|
|
|
|
আমাদের চিঠি
|
বান্দা: হাজার বছরের ঐতিহ্য |
লোকচক্ষুর অন্তরালে পড়ে থাকা বান্দার দেউল ভারতীয় স্থাপত্যশিল্পের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন। এটি একটি রেখ দেউল। পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর শহর থেকে যে রাস্তাটি সোজা চলে গেছে চেলিয়ামা গ্রামের দিকে, সেই রাস্তার ডান দিকে পড়ে বান্দা গ্রাম। বাস স্টপে নেমে ১ কিলোমিটার হাঁটাপথে এই দেউল প্রাঙ্গণে পৌঁছনো যায়। প্রায় ৭০ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট প্রস্তর নির্মিত দেউলটি দিগন্ত বিস্তৃত পলাশ প্রান্তরে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে হাজার বছর ধরে। ২৫০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ১৫০ ফুট প্রস্থ বিশিষ্ট একটি বৃহৎ বেদির ওপর দাঁড়িয়ে আছে এই দেউলটি; যদিও সেই বেদিটির বেশির ভাগ অংশের পাথর পড়ে গেছে। দেউলটি উত্তরমুখী। সম্মুখে পাথরের নির্মিত বৃহৎ মণ্ডপ। অতীতে এটি অনেক বড় ছিল, বর্তমানে সামান্য অংশই টিকে আছে। দেউলটির প্রবেশ পথের উচ্চতা ৬ ফুট, প্রস্থে ৩ ফুট। প্রবেশ পথে চোখে পড়ে প্রস্তর খোদিত অসামান্য কারুকার্য। মনুষ্য কৌতুকী, লতাগুল্ম, বিবিধ বাদ্যযন্ত্র বাজানোর দৃশ্য অসামান্য ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তক্ষণশিল্পীরা। তবে সরকারি ভাবে মেরামত করতে গিয়ে সিমেন্টের আস্তরণে বেশির ভাগ অংশই ঢেকে ফেলেছেন এ যুগের অদক্ষ শিল্পীরা। সমগ্র দেউল জুড়েই রয়েছে বিবিধ কারুকার্য। দেউলটির উত্তর দিকের প্রবেশ পথের উপরের অংশের বেশ কিছু পাথর পড়ে গেছে। |
|
বান্দার ‘সংরক্ষিত’ দেউল। ছবি: সুভাষ রায় |
আনুমানিক নবম-দশম শতাব্দীতে নির্মিত এই দেউলটি জৈনদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। তবে বর্তমানে আর এই গ্রামে জৈনদের দেখা মেলে না। পুরুলিয়ার একাধিক গ্রামে তাঁরা আছেন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে; এখন তাঁদের পদবি মাজি, মণ্ডল, সরাক প্রভৃতি। দীর্ঘদিন এই গ্রামটি ছিল জনবসতিশূন্য। ১৯৫৭-য় তেলকুপি জলমগ্ন হলে সেখানকার মানুষজন এখানে এসে স্থায়ী ভাবে বসবাস আরম্ভ করেন। বর্তমানে এই দেউলটি সরকার কর্তৃক সংরক্ষিত। কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘেরা, সামনে সাইনবোর্ড। প্রবেশ পথে সাদামাটা লোহার গেট। সেই গেট খুলে অনায়াসেই ঢুকছেন স্থানীয় মানুষজন। মন্দির গাত্রে পাথর ঘষে যা-তা লিখে যাচ্ছে ছেলেমেয়েরা। দেউলের মাথায় গজিয়ে উঠেছে গাছ-গাছালি। সে সব নষ্ট করতে না পারলে অচিরেই তাদের শিকড় ফাটিয়ে দেবে দেউলের অভ্যন্তর। যেমন ঘটেছে পাড়া, তেলকুপি, ছড়রা প্রভৃতি গ্রামের দেউলগুলিতে।
বছর তিন আগে এখানে এক জন ব্যক্তিকে নিয়োগ করা হয়েছিল রক্ষণাবেক্ষণের কাজে। বর্তমানে কাউকে আর দেখা যায় না, অথচ সরকারি ভাবে উদ্যোগী হলে এটিকে অনায়াসে একটি পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত করা যেতে পারে। দেউলটির পাশেই বয়ে গেছে একটি ছোট্ট নদী স্থানীয় ভাষায় বান্দার জোড়। সেখানে অনায়াসে বোটিংয়ের ব্যবস্থা হতে পারে। দেউল থেকে ২০ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে রয়েছে একাধিক প্রত্নস্থল তথা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যপূর্ণ পিকনিক স্পট। মাত্র ৮ কিলোমিটার দূরত্বে প্রাচীন বন্দরনগরী তেলকুপি, ১৭ কিলোমিটার দূরত্বে জয়চণ্ডী পাহাড়, ২২-২৫ কিমি দূরত্বে কাশীপুর রাজবাড়ি, ২০ কিলোমিটারের মধ্যে আছে গড় পঞ্চকোট, পাঞ্চেত জলাধার আর ১ কিলোমিটার দূরে জেলার বর্ধিষ্ণু গ্রাম চেলিয়ামার সপ্তদশ শতাব্দীর টেরাকোটা মন্দির। এই সমস্ত কিছুকে কেন্দ্র করে বান্দার দেউল প্রাঙ্গণের বিস্তীর্ণ ফাঁকা স্থানে অনায়াসে একটি পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলা যেতে পারে। এতে স্থানীয় মানুষজন যেমন উপকৃত হবেন, তেমনি সংরক্ষিত হবে হাজার বৎসরের প্রাচীন এই ঐতিহ্য।
সুভাষ রায়। পুরুলিয়া
|
গ্রামীণ হাসপাতাল |
হাওড়ার আমতা। আনুমানিক লোকসংখ্যা সাড়ে চার লক্ষের কাছাকাছি। এদের সবার জন্য আমতা গ্রামীণ হাসপাতাল। নামেই হাসপাতাল। বরং ঢের ভাল ছিল আমতা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। গ্রামীণ হাসপাতালে সব কিছু থেকেও কিছুই নেই। এক্স-রে হয় না, হয় না রক্ত কফ পরীক্ষা। সিজার হয় না; লেবার রুমের এয়ারকন্ডিশন মেশিন অধিকাংশ দিনই খারাপ। সাপে কাটা রুগির প্রাথমিক চিকিৎসাটুকুও হয় না। যে কোনও রুগির সামান্যতম অবনতি হলেই যেতে হয় ২০ কিমি দূরে উলুবেড়িয়া বা ৪৫ কিমি দূরে হাওড়া হাসপাতালে। পালা করে এক জন ডাক্তার রাত্রি যাপন করেন। আসল গ্রামীণ হাসপাতাল আমরা কবে দেখতে পাব?
দীপঙ্কর মান্না। চাকপোতা,
আমতা, হাওড়া
|
চিঠি পাঠান সম্পূর্ণ নাম ও ঠিকানা দিয়ে।
আমাদের চিঠি, সম্পাদকীয় বিভাগ,
আনন্দবাজার পত্রিকা প্রাঃ লিঃ,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা ৭০০০০১ |
|
|
|
|
|
|