|
|
|
|
হোটেলে পাঁচতলা থেকে পড়ে মৃত্যু যুবকের, গ্রেফতার ৩ বন্ধু |
নিজস্ব সংবাদদাতা • বহরমপুর |
একটি হোটেলের পাঁচ তলার ঘর থেকে মাটিতে পড়ে এক যুবকের মৃত্যুর পরে তাঁকে খুনের অভিযোগ উঠেছে।
শনিবার রাত সওয়া ১১টা নাগাদ উৎপল বিশ্বাস (২৭) নামে ওই যুবকের দেহ উদ্ধার হয় বহরমপুরের বাস স্ট্যান্ডের কাছে একটি হোটেলের পিছন দিক থেকে। তাঁর বাড়ি নদিয়ার চাপড়ার বড় আন্দুলিয়ায়। রবিবার রাতে উৎপলের তিন বন্ধুকে পুলিশ গ্রেফতার
রেছে। তাঁদের নাম সুব্রত মুখোপাধ্যায়, মলয় সাহা এবং দেবাশিস অধিকারী।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানতে পেরেছে, এই তিন বন্ধুর সঙ্গে ওই দিন রাত পর্যন্ত হোটেলের ওই ঘরে ছিলেন উৎপল, সেখানে তাঁরা মদ্যপানও করেন। তারপরে উৎপলের দেহ পাওয়া যায় হোটেলের পিছন দিক থেকে। উৎপলের বাবা পৃথ্বীশ বিশ্বাসের অভিযোগ, “আমার ছেলেকে খুন করা হয়েছে।” ওই তিন বন্ধুর অবশ্য দাবি, পাঁচ তলার খোলা জানলায় ঠেসান দিয়ে প্যান্ট পরার সময়েই উৎপল টাল সামলাতে না পেরে নীচে পড়ে গিয়ে মারা গিয়েছেন। মুর্শিদাবাদের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দীপনারায়ণ গোস্বামী বলেন, “প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, ওই যুবক পাঁচ তলা থেকে পড়ে গিয়েই মারা গিয়েছেন। তবে তাঁর বাবা খুনের অভিযোগ করেছেন। তারপরে ওই যুবকের বন্ধুদের জিজ্ঞাসাবাদের সময় নানা অসংলগ্ন তথ্য পাওয়া গিয়েছে। তারপরেই তাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে।” তিনি বলেন, “তবে কী কারণে খুন করা হতে পারে, সে সম্পর্কে ওই যুবকের বাবা এখনও
কিছু জানাননি। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত
হওয়া যাবে।” |
|
বহরমপুরের হোটেলের সেই ঘর। ছবি: গৌতম প্রামাণিক |
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানতে পেরেছে, একটি ওষুধ নির্মাতা সংস্থার প্রতিনিধি উৎপল বহরমপুরের নতুনবাজার এলাকায় একটি মেসে থাকতেন। ওই মেসে থাকেন একই পেশার আরও বেশ কয়েকজন। অবিবাহিত উৎপলের সঙ্গে এক ঘরে থাকেন ধানবাদের বাসিন্দা সুব্রত। মলয় ও দেবাশিসেরও একই পেশা। তবে তাঁরা থাকেন শহরের খাগড়া অঞ্চলে। ওই দিন বিকেলে সেখান থেকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার দূরের ওই হোটেলে গিয়েছিলেন তাঁরা। হোটেলের ম্যানেজার পিনাকী দত্ত বলেন, “সুব্রত ও উৎপল মাঝে মধ্যে ঘর ভাড়া নিয়ে বন্ধু বান্ধব মিলে খাওয়া-দাওয়া করতেন। রাতে মেসে ফিরে যেতেন তাঁরা। সেই দিন বিকেলেও অন্য দিনের মতো সুব্রতর নামে পাঁচতলার ৪০৯ নম্বর ঘর ভাড়া দেওয়া হয়। সন্ধ্যায় উৎপলরা ৫-৭ জন মিলে খাওয়া-দাওয়া করেন। তাঁরা মদ্যপানও করেছিলেন।” পুলিশ জানতে পেরেছে, তাঁদের মধ্যে দু’জন সন্ধ্যা ৭টার মধ্যেই হোটেলে থেকে চলে যান। সুব্রত জানান, তাঁরা চার বন্ধু রাত সোয়া ১১টা পর্যন্ত ওই ঘরে বসে খাওয়া-দাওয়া ও গল্প-গুজব করেন। তার পর মেসে ফেরার জন্য তিন জন ঘর থেকে বেরোন। তিনি বলেন, “উৎপল বারমুডা পরে ছিল। সে জানালায় বসে প্যান্ট পরতে পরতে বলল, ‘তোরা নীচে যা আমি প্যান্ট পরে আসছি।’ আমরা নীচে নেমে কিছু ক্ষণ অপেক্ষা করার পরেও উৎপল না নামলে তার খোঁজে পাঁচতলার ওই ঘরে যাই। কিন্তু সেখানে তাকে দেখতে না পেয়ে সন্দেহ হয়। নীচে নেমে খোঁজ করি। দেখি পাঁচতলা থেকে সে মাটিতে পড়ে গিয়েছে।” সংজ্ঞাহীন অবস্থায় রিকশায় চাপিয়ে নিউ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা উৎপলকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। উৎপলের মাথার সামনে থেকে পিছন পর্যন্ত সিঁথি বরাবর ফাটল রয়েছে। সুব্রতবাবুর দাবি, “কেউ তাকে খুন করেনি, পাঁচতলা থেকে পড়ে মারা গিয়েছে সে।”
পৃথ্বীশবাবু বলেন, “আমার স্ত্রী রোগ শয্যায়। দুই ছেলের মধ্যে বড়টি ইঞ্জিনিয়ার। চাকরির কারণে সে রাজ্যের বাইরে। তাই মাকে দেখতে আসার জন্য শনিবার সকাল ৯টায় ছেলেকে ফোন করে বাড়ি যেতে বলেছিলাম। ছেলের সঙ্গে সেই আমার শেষ কথা।” |
|
|
|
|
|