তপ্ত মেদিনীপুর |
সিপি-টিএমসিপি সংঘর্ষ, ভাঙচুর কংগ্রেস অফিসে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
তৃণমূলের সন্ত্রাসে দীর্ঘ আড়াই মাস ধরে পঞ্চায়েত সমিতির এক কর্মী সপরিবার ঘরছাড়া বলে অভিযোগ উঠল চন্দ্রকোনায়। ঘাটাল পঞ্চায়েত সমিতির উপ-সচিব চৌধুরী সামসুল আলম চন্দ্রকোনা-১ ব্লকের জাড়া পঞ্চায়েতের নারায়ণচক গ্রামের বাসিন্দা। সিপিএম সমর্থক বলে পরিচিত এই মানুষটি তৃণমূলের অত্যাচারে স্ত্রী ও ছেলেদের নিয়ে অন্যত্র থাকতে বাধ্য হচ্ছেন বলে লিখিত ভাবে থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন। জানিয়েছেন ঘাটালের মহকুমাশাসককেও। কিন্তু কোনও সুরাহা হয়নি। চন্দ্রকোনা রোডের সিআই দেবাশিস মজুমদারের দাবি, অভিযুক্তরা সকলেই পলাতক। সামসুল আলমের কথায়, “যাতে বাড়ি ফিরতে পারি, সে জন্য তৃণমূলের ব্লক স্তরের নেতৃত্বদের বলেছি। তবু আমি পরিবার নিয়ে গ্রামে ঢুকতে পারিনি।” |
|
মেদিনীপুর কলেজে টিএমসিপি এবং সিপি-র সমর্থকদের মারামারি। ছবি রামপ্রসাদ সাউ |
মহকুমাশাসক অংশুমান অধিকারীরও বক্তব্য, “বেশ কয়েক বার অভিযুক্ত দলের স্থানীয় নেতৃত্বকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনও সমাধান হয়নি। শীঘ্রই পুলিশের সাহায্যে ওঁকে বাড়ি ফেরানোর ব্যবস্থা করা হবে।” একই আশ্বাস দিয়েছেন চন্দ্রকোনা-১ ব্লকের বিডিও আসেক রহমানও। ফের সংঘর্ষে জড়াল শাসক দল তথা জোট-সঙ্গী তৃণমূল ও কংগ্রেসের দুই ছাত্র সংগঠন। এ বার মেদিনীপুরে।
বুধবার দুপুর থেকেই ছাত্র পরিষদ (সিপি) ও তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি)-এর মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে। মেদিনীপুর কলেজকে কেন্দ্র করে গোলমালের শুরু হলেও কলেজ চত্বরেই তা সীমাবদ্ধ থাকেনি। ভাঙচুর চলে জেলা কংগ্রেসের কার্যালয়েও। দু’পক্ষের বেশ কয়েক জন জখম হয়। তারা মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। |
|
বুধবার মেদিনীপুর কলেজে ছাত্র পরিষদ-তৃণমূল ছাত্র পরিষদ সংঘর্ষ বাধে।
অশান্তির আঁচ ছড়িয়ে পড়ে কলেজের বাইরেও। ছবি রামপ্রসাদ সাউ |
এই অবস্থায় আগামী শনিবার পর্যন্ত মেদিনীপুর কলেজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। অধ্যক্ষ প্রবীর চক্রবর্তী বলেন, “ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে এই সিদ্ধান্ত। আর এর মধ্যে সর্বদল বৈঠক হবে।” কংগ্রেস কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় টিএমসিপি’র শহর সভাপতি বুদ্ধ মণ্ডল-সহ তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কয়েক জনকে আটক করা হয়েছে। জেলার পুলিশ সুপার
প্রবীণ ত্রিপাঠী বলেন, “অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ক’দিন আগেই সিপি-টিএমসিপি সংঘর্ষে তপ্ত হয়েছিল বহরমপুর কলেজ। মেদিনীপুরেও একাধিক কলেজে অশান্তিতে জড়িয়েছে এই দুই ছাত্র সংগঠন। এই শহরে অশান্তির কেন্দ্র মূলত মেদিনীপুর কলেজ ও কৈবল্যদায়িনী কমার্স কলেজ। রাজ্যে পালাবদলের পর এই দুই কলেজেই কোণঠাসা এসএফআই। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কলেজের ‘কর্তৃত্ব’ কার হাতে থাকবে, তা নিয়েই গোলমাল। কমার্স কলেজে সিপি’র প্রভাব বেশি। মেদিনীপুর কলেজে টিএমসিপি’র। মঙ্গলবার মেদিনীপুর কলেজে এই দুই ছাত্র সংগঠনের মধ্যে অশান্তি বেধেছিল। প্রতিবাদে বুধবার এ দিন বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ কালেক্টরেট মোড় অবরোধ করে সিপি’র কর্মী-সমর্থকেরা। অবরোধের জেরে ব্যস্ত সময়ে যানজট সৃষ্টি হয়। একের পর এক বাস রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে পড়ে। ভোগান্তিতে পড়েন শহরবাসী। ঘণ্টাখানেক পরে কর্মসূচি শেষে সিপি’র কর্মী-সমর্থকেরা জেলা কংগ্রেস দফতরে ফিরে আসে। |
|
ভাঙচুর চলে জেলা কংগ্রেস কার্যালয়ে। প্রতিবাদে শহরে ধিক্কার মিছিল করে কংগ্রেস। ছবি সৌমেশ্বর মণ্ডল। |
গোলমাল বাধে বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ। অভিযোগ, সিপি’র কয়েক জন মেদিনীপুর কলেজে চড়াও হয়ে টিএমসিপি কর্মীদের মারধর করে। টিএমসিপি’র শৈবাল পাত্র-সহ কয়েক জন আহত হন। কিছুক্ষণের মধ্যেই ‘প্রতিরোধ’ গড়ে তোলে টিএমসিপি। মেদিনীপুর কলেজের অদূরে জেলা কংগ্রেসের কার্যালয়। অভিযোগ, সেখানে হামলা চালায় টিএমসিপি’র ছেলেরা। জেলা কংগ্রেসের সহ-সভাপতি শম্ভুনাথ চট্টোপাধ্যায় তখন কার্যালয়েই ছিলেন। তাঁর অভিযোগ, “ওরা আচমকাই ভাঙচুর শুরু করে। আমি শান্ত হতে বলি। কিন্তু কেউই কথা শোনেনি।” পুলিশ এসে অবস্থা সামলায়। কংগ্রেস কার্যালয়ে হামলার অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন টিএমসিপি’র জেলা চেয়ারম্যান রমা গিরি। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, “বহিরাগতদের এনে মেদিনীপুর কলেজে হামলা চালানো হয়। আমাদের ৯ জন হাসপাতালে ভর্তি।”
ঘটনার পরে কংগ্রেস কার্যালয়ের সামনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। মেদিনীপুর কলেজের আশপাশেও পুলিশি নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। |
|