর রাস্তা পরিষ্কার করুক রাজ্য সরকার। রাজ্যের অর্থ দফতরের বক্তব্য, কিছু করের ক্ষেত্রে বিধানসভায় আইন পাশ করানোর দরকার হয় না। প্রশাসনিক নির্দেশ জারি করেই সেই কাজ করা যায়। যেমন, আগে ভ্যাটের ক্ষেত্রে ফেরতযোগ্য অর্থের ৭৫% আগাম মিটিয়ে দিত রাজ্য। নতুন অর্থমন্ত্রী অমিতবাবু সেই পরিমাণ বাড়িয়ে ৯০% করেছেন। তার জন্য বিধানসভায় আইন পাশ করতে হয়নি। তবে এর পাশাপাশি কিছু কর আছে, যার জন্য আইন সংশোধন বা বিল আনতে হয়। এই শ্রেণিতে কী কী ধরনের কর প্রস্তাব নতুন সরকার আনতে চায়, তা এখনও চূড়ান্ত নয়।
রাজ্য সরকারের এক শীর্ষ সূত্রের বক্তব্য, বামফ্রন্ট সরকারের অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত বিধানসভা নির্বাচনের আগে গোটা অর্থবর্ষের জন্যই বার্ষিক আর্থিক বিবরণী পেশ করেছিলেন। যার ভিত্তিতে তৎকালীন বিরোধী দল তৃণমূল অভিযোগ করেছিল, নির্বাচনের আগে বিদায়ী সরকারের পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ ‘অনৈতিক’। বামফ্রন্ট সরকার অবশ্য পাশ করিয়েছিল চার মাসের ভোট-অন-অ্যাকাউন্ট। নতুন সরকার আরও একটি আর্থিক বিবরণী এনে বাম জমানার বিবরণীর কিছু ‘অস্পষ্টতা’ দূর করে বলে রাজ্য সরকারি সূত্রের দাবি। কিন্তু ‘বাজেট ছাড়া সরকার চলছে’ এই অভিযোগের কোনও সারবত্তা আছে বলে সরকার মনে করছে না। যদিও বাম বিধায়কদের একাংশের মতে, বিদায়ী সরকার ভোট-অন-অ্যাকাউন্ট করে এবং নতুন সরকার এসে পূর্ণাঙ্গ বাজেট করে এটাই দস্তুর। কিন্তু এ বছর যা হচ্ছে, তা সাম্প্রতিক কালের মধ্যে হয়নি। এতে ‘আর্থিক শৃঙ্খলা’র প্রশ্নও জড়িত।
বিধানসভার আগামী অধিবেশন শুরু হচ্ছে ১০ অগস্ট। সরকার পক্ষের ইঙ্গিত, ওই অধিবেশনে বিভিন্ন দফতরের ব্যয়বরাদ্দ নিয়ে আলোচনা হবে। ভোট-অন-অ্যাকাউন্ট হলে তা নিয়ে আলোচনার জন্য রাখা হতে পারে দু’দিন। গোটা পরিস্থিতির বিচারে রাজ্য সরকার এখন চাইছে, এমন সব প্রকল্পের ভিত্তিতে উন্নয়নের কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে, যাতে কেন্দ্রীয় সাহায্য মেলার সম্ভাবনা আছে। রাজ্যের আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অর্থমন্ত্রী অমিতবাবুর সঙ্গে ইতিমধ্যে আলোচনা হয়েছে রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনেরও। |
|
|
|
|
|