সম্পাদকীয় ১...
কোথায় থামিতে হয়
কোনও এক শাস্ত্রীয় সংগীতজ্ঞের আসরে আমন্ত্রিত হইয়া রবীন্দ্রনাথ নাকি প্রশ্ন করিয়াছিলেন, ‘তোমাদের ওস্তাদ থামিতে জানে তো?’ কাহিনিটি সত্য, নাকি নেহাতই প্রচলিত গল্প, তাহা তর্কসাপেক্ষ কিন্তু প্রশ্নটির মাহাত্ম্য প্রশ্নাতীত। কোথায় থামিতে হয়, তাহা না জানিলে গানের আসর যেমন মাটি হয়, দেশের আর্থিক নীতিও ক্ষতিকর হইয়া উঠিতে পারে। ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে দেখিয়া ক্রমে সেই আশঙ্কা দৃঢ়তর হইতেছে। ব্যাঙ্কের গভর্নর দুব্বুরি সুব্বারাও আরও এক দফা রেপো রেট বৃদ্ধি করিলেন। গত ষোলো মাসে একাদশতম বার। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক হইতে স্বল্পমেয়াদে ঋ ণ লইলে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে যে সুদ দিতে হয়, তাহা বাড়িয়া আট শতাংশে দাঁড়াইল। ষোলো মাস পূর্বে, অর্থাৎ কঠোর আর্থিক নীতির সূচনালগ্নে হারটি ছিল ৪.৭৫ শতাংশ। ব্যাঙ্কের ঘোষিত এক নম্বর শত্রু মূল্যবৃদ্ধির হারকে নিয়ন্ত্রণে আনিতেই এই সিদ্ধান্ত। প্রথম কয়েক দফায় সিদ্ধান্তটির যাথার্থ্য লইয়া প্রশ্ন ছিল না। বাজারে নগদ টাকার পরিমাণ কমাইলে মূল্যবৃদ্ধির হার নিয়ন্ত্রণে আসে বইকী। কিন্তু, ব্যাঙ্ক সেই পর্যায়ে থামে নাই। বর্তমান হার বৃদ্ধির ফলে অর্থনীতির বৃদ্ধির হার ক্ষতিগ্রস্ত হইবে, সেই সম্ভাবনা প্রবল। গত সাতটি ত্রৈমাসিকে ভারতে লগ্নির পরিমাণ উল্লেখযোগ্য দেশগুলির মধ্যে সর্বনিম্ন, এবং চালু প্রকল্প আটকাইয়া যাওয়ার ঘটনা সর্বাধিক। প্রবণতাটি মারাত্মক। সুদের হার বাড়িলে বিনিয়োগের খরচ বাড়ে। ফলে, বিনিয়োগের পরিমাণ কমে। অন্য দিকে, অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে চাহিদার পরিমাণও কমে। আশঙ্কা হয়, কঠোর আর্থিক নীতির ফাঁসে পড়িয়া আর্থিক বৃদ্ধির বুনিয়াদটি ভঙ্গুর হইয়া পড়িবে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অবশ্য আশাবাদী, আর্থিক বৃদ্ধির হার আট শতাংশের কম হইবে না। বর্তমান কঠোর আর্থিক নীতি এবং বিনিয়োগকারীদের অনিচ্ছা সত্ত্বেও কী উপায়ে আট শতাংশ বৃদ্ধির হার বজায় রাখা যাইবে, তাহার স্পষ্ট উত্তর অবশ্য রিজার্ভ ব্যাঙ্ক দেয় নাই।
ব্যাঙ্ক কি মোল্লা নাসিরুদ্দিনের পদাঙ্ক অনুসরণ করিয়া যেখানে আলো, সেইখানেই চাবির সন্ধান করিতেছে? মূল্যবৃদ্ধির সমস্যাটি তীব্র, সন্দেহ নাই কিন্তু রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নিকট তাহার সমাধান আছে কি? ব্যাঙ্কের যাহা করিবার, করা হইয়া গিয়াছে। কঠোর আর্থিক নীতির পথ না ছাড়িলে তাহা দেশের আর্থিক বৃদ্ধির ক্ষতি ভিন্ন আর কিছুই করিতে পারিবে না। মূল্যবৃদ্ধির সমস্যাটি মূলত খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির ফল। বাজারে টাকার জোগান কমাইয়া সেই সমস্যার সমাধান হইবে না। কেন্দ্রীয় সরকার এক দিকে কর্মসংস্থান নিরাপত্তা যোজনার মাধ্যমে মানুষের আয় বাড়াইয়াছে, অন্য দিকে খাদ্য নিরাপত্তা ইত্যাদির কথা বলিয়া বাজার হইতে বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্য কিনিয়া নিজের গুদামে মজুত করিতেছে। অর্থাৎ, সরকারি উদ্যোগে খোলা বাজারে এক দিকে খাদ্যের চাহিদা বাড়িতেছে, অন্য দিকে জোগান কমিতেছে। এই চক্র ভাঙিবার কাজটি সরকারকেই করিতে হইবে ইহাতে ব্যাঙ্কের কোনও ভূমিকা নাই। বস্তুত, ভারতের মূল্যবৃদ্ধির সমস্যাটি মূলত কাঠামোগত, আর্থিক নীতি তারতম্য তাহার সমাধান করিতে পারে না। মূল্যবৃদ্ধির দ্বিতীয় কারণ, আন্তর্জাতিক বাজারে পেট্রোলিয়ামের মূল্যবৃদ্ধি। তাহার সমাধানও ব্যাঙ্কের নাগালের বাহিরে। আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়িতেছে, তাহাও ভারতে মূল্যবৃদ্ধির একটি কারণ। যাহা ব্যাঙ্ক বা সরকারের আয়ত্তের অতীত, তাহার সমাধানের চেষ্টা করা অর্থহীন। সরকার যাহা করিতে পারে, সরকার যেন তাহা করে অর্থমন্ত্রীকে এই কথাটি বুঝাইয়া বলাই আপাতত ব্যাঙ্কের কর্তব্য। দুব্বুরি সুব্বারাও তাঁহার ভাষণে, মৃদু স্বরে হইলেও, কথাটি বলিয়াছেন। মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে যুদ্ধটি এই বার অর্থমন্ত্রক লড়িবে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থামিলেই মঙ্গল।
First Page Editorial Next Item


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.