|
|
|
|
মনোনয়ন দাখিল ইয়েচুরির |
বসু-স্মরণে মিলে গেল সরকার-বিরোধী শিবির |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে পরিষদীয় রাজনীতিতে বিরোধীদের গুরুত্ব দেওয়ার জন্য নতুন করে অঙ্গীকার করল সরকার পক্ষ। সরকারি উদ্যোগে প্রয়াত সিপিএম নেতার জন্মদিন পালনের জন্য সরকারকে অকুণ্ঠ ‘ধন্যবাদ’ জানালেন বিরোধী দলনেতা। আর বিধানসভার অনুষ্ঠানে প্রয়াত নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েই মনোনয়নপত্র জমা দিলেন রাজ্যসভায় এ রাজ্য থেকে বামফ্রন্টের একমাত্র প্রার্থী সীতারাম ইয়েচুরি।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে জ্যোতি বসুর প্রথম জন্মদিন পালন শুক্রবার স্মরণীয় হয়ে থাকল শাসক ও বিরোধী পক্ষের মেলবন্ধনের দৃষ্টান্ত হিসাবেই। মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীদের জন্মদিন উদযাপনে ‘আমরা-ওরা’র ব্যবধান রাখবে না নতুন সরকার। সেই মতোই এ দিন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমন্ত্রণে বিধানসভায় বসুর তৈলচিত্রে মাল্যদান ও স্মরণ অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন প্রাক্তন ও বর্তমান বিধায়কেরা। ছিলেন সিপিএমের সংসদীয় দলনেতা ও দলের পলিটব্যুরো সদস্য ইয়েচুরিও। মহাকরণে বসুর ছবিতে মালা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা নিজে। |
 |
অন্য বিমান। ইয়েচুরির সঙ্গে সৌহার্দ্য বিনিময় নতুন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
পাশে প্রাক্তন স্পিকার হাসিম আব্দুল হালিম। দেবাশিস রায়ের তোলা ছবি। |
প্রয়াত বসুকে ‘জনপ্রিয় রাষ্ট্রনেতা’ বলে উল্লেখ করেই স্পিকার বিমানবাবু বলেন, “দলকে কী ভাবে রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক রাখতে হবে, খুব ভাল করে জানতেন তিনি। কখনও অটলবিহারী বাজপেয়ী, কখনও বিশ্বনাথপ্রতাপ
সিংহের হাত ধরে দলের গুরুত্ব বাড়ানোর চেষ্টা করে গিয়েছেন তিনি।” স্পিকারের এই মন্তব্য সিপিএমের রাজনীতির প্রতি প্রচ্ছন্ন কটাক্ষ বলে মনে করা হলেও শাসক শিবিরের ব্যাখ্যা, জ্যোতিবাবুর রাজনৈতিক দক্ষতার কথাই বোঝাতে চেয়েছেন স্পিকার।
ইয়েচুরি অবশ্য ওই অনুষ্ঠানে বক্তা ছিলেন না। বিধানসভার সচিব যাদবলাল চক্রবর্তীর কাছে রাজ্যসভার প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন জমা দেওয়ার পরে তিনি বলেন, “জ্যোতিবাবুর জন্মদিনে এ রাজ্যের প্রার্থীর মনোনয়ন জমা দেওয়ার আলাদা তাৎপর্য আছে। তা ছাড়া, এ বারের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আমার দায়িত্ব অনেক বেড়ে গেল!”
বাম জমানাতেই গত বছর জ্যোতিবাবুর মৃত্যুর পরে প্রথম জন্মদিনে ‘বসু স্মারক বক্তৃতা’র আয়োজন করেছিলেন তৎকালীন স্পিকার হাসিম আব্দুল হালিম। এ বার ‘সংক্ষিপ্ত সময়ে’ জন্মদিনেই ওই বক্তৃতার আয়োজন করা না-গেলেও সেই রেওয়াজ বন্ধ করতে চায় না সরকার। হালিম এ দিনের অনুষ্ঠানে বলেন, “বসু বলতেন, গণতন্ত্রে বিতর্ক হবে। বিরোধীদের মত শুনতে হবে। বিরোধীদের বক্তব্যে গঠনমূলক কিছু থাকলে সঙ্গে সঙ্গে তা গ্রহণ করতেন।” এখন বিধানসভায় বিতর্কের মান পড়ে গিয়েছে বলে আক্ষেপ করে বিধায়কদের জন্য ‘আচরণবিধি’ চালু করার জন্য নতুন স্পিকারকে ‘পরামর্শ’ দেন প্রাক্তন স্পিকার। ডেপুটি স্পিকার সোনালি অবশ্য তার পরেই প্রাক্তন স্পিকারের উদ্দেশে বলেন, “দলীয় স্তরে বা বিধানসভার রেকর্ড দেখলেই আপনি জানতে পারবেন, এখন বিরোধীদের বেশি সুযোগ দিয়েই আমরা সভা চালানোর চেষ্টা করছি। আপনি হয়তো
বলবেন, তুমি তো হল্লা ব্রিগেডের প্রধান ছিলে! কিন্তু সে ছিলাম কোনও এক সময়! এখন বিরোধীদের সম্মান দিচ্ছি আমরা, সরকার পক্ষ চেঁচামেচি করলে থামানোর চেষ্টা করছি।” বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, “বহু বছর মুখ্যমন্ত্রী থেকেও জ্যোতিবাবু যে ভাবে ক্ষমতা ছেড়ে গিয়েছিলেন, আমাদের দেশে তার দৃষ্টান্ত নেই।”
ইন্দিরা ভবনে বসুর প্রাক্তন বাসভবনে ঘরোয়া স্মৃতিচারণের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়, ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক অশোক ঘোষ প্রমুখ। ইন্দিরা ভবনকে সংগ্রহশালায় পরিণত করার দাবি ফের উঠেছে ওই অনুষ্ঠানে।
বসু-স্মরণে যোগ দিয়ে মনোনয়ন জমা দেওয়ার জন্যই দিল্লি থেকে এ দিন সকালে কলকাতা পৌঁছে বিধানসভায় আসেন ইয়েচুরি। তাঁর সঙ্গে ছিলেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রবীন দেব। সীতারামকে প্রশ্ন করা হয়, পশ্চিমবঙ্গ থেকে তিনি সাংসদ অথচ এ রাজ্যে তাঁকে বেশি দেখা যায় না বলে অভিযোগ ওঠে কেন? ইয়েচুরি বলেন, “রাজ্যসভার সাংসদদের কাজ সেই রাজ্যে থাকা নয়। সেই রাজ্যের কথা সংসদে বলার জন্যই তাঁকে পাঠানো হয়। আমি দিল্লিতে সেটাই করার চেষ্টা করি!” |
|
|
 |
|
|