|
|
|
|
|
|
|
পুস্তক পরিচয় ৩... |
|
নিছক ছাত্রপাঠ্য নহে |
বইপোকা |
‘একদিন চণ্ডীমণ্ডপে আমাদের আখড়া বসত, আলাপ জমত পাড়াপড়শিদের জুটিয়ে, আলোচনার বিষয় ছিল গ্রামের সীমার মধ্যেই বদ্ধ।’ রবীন্দ্রনাথের ‘কালান্তর’ পড়িতেছিলাম। পূর্বে বহু বার পড়িয়াছি প্রবন্ধটি, কিন্তু এই বারের পাঠ-অভিজ্ঞতাটি নূতন। কারণ এই বার কোনও রবীন্দ্র-রচনাবলি বা পৃথক কালান্তর গ্রন্থ হইতে নহে, প্রবন্ধটি পড়িতেছিলাম একটি অভিনব গ্রন্থ হইতে। গ্রন্থের নাম রবীন্দ্রনাথের ‘কালান্তর’ সটীক পাঠ (তেহাই, ৪০.০০)। শুধু প্রবন্ধটি লইয়াই একটি পুস্তক, পদে পদে তাহাতে পদকণ্টক, অর্থাৎ পাদটীকা। কিন্তু সে কণ্টকে চিত্তানুশীলনের অ-পূর্ব খোরাক। অ-পূর্ব, কারণ যে ‘গ্রাম্য’ পরিবেশে আমাদিগের বঙ্গভাষা ও সাহিত্যবিদ্যার চিত্তানুশীলন অদ্যাবধি চলিয়া থাকে, তাহার কালান্তর ঘটাইতে চাহিয়াছেন এই সটীক পাঠের তরুণ তুর্কি মল্লিনাথ তপোমন ঘোষ। সাকুল্যে পঞ্চান্ন পৃষ্ঠার প্রবন্ধে পঞ্চান্নটি টীকা করিয়াছেন তিনি। টীকার বিষয় ও প্রসঙ্গ আপন মনের মাধুরী নহে, নেহাতই নৈর্ব্যক্তিক পাঠের অনুষঙ্গ। তাহাতে ঐতিহাসিক-রাজনৈতিক-সামাজিক প্রসঙ্গ আসিয়াছে, তুলনা আসিয়াছে অন্যান্য রবীন্দ্র-রচনার। কোথাও পরীক্ষা-বৈতরণীর হাল ধরিবার প্রয়াস নাই, সর্বাপেক্ষা সুখের কথা এইটিই। উপরন্তু পরিশিষ্টে অভিধানসম্মত নয় এমন আর্ষপ্রযুক্ত শব্দগুলির বিবরণ। বহু পূর্বকালে এই প্রকারে যথার্থ ছাত্র-বন্ধু নির্মিত হইত। চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের চণ্ডীমঙ্গল বোধিনী-র কথা মনে পড়িতেছে। সেই ধারা এ কালের তরুণ গবেষকও পরিশ্রমে বাঁচাইয়া রাখিতে চাহিতেছেন, ইহা বিশেষ ভাবে লক্ষ্য করিবার মতো। |
|
|
|
|
|