উত্তরের চিঠি

খাড়ি-সংস্কৃতি দীর্ঘজীবী হোক
সারপ্রাইজ ভিজিট কেন, বছরভরের অর্থহীন শ্লোগান, চেতনার হেডলাইনের পরও আমার শহর কুৎসিত হতে চায়! কচুরিপানার খাড়ি সংস্কৃতির শহর বালুরঘাট! আবর্জনা ফেলার প্রাকৃতিক ডাস্টবিন। কি নেই সেলুনের চুল, মৃত পশু, থার্মোকলের পাতা, আর অজস্র পলিব্যাগ। স্থানীয় সুভাষ কর্নার থেকে এই দূষণের মাইলস্টোন শুরু। শহরের বুকে নোংরা ছুঁড়ে এগিয়ে যাচ্ছে জল। ভোরবেলায় এ খাড়িই আবার হয়ে যায় শৌচাগার! প্রাতর্ভ্রমণের মুখগুলো বার বার নিজের শরীর নিয়ে ভেবেছেন, কখনও কোনও দিন খাড়িতে মল-মূত্র ত্যাগকে গুরুত্ব দেননি। রাস্তার জঞ্জাল সাফ করে শহরের পরিবেশ-বাতাস মুক্তির ভার যাদের হাতে, সেই পৌরসভার কাঁধে দোষ চাপিয়েই আনন্দ আমার শহরের! এখানকার কর্মীরা অকর্মণ্য, অলস, শুধু-শুধু বেতন নেন গোছের মন্তব্যও কান ছুঁয়েছে বহুবার! কিন্তু নাগরিক চেতনার উন্মেষ বালুরঘাটে এখনও ডার্ক রুমে। নইলে কোনও হোটেলের থালা-বাটি-গ্লাসের ভাগাড়ভূমি এ জলা, অনুন্নত বস্তিবাসীর শৌচকর্মের অবাধ গন্তব্য এই খাড়ি শহরে বাড়ছে গান্ধারী! আবার এই জলার বুকেই নৌকো ভাসিয়ে জেলের মাছধরা চলেছে আমার-আপনার পাতে কোনও দিন তো পড়েছেই সে বিষাক্ত মাছ! নিঃশব্দে শরীরে ঢুকে যাচ্ছে মৃত্যুর বীজ, আপনি জানতেও পারছেন না। প্রান্তিক শহরের পানিশমেন্ট কি না জানি না, তবে এর দায়ভার সম্পূর্ণ শহরবাসীর। বাসস্ট্যান্ডের চৌমাথায় বহু বার লাউড স্পিকার অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছে, শ্রাবণ-বসন্তে নিয়োগের গরমিলে ধাঁধা লেগেছে আশ্চর্য তথ্যে! কিন্তু শরীরটাই যদি বিষে ভরে যায়, তবে কীসের জন্য বাঁচা! কীসের দুর্নীতি আর কীসের মূল্যবৃদ্ধি! রামধনুর কোনও রঙই বাদ নেই এখন মিছিলের পতাকায়। তবু কেন এমনতর দুর্বিষহ!
জঞ্জালে-ভরা খাড়ি। ছবি: সন্দীপন নন্দী
কলুষ খাড়ির জন্য কোথাও পোস্টার নেই, নেই দেওয়াল লিখন। শহরটা কার? সন্দেহ হয়। অন্য শহরের সমালোচনায় অফিস-সন্ধ্যার ঠেক সরগরম, শুধু অনুপস্থিত নিজের শহরের এই বিষপ্রবাহের বিষয়টা! তর্কের জলঘোলা চলবে আজীবন। কিন্তু তবু বালুরঘাট শহরের কোলে মাথা রেখে যে জলাভূমি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে আমাদের, ওদের সবাইকে দূষণের দুনিয়ায়, তার প্রতিবাদ হবে না? খাড়ির গা বেয়ে সার-বাঁধা পেট্রল পাম্প, গ্যারেজ এর থেকে ডিজেল মবিলের যাতায়াত চলছে জলে! নির্দ্বিধায় মেনে নিচ্ছি দিন-দিন! এরই মাঝে জোড়া ব্রিজ থেকে খাড়ির মাঝে হাই রোডের পরিকল্পনা! রাস্তার শর্টকাট হয়, প্রগতির হয় না। সুভাষ কর্নার মোড় থেকে খাড়ির পাড় বেঁধে দিয়ে বিউটিফিকেশন হতে পারে, হতে পারে প্ল্যান্টেশন না, এগুলো এখনও স্বপ্ন-র প্রস্তাব! দল বদলেছে, কোন্দল বদলায়নি। তাই কাকে জানাবো প্রতিবাদ, বুঝতে পারি না! ৩৪ বছর পারেনি, এক মাসের কাছে অশৌচ ভঙ্গের অনুমতি চাইছি আমার শহর ভাল নেই, আমরা ভাল নেই। সংবাদপত্রের রঙিন ছবি অবহেলার অ্যালবামে রাখাই যে সরকারের অভ্যেস, তার পরিবর্তন চাই। এ চাওয়া ভিক্ষে নয়, এ শহরের স্বার্থে! আত্রেয়ীর জন্য কষ্ট হয়! একটা নির্মল জলধারার বুকে রোজ আছড়ে পড়ছে খাড়ির জঞ্জাল! সমস্ত পাপের শেষ ঠিকানা জোড়া ব্রিজ সংলগ্ন আত্রেয়ী-খাড়ির সঙ্গম। নদীকে শহরের বিষাক্ত আবর্জনায় বরণ করতে আমাদের লজ্জা নেই! বালুরঘাটবাসীর তাই তো প্রাপ্তির ভাঁড়ার শূন্য! নিজের ছাদের গাছে চন্দ্রমল্লিকা, পিটুনিয়াকে সুস্থ রাখাই এদের সংস্কৃতির ডেফিনেশন। ৫ জুন গাছে রাখি বেঁধে গিমিক, নয়তো প্লাস্টিক হটাও অভিযান। ব্যস, থমকে গেল পরিবেশকে বাঁচানোর রেভলিউশন! কারখানা ছাড়াও দূষণ হয়, হুগলি-গঙ্গার পাড় নয়, রিমেক এখন বালুরঘাটের খাড়িতে খাড়ি-সংস্কৃতি দীর্ঘজীবী হোক। শুধু শ্লোগান, তোমাদের মন নেই, চোখ নেই জেনো! তোমরা সত্যিই গান্ধারী মেনো!
চিঠি পাঠান সম্পূর্ণ নাম ও ঠিকানা উল্লেখ করে।
‘উত্তরের চিঠি’,
এ বি পি প্রাঃ লিঃ,
১৩৬/৮৯ চার্চ রোড,
শিলিগুড়ি ৭৩৪৪০১
Previous Story Uttarbanga First Page



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.