সম্পাদকীয় ২...
চাই সতর্ক পদক্ষেপ
শ্চিমবঙ্গের জঙ্গলমহলে মাওবাদী জঙ্গিরা নূতন করিয়া সক্রিয় হইতেছে, গোয়েন্দা সূত্রেই এই সমাচার রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের কাছে আসিতেছে। একই ধরনের সংবাদ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছেও পৌঁছিয়াছে। এই প্রেক্ষিতেই রাজ্যে রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তির প্রশ্নটি অতিরিক্ত গুরুত্ব পাইতেছে। রাজবন্দিদের মুক্তি দেওয়ার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বর্তমান শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের ইস্তাহারে ছিল, যেমন ছিল মাওবাদী সমস্যার সমাধান করিয়া জঙ্গলমহলের উন্নয়নের আশ্বাসও। মহাকরণে বসিতে-না-বসিতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিঙ্গুরের অনিচ্ছুক কৃষক, জঙ্গলমহল ও পার্বত্য দার্জিলিঙের সমস্যা নিরসনে তৎপর হন। পাহাড়ে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সহিত চুক্তিও সই হয়, আর সিঙ্গুরের জমি সরকারের দখলে ফিরাইতে আইনও পাশ হয়। জঙ্গলমহলেও মমতা সফর করেন এবং বেশ কিছু উন্নয়নমূলক কর্মসূচিও গ্রহণ করেন।
জঙ্গলমহল যে আপাতত শান্ত, তাহার অন্যতম কারণ যৌথ বাহিনীর অভিযানে মাওবাদীরা অধিকাংশই পলাতক, তাহাদের সংগঠন ছত্রভঙ্গ, সন্ত্রাস সৃষ্টির ক্ষমতাও সীমাবদ্ধ। নূতন সরকারকে সমস্যা সমাধানের সময় ও সুযোগ দিবার জন্যই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক যৌথ বাহিনীর অভিযান সাময়িক ভাবে স্থগিত রাখিয়াছে। কিন্তু বাহিনীর এই নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে মাওবাদীরা নূতন করিয়া সঙ্ঘবদ্ধ ও সংগঠিত হওয়ার চেষ্টাও করিতেছে। প্রতিবেশী রাজ্য ঝাড়খণ্ড বা ওড়িশায় পলাতক জঙ্গি নেতারা জঙ্গলমহলে ফিরিয়া আসিতেছে। অতঃপর বন্দি নেতারা মুক্তি পাইলে সেই তৎপরতা আরও বৃদ্ধি পাইবে। তখন কিন্তু জঙ্গলমহল পুনরায় অশান্ত হইয়া উঠিবে, সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচির রূপায়ণও অসম্ভব হইবে। সুতরাং বন্দিমুক্তির প্রশ্নটিতে বিবেচনা করিয়া সিদ্ধান্ত লইতে হইবে। মাওবাদীদের যে সমর্থকরা এই সব বন্দিমুক্তি বা মানবাধিকার রক্ষা কমিটিতে মুখর, তাঁহারা পাইকারি হারে জঙ্গি নেতা-কর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি চাহিতেই পারেন। কিন্তু যে-সব জঙ্গির বিরুদ্ধে খুনোখুনি, নাশকতা, নিরাপত্তারক্ষীদের খতম করিয়া আগ্নেয়াস্ত্র ছিনতাইয়ের মতো গুরুতর ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ রহিয়াছে, তাহাদের ছাড়িয়া দিলে জঙ্গলমহলে তাহার পরিণাম সম্পর্কে সচেতন থাকা ভাল। জঙ্গলমহলের যে সব দরিদ্র আদিবাসী মানুষ জঙ্গিদের শিকার, তাঁহাদের নিরাপত্তা বিধানের দায়ও কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচিত সরকারেরই। জঙ্গিদের তরফে সুশীল সমাজের সহানুভূতিপূর্ণ সওয়ালের আড়ালে এই বিষয়টি প্রায়শ চাপা পড়িয়া যায়। কৌশলগত ভাবেও জঙ্গিরা অপেক্ষাকৃত শান্তিপূর্ণ বাতাবরণেই নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করিয়া থাকে, সংগঠনকে গুছাইয়া লয়। অতীতে মাওবাদীদের ইহা করিতে দেখা গিয়াছে। অন্ধ্রপ্রদেশ সরকারের সঙ্গে শান্তি-আলোচনার অবসরে তাহারা ঠিক এই কাজটিই করিয়াছিল। তথাকথিত সংঘর্ষ-বিরতির শর্তও তাহারা মানে নাই। শ্রীলঙ্কায় এল টি টি ই-র গেরিলারা যুদ্ধ-বিরতি ঘোষণা করিয়া তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতায় শান্তি-আলোচনা চালাইবার অবকাশেই সংগঠনের ছত্রভঙ্গ দশা সামলাইয়া নব উদ্যমে আক্রমণের জন্য সজ্জিত হইত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হয়তো মাওবাদীদের বুঝাইয়া-সুঝাইয়া শান্তি ও আলোচনার পথে আনিতে আশাবাদী। কিন্তু তাঁহাকে বুঝিতে হইবে, কোনও একটি রাজ্যে মাওবাদীদের পক্ষে শান্তির পথে চলিয়া আসা সহজ নয়, যখন লাগোয়া রাজ্যেই তাহাদের কমরেডরা ধুন্ধুমার সশস্ত্র সংঘর্ষে লিপ্ত। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অভিজ্ঞতা ও দৃষ্টিভঙ্গি বিশেষ ভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। প্রশাসনকে বাস্তবের কঠিন জমিতে দাঁড়াইয়াই কাজ করিতে হয়।
Previous Story Editorial Next Item


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.