|
|
|
|
|
|
দক্ষিন কলকাতা
অটো-মর্জি |
যেমন খুশি চলি |
স্বপন দাস |
সন্ধে সাতটা। গড়িয়াহাট মোড়। বাড়িফেরতা মানুষের অটো-চালকের কাছে আকুল আবেদন, “দাদা, বেহালা যাবেন?” উত্তর, “রাসবিহারী, নিউ আলিপুর যাবে।” আর একটি অটোর দিকে দৌড়ান রঞ্জিতা, পারমিতা, রাই-রা। “দাদা, বেহালা?” উত্তর, “তারাতলা পর্যন্ত।” অবশেষে যদিও বা শিকে ছিঁড়ল, চালক বললেন, “কুড়ি টাকা লাগবে”।
একই চিত্র রাসবিহারী মোড়ে। বেহালার অটোর জন্য বিশাল লাইন। একটিও অটো নেই। যেগুলি আসছে সেগুলিও তারাতলা, নিউ আলিপুর বা চেতলা পর্যন্ত। অথচ প্রত্যেকটি অটোর গায়েই লেখা ‘বেহালা ট্রামডিপো’ অথবা ‘চৌরাস্তা’ পর্যন্ত যাবে।
|
|
ছবি: পিন্টু মণ্ডল |
একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরতা বিজনানী ভট্টাচার্য রোজ অটোতেই বেহালা থেকে রাসবিহারী যাতায়াত করেন। তিনি বলেন, “রোজ ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকি, কোনও অটোই যায় না।
ট্রামডিপো লেখা থাকলেও যাবে চেতলা, নয় নিউ আলিপুর। বড় জোর তারাতলা।
বৃষ্টি পড়লে ভাড়া বেড়ে যাবে।
১১ টাকা ছুঁতে পারে ২৫ টাকাও।
প্রতিবাদ করলে শুনতে হবে কটূক্তি।” হয়েছিল। রাস্তার খানাখন্দে জমে থাকা জলও জমে বরফ হয়ে গিয়েছে। সেখানে দাঁড়িয়ে কলকাতার প্যাচপেচে গরমের কথা অনেক চেষ্টাতেও কল্পনা করা যায় না। ‘খারদুং লা’ পেরিয়ে বহু ক্ষণ ধরে চলেছি তো চলেইছি। মাঝে মাঝে বদলে যাচ্ছে দু’পাশের পাহাড়ের চেহারাটা। এই দেখলাম বরফে ঢাকা পাহাড়চূড়া। বরফের চাঁই নেমে এসেছে রাস্তাতেও। আবার তার পরেই কিছুটা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে শুকনো-রুক্ষ পাথুরে পাহাড়। এই বৈচিত্র্যের জন্যই লাদাখ অনন্য। নুবরা যাওয়ার পথে বেশ কিছুটা জায়গা জুড়ে পড়ল বালিয়াড়ি (স্যান্ড-ডিউন্স)। সেখানে আবার রয়েছে জোড়া কুঁজওয়ালা উট। আকারে কিছুটা ছোট। উচ্চতাতেও। সওয়ার হওয়া গেল তার পিঠেও। নুবরা ভ্যালি পৌঁছতে পৌঁছতে প্রায় শেষ-বিকেল। এ বার অপেক্ষা করছে তাঁবু-বাড়িতে রাত্রিযাপনের অভিজ্ঞতা। আখরোট আর কপিখেতের মাঝে ছোট ছোট সবুজ তাঁবু। চার দিকে পর্বতশ্রেণীর অতন্দ্র প্রহরা। খুবই অতিথিবৎসল তাঁবুমালিক। জানালেন, তাঁর স্ত্রী নিজের হাতেই সব্জি ফলান খেতে। নৈশভোজে তাই মিলল সুস্বাদু তিব্বতি শাক আর অতি উপাদেয় স্যুপ।
সফর শেষ। আবার লেহ্ শহর। ফেরার আগে হাতে আর মাত্র একটা দিন। তাই একটু ঘুরে নেওয়া কাছেপিঠের বাজার। ছোট-বড় দোকানে বা রাস্তার ধারেই শীতপোশাক, গয়না আর শুকনো ফল যেমন- আখরোট, কাঠবাদাম, খেজুরের পসরা সাজিয়ে বসেছে পাহাড়ি মেয়েরা। বাড়ির অন্যান্যদের জন্যও তো নিয়ে যেতে হবে লাদাখ-ভ্রমণের টুকরো স্মৃতি। তাই টুকটাক কেনাকাটা সেরে ফের ব্যাগ গুছোনো। সুটকেস বোঝাই, সেই সঙ্গে মনও। এ বার কলকাতায় ফেরার পালা।
|
|
|
|
|
|