মন বদলের পালা বিনোদন
সাবেকিয়ানার বেড়া
ভেঙে উচ্ছলতার হইচই
ক্রিম দেওয়া কফি? একদম না। চাই, কালো চা। বাসটা বেরিয়ে যাচ্ছে নাকি? পাঁইপাঁই দৌড়নোর আগে এক মুহূর্তও ভাবা নেই। গান গাইতে গাইতে আপন মনে রাস্তা দিয়ে হাঁটা? ও তো রোজকার অভ্যেস! শপিং করতে ভাল লাগে? ১৫ মিনিটের বেশি নয়।
শাওনী চৌধুরী। ২৫ বছর বয়স। গোলাপি রংয়ের জামা পরার কথা ভাবতেই পারে না। নেভি ব্লু, বটল গ্রিন, ডার্ক ব্রাউন ছাড়া নৈব নৈব চ। একটু পুরুষালি রং হয়ে যাচ্ছে না? “কিচ্ছু করার নেই, আমি এ রকমই”, বলে ওঠে মেয়েটি।
৩০ বছরের সুরঞ্জনা ঘোষ। বাড়িতে কলের মিস্ত্রি থেকে শুরু করে সামনের রাস্তায় কর্পোরেশনের কর্মীদের সঙ্গে যাবতীয় বাগবিতণ্ডার দায়িত্ব সুরঞ্জনার, কেউ অসুস্থ হলে ডাক্তার-বদ্যি আনার দায়িত্ব সুরঞ্জনার, আত্মীয়স্বজন-বন্ধুদের বিপদআপদে ছুটে যাওয়ার দায়িত্ব সুরঞ্জনার। জিনস-টি শার্টে সবচেয়ে স্বচ্ছন্দ বোধ করেন, কারণ তাতে কাজের সুবিধা। চুল ছোট করে কাটা। কারণ, ছোট চুল চটপট শুকিয়ে যায়।
মেয়েলি মেয়ের ধারণা কি তবে পাল্টাচ্ছে? খোলা হাওয়ার দুনিয়ায় কি অন্য রকম মেয়ের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে? এই ভাবনারই প্রতিফলন দেখা যাবে সানন্দা টিভির আসন্ন ধারাবাহিক ‘অল্প অল্প প্রেমের গল্প’য়। এই ধারাবাহিকের মুখ্য চরিত্র মিকি। হইহই করে হাসে, সাজপোশাক নিয়ে মাতামাতি নেই। গাড়ির টায়ার থেকে আলোর বাল্ব, সারাতে মিকির জুড়ি নেই। পুরুষের সঙ্গে সমানে সমানে টক্কর নেওয়াতেও নয়।
এ রকম মেয়েকে নিয়ে আজকের ছেলেরা কী ভাবছে? ৩১ বছরের শমীক ঘোষের উত্তর, ‘‘ন্যাকামো একেবারেই পছন্দ করি না। ‘ওগো, হ্যাঁগো, কেমন আছ গো’-র বদলে আমি দৌড়ে বেড়ানো মেয়েই পছন্দ করব। আমার এক বন্ধু ছিল ভারী শান্তশিষ্ট। তার বান্ধবী তেমনই ডানপিটে। ক্রিকেট খেলত, বাইক চড়ত। তাই নিয়ে ওদের মধ্যেও কোনও সমস্যা ছিল না। ‘রব নে বনা দি জোড়ি’তে যেমন ছিল অনুষ্কা বাইক চালাচ্ছে, সুরিন্দর সাহানি পিছনে বসে! এ রকম আমার বেশ ভালই লাগে।”
২৩ বছরের অনির্বাণ সাহাও স্পষ্ট বলে দিল, মেয়েদের মধ্যে কোন দিকটা তার সবচেয়ে অপছন্দের। “ন্যাকামি আর অতিরিক্ত মনোযোগের দাবি।” তাহলে পছন্দের মেয়েটি কেমন হবে? “বিরাট সুন্দরী না হলেও চলে। নিজেকে ‘ক্যারি’ করতে জানলেই হল। ব্যক্তিত্ব থাকা খুব দরকার।” শমীক আর অনির্বাণ, দু’জনেই মনে করছে, বউ-এর পুরনো স্টিরিওটাইপের বদলে স্ত্রী যদি ‘পার্টনার’ হয়ে ওঠে, সেটা অনেক বেশি স্বাগত।
‘সমাপ্তি’র মৃন্ময়ী বা ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’-এর অঞ্জলি যেমন বদলে গিয়েছিল আর বদলে যাওয়ার পরেই মান্যতা পেয়েছিল, মিকি কিন্তু তা নয়। বাঁধাধরা নিয়ম মেনে চলার চাইতে নিজের নিয়ম নিজে তৈরি করাতেই তার আনন্দ। ‘ছেলেদের মতো’ মেয়ে নয়, মিকি চায় নিজের পছন্দমতো মেয়ে হয়ে উঠতে। আজকের অনেক ‘মিকি’ই তাই চায়। এই বদলটা কি যুগের চাহিদাতেই এসেছে? কিছুটা তো বটেই, বললেন সাহিত্যিক বাণী বসু। “ছেলেমেয়েদের বন্ধুত্ব আগের চেয়ে বেড়েছে, মেলামেশা বেড়েছে। কিন্তু পরিবর্তনটা কতটা বহিরঙ্গে আর কতটা অন্তরঙ্গে, সেটা বলার সময় বোধহয় এখন আসেনি। মেয়েরা ঘরে-বাইরে আগের চেয়ে অনেক বেশি দায়িত্ব নিচ্ছে এখন। আবার নিচ্ছে বলেই তাদের প্রতি দাবিদাওয়াও ক্রমশ বেড়ে চলেছে।” ঠিকই। সুরঞ্জনারা বলে ওঠে, ‘‘কাজের সময় ছেলেরা ডানপিটে মেয়ে খুব পছন্দ করে। কিন্তু অন্য সময় প্রেমিকার মধ্যে তারাই কিন্তু সাবেকি আদল খুঁজতে চায়।”
কিন্তু সবচেয়ে বেশি যেটা আছে, সেটা মেয়েদের নিজেদের ইচ্ছেখুশি। নিজের মতো করে বাঁচা, নিজের মতো করে মেয়ে হয়ে ওঠা। তিলোত্তমা মজুমদারের কথায়, “একটি মেয়ে কতটা মেয়ে, সেটা তার সঙ্গে মিশলে তবে বোঝা যায়! বাহ্যিক কার্যকলাপের সঙ্গে নারীত্বকে এক করে দেখাটাই তো ভুল!
সময় বদলের সঙ্গে এখন একটা পেশাদারি মনোভাব এসেছে। ছেলে-মেয়েদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে পেশাদারি জীবনের ছন্দের সঙ্গে মানিয়ে চলতে পারার ক্ষমতাটা অনেক বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। সেখানে সাবেকি ‘মেয়েলি’ মেয়ের চেয়ে তথাকথিত অন্য রকম মেয়ের গ্রহণীয়তা বাড়ছে।”
বাস্তবের শাওনী-সুরঞ্জনা বা গল্পের মিকি এরা সকলেই নিজের নারীসত্তা নিয়ে ভারী খুশি। মেয়েলিপনার গণ্ডিতে আটকে না থাকা, নিজস্ব উচ্ছলতায় ভাসতে চাওয়ার মধ্যেই তাদের নারীত্বের উদ্যাপন! মিকিরা কি পারবে নিজের মতো বাঁচতে?
First Page



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.