বোথামদের হাতে আক্রান্ত ভারতের বিশ্বসেরার মুকুট
প্যাডি আপটনের অভাব কি এই মুহূর্তে ভারতীয় দলে বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে?
বিশ্বকাপজয়ী দলের মনোবিদ আপটন তাঁর বন্ধু গ্যারি কার্স্টেনের সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকা ফিরে গিয়েছেন স্ব-ইচ্ছায়। তাঁর জায়গায় কাউকে এখনও নেওয়া হয়নি। মনোবিদের কাজের সঙ্গে জড়িত আরও খুচখাচ টোটকা তাঁর থাকত। যা এই ভারতীয় দলে আর কেউ করছে বলে মনে হয় না।
আপটনের যেমন জনপ্রিয় অভ্যেস ছিল, প্রচণ্ড চাপের মুখে থাকা টিমকে কখনও খবরের কাগজ পড়তে না দেওয়া। এমনও পরামর্শ দেওয়া প্রয়োজন না হলে নিউজ চ্যানেল থেকেও দূরে থাকো। ঘরে খোলা রাখো এন্টারটেনমেন্ট চ্যানেল। গত বিশ্বকাপে যখন দ্বিতীয় ম্যাচ থেকে টিমের ওপর মারাত্মক চাপ তৈরি হয়ে গেল, পরদিন সকাল থেকে সক্রিয় হয়ে পড়লেন আপটন। হোটেলে প্রত্যেকের ঘরের বাইরে সকালে যে কাগজ দেয় তাঁর কাজ ছিল ভোর সাড়ে পাঁচটায় উঠে সেগুলোকে দ্রুত সরিয়ে ফেলা। প্রতি দিন এমন নিয়মনিষ্ঠ ভাবে সেটা করতেন যে, ফাইনাল পর্যন্ত ধোনির দলের কেউ সকালে দরজা খুলে অন্তত খবরের কাগজ বাইরে পড়ে থাকতে দেখেননি।
বুধবার নটিংহ্যামের পার্ক প্লাজা হোটেলের আট তলায় ভারতীয়দের ঘরের বাইরে খবরের কাগজ পড়ে থাকা দেখে আপটনের কথা মনে হল। এই হোটেলে আবার দু’টো করে কাগজও অনেক সময় দেয়। অথচ এই যা পরিস্থিতি, নির্ঘাৎ তিনি সেগুলো সরিয়ে ফেলতেন। ব্রিটিশ কাগজগুলো পড়লে টিমের ওপর চাপ বাড়ার আশঙ্কা তিনি নিশ্চয়ই শেকড় থেকেই নির্মূল করতে চাইতেন। আর পরিস্থিতি বিচারে সেটা উপকারীও হত।
মহেন্দ্র সিংহ ধোনি আনন্দবাজারকে বললেন, “ট্যুরে সাধারণত আমি কাগজ পড়ি না। এ বারও পড়ছি না। জানি, না পড়াটা অনেক শান্তির।”
কথা বলে মনে হল, সত্যি তিনি জানেন না কী ধরনের লেখালেখি ব্রিটিশ মিডিয়ায় শুরু হয়েছে। জানেন না যে, গত দশ-পনেরো বছরের মধ্যে কোনও ভারতীয় দল এত রূঢ়, বিরূপ লেখালেখির সম্মুখীন হয়নি। কখনও কখনও যা জঙ্গিপনার পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। পক্ষপাতপূর্ণ বলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যাদের বদনাম আছে, সেই অস্ট্রেলীয় মিডিয়াও কখনও এত আক্রমণাত্মক হয়নি। এক-এক সময় মনে হচ্ছে ভারত চলতি টেস্ট সিরিজে যুগ্ম প্রতিপক্ষ খেলছে।
ট্রেন্টব্রিজে অনুশীলনে সচিন তেন্ডুলকর। বুধবার। রয়টার্স
মাঠের মধ্যে স্ট্রসের ইংল্যান্ড।
মাঠের বাইরে স্ট্রস সমর্থনকারী ব্রিটিশ মিডিয়া।
অন্য বারও ভয়ঙ্কর আক্রমণাত্মক ব্রিটিশ মিডিয়ার একাংশ থাকেই বিপক্ষে। কিন্তু সাধারণত তারা হয় ট্যাবলয়েডের প্রতিনিধি। না হলে তুলনায় নামগোত্রহীন মুখ। বাজার গরম করে যে নিজের নামটাও সামনে আনতে চাইছে। এ বার যে সব জায়গা থেকে আক্রমণ আসছে, তা হয় ছাপা হচ্ছে অভিজাত ব্রডশিটে। নয়তো বিখ্যাত কোনও ক্রিকেটারের ল্যাপটপ-উদ্ধৃত হয়ে বাজারে সাড়া ফেলছে।
ইয়ান বোথাম: আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের রাজা এখন ইংল্যান্ড। এই গ্রহের সেরা দল নিঃসন্দেহে ওরা এবং আগামী অনেক বছর রাজত্ব করার জন্য এসেছে। ভারতকে বলি, জেমস অ্যান্ডারসন যদি তোমাদের ট্রেন্টব্রিজে ইনিংস পিছু পাঁচ উইকেট করে তোলে, ধরতে হবে তোমরা দারুণ করেছ। অ্যাঙ্গাস ফ্রেজার: ওহে ভারত। তোমাদের রান্নাটা তো কাঁচা রয়ে গিয়েছে ভাই। তোমাদের বোলিং বিশেষ করে। খাওয়ার অরুচি। এমন খাওয়ার অরুচি বস্তুটা দিয়ে কুড়ি উইকেট নেবে কী করে?
দ্য টাইমস: ইংল্যান্ডের কোন দলটা বেশি অপ্রতিরোধ্য? ২০০৫-এর অ্যাসেজ জয়ী দল না বিশ্বজয়ী ২০১১? মিলিত একাদশ হলে কি স্ট্রসই অধিনায়ক হবেন? না মাইকেল ভন?
জিওফ্রে বয়কট: বিশ্বের পয়লা নম্বর হিসেবে ভারতের অবস্থানের শেষের শুরু হয়ে গিয়েছে লর্ডসে। এ বার ওরা কেবল হড়কাবে।
স্টুয়ার্ট ব্রড: তেন্ডুলকরকে বল করার কৌশল বুঝে গিয়েছি। ওকে পিচ-আপ করিয়ে ফরোয়ার্ড আনো। তার পর হাল্কা ছোঁয়ার জন্য অপেক্ষা করো।
দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ: ভারত, স্বীকার করার সময় এসেছে, পয়লা নম্বর দল এখন ইংল্যান্ড। তোমরা অতীত।
গ্রেম সোয়ান: আমাদের পরিকল্পনা গোটা সিরিজে তেন্ডুলকরকে রান-উপোসী করে রাখা। নিশ্ছিদ্র পরিকল্পনা হয়েছে এর জন্য।
আক্রমণের মুখে ধোনির দল।
মাত্র এক সপ্তাহ আগেও যারা তেন্ডুলকরকে নিয়ে বিশেষ ক্রোড়পত্র আর স্তুতিব্যঞ্জক বড় বড় লেখা বার করেছে, তারা আজ অসীম গুরুত্বে ছেপেছে উত্তেজিত ইংরেজ কোচ অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের প্রতিক্রিয়া। কেন মন্টি পানেসর লর্ডস টেস্টের আগে তেন্ডুলকরকে প্র্যাক্টিস দিতে গিয়েছিলেন, তা নিয়ে ব্রিটিশ কোচ তুলোধনা করেছেন শিখ স্পিনারকে। বলেছেন, “প্রচণ্ড ছেলেমানুষি করেছে ও। আমি কথা দিচ্ছি এ জিনিস আর ঘটবে না।”
এক-এক সময় মনে হবে হাত-পা ধুয়ে নেমে পড়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম। দিলীপ বেঙ্গসরকর এ দিন ফোনে বলছিলেন, “লর্ডসে যা দেখলাম টিমের সত্যিই ‘লেগ অ্যান্ড লেগ’ (নব্বই দশকের জনপ্রিয় ড্রেসিংরুম অভিব্যক্তি, অবসন্নতার মাত্রা বোঝাতে ব্যবহার হয়) হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সেটা তো স্বাভাবিক। জাহিরের ওই রকম দুর্ঘটনা হল। সহবাগ আসতে পারেনি। সমালোচনা করার আগে এগুলোও তো ভাবতে হবে।”
মনে হচ্ছে না কেউ ভাবছে বলে। ভারতীয় দল ডিআরএস পদ্ধতিতে এলবিডব্লিউ মানতে না চাওয়াতেও নিয়মিত প্রবলতম সমালোচনার সম্মুখীন হচ্ছে। কোনও কোনও কাগজ এখানে আবার ইচ্ছাকৃত চুরি করতে চাওয়ার অসাধু উদ্দেশ্যের দিকেও ইঙ্গিত করেছে। বলেছে, ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা প্যাডের যথেচ্ছ ব্যবহার করে অভ্যস্ত। তাই প্রযুক্তির বয়ে আনা সঠিক সিদ্ধান্ত ওদের ভাল লাগবে কেন? বোথাম লিখছেন, “ভারত একটু বাবা বোঝার চেষ্টা করো, ক্রিকেটে তোমরাই একমাত্র দল নও। তোমরা মানেই আইসিসি নয়। আর সব দেশ যখন পুরোপুরি ডিআরএস মেনে নিয়েছে তোমাদেরও মানতে হবে।” স্টুয়ার্ট ব্রড লিখেছেন, “বাউডেন আমার বলে যে দু’টো ন্যায্য এলবিডব্লিউ দেননি, দু’টোই এলবিডব্লিউতে ডিআরএস থাকলে আউট ছিল। কে বলতে পারে ওই সিদ্ধান্ত দু’টোর জন্য টেস্টটা ড্র হয়ে যেত না।” জিমি অ্যান্ডারসনও ট্রেন্টব্রিজ মাঠের সাংবাদিক বৈঠকে বলে গেলেন, “এলবিডব্লিউ-তে ডিআরএস-এর প্রয়োগ না হওয়াটা খুব হতাশাজনক।” ধরে নেওয়া যায়, অ্যান্ডারসন ব্যবহৃত ‘ফ্রাস্ট্রেটিং’ (হতাশাজনক) শব্দটার ওপর জোর দিয়ে বিলেতের কাগজগুলো কাল সকালে ফের শিরোনাম করবে।
প্রাক্তনরা বলছেন। কাগজ বিরুদ্ধে লিখছে। বরাবরের মতোই ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে ভারতীয় দৃষ্টিকোণের কোনও অবস্থান নেই। কোনও প্রাক্তন ক্রিকেটার বা লন্ডন প্রবাসী ভারতীয় সাংবাদিককে দিয়ে লেখানো হচ্ছে না। কিন্তু চরম আশ্চর্যজনক হল, ইংল্যান্ড দলের ক্রিকেটাররা এমন খুল্লমখুল্লা কলম লিখছেন কী করে? ডিআরএস নিয়ে এত আক্রমণাত্মক সমালোচনা তো পরোক্ষে ভারতীয় বোর্ডের বিরুদ্ধেও। দু’দেশের বোর্ড একটা প্লেয়িং কন্ডিশনে রাজি হওয়ার পর সেই নিয়মের মধ্যে খেলতে যারা চুক্তিবদ্ধ, তারা কি এত মুক্তকচ্ছ সিরিজ চলাকালীন হতে পারে?
আসলে সংবাদমাধ্যম, প্রাক্তন ক্রিকেটার এবং বর্তমান দল ত্রিমুখী মনোভাব থেকে যা ঠিকরে আসছে, ইংল্যান্ড ভারতকে স্থানচ্যুত করে পয়লা নম্বর হতে মরিয়া। কোহিনুর যেমন টাওয়ার অফ লন্ডনে সযত্ন রক্ষিত। তেমনই বিশ্ব ক্রিকেটের কোহিনুর হল এক নম্বর র্যাঙ্কিং। যা স্বীকৃত র্যাঙ্কিং পদ্ধতি চালু হওয়ার পর থেকে ইংল্যান্ড কখনও পায়নি। কোহিনুরের যত্নে তারা ওটাকে লর্ডসের জাদুঘরে রাখতে চায়। যত দিন পারে। আসলে প্রেম, যুদ্ধ এবং পয়লা নম্বর র্যাঙ্কিং জেতার লক্ষ্যে অন্যায় বলে কিছু নেই! আপটন এখন টিমের সঙ্গে থাকলে প্রতিদিন সকালে উঠতেনই!
First Page Khela Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.