|
|
|
|
তৃণমূলের গোষ্ঠী সংঘর্ষ, অবরোধ ব্যবসায়ীদের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কেতুগ্রাম |
সিপিএম ছেড়ে পঞ্চায়েত উপ-প্রধানের তৃণমূলে যোগ দিতে চাওয়ার ঘটনার জেরে অশান্তি ছড়াল কেতুগ্রামের বেরুগ্রাম পঞ্চায়েতের মোড়গ্রামে। শনিবার দু’পক্ষের সংঘর্ষে কয়েক জন জখম হন। তাঁদের মধ্যে দু’জনকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এর জেরে রবিবার কেতুগ্রামের সীমান্তবর্তী এই এলাকায় ব্যবসা বন্ধ ও বাদশাহি সড়ক অবরোধ করে স্থানীয় ব্যবসায়ী সমিতি। কেতুগ্রাম, বীরভূমের লাভপুর ও মুর্শিদাবাদের বড়ঞা থানা থেকে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
কেতুগ্রামের বেরুগ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিএম উপপ্রধান উজ্জ্বল শেখের দাবি, শুক্রবার তিনি দলত্যাগ করে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। শনিবার দুপুরে তিনি ও তাঁর অনুগামীরা মোড়গ্রাম ও তার আশপাশের এলাকায় তৃণমূলের পতাকা ও দলনেত্রীর ছবি টাঙাচ্ছিলেন। তা দেখে তৃণমূলের পুরনো কয়েক জন কর্মী আপত্তি জানান। সেখান থেকে প্রথমে বচসা, তা থেকে হাতাহাতি ও সংঘর্ষ বেধে যায়। অভিযোগ, শনিবার রাতে বোমাবাজিও হয়।
উজ্জ্বল শেখের দাবি, “আমি তৃণমূলে যোগ দিয়েছি। কেতুগ্রাম ১ ব্লক সভাপতির উপস্থিতিতে আমার হাতে দলের পতাকা ও দলনেত্রীর ছবি দেওয়া হয়।” তাঁর অভিযোগ, “রবিবার কেতুগ্রামের বামুনডিহিতে পঞ্চায়েত মন্ত্রী আসবেন। দলের নির্দেশে রাস্তায় পতাকা টাঙানোর কাজ করতে গেলে নিজেদের তৃণমূল কর্মী পরিচয় দিয়ে চড়াও হয়। তাদের হামলায় আমাদের এক কর্মী জখম হয়ে কান্দি মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি।”
সিপিএমের ভাগীরথী-অজয় জোনাল কমিটির সদস্য ফারুক মির্জা ও তপন কাজিরও দাবি, “শুক্রবার উজ্জ্বল আমাদের দল ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। তাঁকে দলে নেওয়া নিয়ে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে।” জেলা তৃণমূলের অন্যতম সম্পাদক আব্দুল মান্নানের অবশ্য অভিযোগ, “ওই উপপ্রধানের জন্য আমাদের প্রচুর কর্মী গ্রাম ছেড়েছেন। অনেকে জেল খেটেছেন। রাজ্যে আমরা ক্ষমতায় আসতেই তিনি তৃণমূলে যোগ দিতে চাইছেন। দলের পুরনো কর্মী-সমর্থকেরা তার প্রতিবাদ করেছেন। সে জন্যই ওঁরা আমাদের কর্মীকে মারধর করছে।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, শনিবার রাতে ওই উপ-প্রধানের মদতে কিছু দুষ্কৃতীরা তাঁদের সমর্থকদের বাড়ি গিয়ে হুমকি দিয়েছেন।
তৃণমূলের কেতুগ্রাম ১ ব্লক কোর কমিটির নেতা জাহির শেখ বলেন, “আমরা দলীয় নেতৃত্বকে সাফ জানিয়েছি, উপপ্রধানকে এখন দলে নেওয়া হলে কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে।” দলের কেতুগ্রাম ১ ব্লক রত্নাকর দে ও জেলা সাধারণ সম্পাদক মণ্ডল আজিজুল বলেন, “উজ্জ্বল আমাদের কাছে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। তার বেশি কিছু নয়। এ নিয়েই নতুন ও পুরনো কর্মীদের মনোমালিন্য হয়েছে।”
এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ মোড়গ্রাম বাজারের ব্যবসায়ীরা। প্রায় ২০টি গ্রামের বাসিন্দারা নিয়মিত এই বাজারে আসেন। রয়েছে ১৬০টি স্থায়ী দোকান। এ ছাড়াও রয়েছে সব্জি ব্যবসা। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ছোট-বড়, ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক- যে কোনও কারণে গোলমাল বাধলেই বাজারে তার প্রভাব পড়ে। ব্যবসা মার খায়। ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক মিরাজউদ্দিন শেখ রবিবার বলেন, “বীরভূমের হাটকালুয়া ও বর্ধমানের মোড়গ্রাম এলাকা জুড়ে রয়েছে এই বাজার। নিত্য অশান্তিতে ব্যবসায় লোকসান হচ্ছে। প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে এ দিন ব্যবসা বন্ধ ও পথ অবরোধ করা হয়েছে।”
ঘণ্টা দু’য়েক পরে পুলিশ গিয়ে অবরোধ তোলে। ব্যবসায়ীরা জানান, নিরাপত্তার দাবিতে তিনটি থানার পুলিশকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। পুলিশ এ ব্যাপারে তাঁদের আশ্বাস দিয়েছেন। |
|
|
|
|
|