|
|
|
|
উদ্ধার করল পুলিশ |
বকুনির জেরে দিল্লি থেকে পালিয়ে কলকাতায় |
চিরন্তন রায়চৌধুরী |
হাফ প্যান্ট আর লাল-সাদা ডোরাকাটা টি-শার্ট পরা একরত্তি ছেলেটিকে অত রাতে দ্বিতীয় হুগলি সেতুর কাছে একা একা ঘুরতে দেখে সন্দেহ হয়েছিল কতর্ব্যরত পুলিশকর্মীদের। হেস্টিংস থানায় নিয়ে গিয়ে তাই তার নাম-ঠিকানা জানতে চান তাঁরা। তখনই বেরিয়ে পড়ে নয়াদিল্লির বাড়ি ছেড়ে তার পালিয়ে আসার ঘটনা। শনিবার রাতে এই বালকের কথা শুনে তো থ’ তদন্তকারী অফিসারেরা।
নয়াদিল্লির একটি স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ওই পড়ুয়া পুলিশকে জানিয়েছে, সহপাঠীর খাতায় ‘খারাপ’ কিছু কথা লিখেছিল সে। তা জানতে পেরে বকাঝকা করেন শিক্ষক। খবর পাঠানো হয়েছিল তার বাড়িতেও। মা-বাবা’র বকুনির ভয়ে ছুটির পরে বাড়ি ফিরেই পোশাক বদলে ফের বেরিয়ে পড়ে সে। সোজা রেল স্টেশনে পৌঁছয় অভিষেক বর্মা নামের এগারো বছরের ওই বালক। চেপে বসে হাওড়াগামী একটি ট্রেনে।
পুলিশ জানায়, শনিবার সকালে কলকাতায় ট্রেন থেকে নেমে এ দিক-ও দিক ঘুরতে শুরু করে অভিষেক। পকেটে কানাকড়িও নেই। তাই কিছু কিনে খেতেও পারেনি। সারা দিন ঘোরাঘুরির পরে রাতে হুগলি সেতুর কাছ থেকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। দিন দু’য়েকের ট্রেন সফর, তার উপরে অভুক্ত শরীরে হেঁটে-হেঁটে শহর ঘুরে তখন রীতিমতো ক্লান্ত ওই স্কুলপড়ুয়া। হেস্টিংস থানার অফিসার রবীন্দ্রনাথ দাসের দেওয়া রুটি, তরকারি গোগ্রাসে খেয়েই ঘুমে ঢলে পড়ে সে। |
অভিষেক বর্মা। নিজস্ব চিত্র |
পুলিশ জানায়, ওই রাতেই তাকে তুলে দেওয়া হয়েছে অসহায় শিশুদের নিয়ে কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হাতে। প্রসঙ্গত, মাস খানেক আগে হরিয়ানা থেকে বছর ১৪-র এক স্কুলছাত্র বাড়ির বকুনির ভয়ে একই ভাবে ট্রেনে চড়ে এই শহরে চলে এসেছিল। পরে পুলিশ তাকে বাড়ি পৌঁছে দেয়।
কিন্তু নয়াদিল্লি স্টেশন থেকে একা একা ট্রেনে চাপতে ভয় করেনি অভিষেকের?
‘পুলিশকাকু’দের কাছে অভিষেক বলেছে, “একটুও যে ভয় করছিল না, তা ঠিক নয়। |
|
তবে বাবার বকুনি থেকে বাঁচতে তখন আর কিছু ভাবিনি।” নয়াদিল্লি স্টেশনে পৌঁছে সামনে যে ট্রেন দেখতে পায়, তাতেই চেপে বসেছিল সে। সেটি কোথায় যাবে তা-ও জানত না ওই স্কুলপড়ুয়া।
পুলিশের অনুমান, ফর্সা, গোলগাল চেহারার অভিষেককে দেখে সহযাত্রীরা হয়তো ভেবেছিলেন অন্য কোনও যাত্রীর সঙ্গে রয়েছে বালকটি। তাই আর সন্দেহ করেননি তাঁরা। একই কারণে ছেলেটির দিকে তেমন ভাবে নজর পড়েনি টিকিট পরীক্ষক বা অন্য রেলকর্মীদেরও। অভিষেক জানিয়েছে, ক্লাসের ওই সহপাঠীই তার খাতায় খারাপ কথা লিখতে বলে। তার কথা শুনে, অন্য কিছু না ভেবেই ওই কথাগুলি লিখে দেয় সে। এর পরেই তার হাতের লেখা মিলিয়ে শিক্ষক তাকে বকাঝকা করেন। স্কুল থেকে তাড়িয়ে দেওয়ারও ভয় দেখানো হয়। বাড়িতে থাকলে মা-বাবা বকতে পারেন, তা ভেবেই স্টেশনে পালায় সে।
হাওড়ায় নামার পরে দিনভর কী করছিল অভিষেক?
শহরটার নাম যে কলকাতা, সে কথা ট্রেনে জেনে নিয়েছিল সে। তবে, এখানকার কোনও কিছুই চিনত না। স্টেশনে নামার পরে পথচারীদের জিজ্ঞাসা করে সে হাওড়া সেতু পেরিয়ে আসে। পৌঁছে যায় ধর্মতলা চত্বরে। সেখান থেকে ফের হেঁটে ময়দান এলাকায়। দূর থেকে তখনই তার নজরে পড়েছিল দ্বিতীয় হুগলি সেতু। হাঁটতে শুরু করে সে দিকেই। তখনই তাকে দেখেন পুলিশকর্মীরা।
অভিষেক জানিয়েছে, নয়াদিল্লির সঙ্গমবিহার এলাকার একটি স্কুলে পড়ে সে। থাকে নেপসরাই থানার খানপুরে। তবে, বাড়ির ঠিকানা ঠিকঠাক করে বলতে পারেনি। জানাতে পারেনি তার বাবা, বেসরকারি সংস্থার কর্মী রামকুমার বর্মার মোবাইল ফোনের নম্বরও। নয়াদিল্লি পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে হেস্টিংস থানা। ঠিকানা পেলেই বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে ওই স্কুলপড়ুয়াকে। |
|
|
|
|
|